নাইক্ষ্যংছড়ির কুখ্যাত আনাইয়্যা ডাকাতের লাশ উদ্ধার, এলাকাবাসীর আনন্দমিছিল

বাইশারী প্রতিনিধি:

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীর গহীন পাহাড়ে আনোয়ার বাহিনীর প্রধান আনাইয়্যা ও তার দুই সহযোগীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

রবিবার(৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়নের আলীক্ষ্যং মৌজার দিল মোহাম্মদের রাবার বাগান থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ সময় ঘটনাস্থল থেকে তিনটি একনলা বন্দুক, একটি শটগান, ৮ রাউন্ড কার্তুজ, ৪টি মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহতরা হলো, বাইশারী ইউনিয়নের লম্বাবিল ঘোন রপাড়া এলাকার মৃত আব্দুস সোবহানের ছেলে আনাইয়া বাহিনীর প্রধান আনোয়ার হোসেন ওরফে আনাইয়্যা ডাকাত (২৮), রামুর ঈদগড় ইউনিয়নের কোনারপাড়া এলাকার ছৈয়দ হোসেনের ছেলে পারভেজ প্রকাশ বাপ্পি ডাকাত (৩০) ও রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল এলাকার মৃত নুরুল হাকিমের ছেলে হামিদ হোসেন (২৫) প্রকাশ হামিদ্যা ডাকাত।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, রবিবার ভোর ৫টার দিকে বাইশারী ইউনিয়নের আলীক্ষ্যং মৌজাস্থ দিল মোহাম্মদের বাগানে গোলাগুলির শব্দ শুনে এলাকাবাসী ঘটনাটি পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পরিদর্শক) একেএম হাবিবুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স সহ ঘটনাস্থলে গেলে অন্যান্য ডাকাত সদস্যরা পালিয়ে যায়। পুলিশ তাৎক্ষণিক বিভিন্ন রাবার বাগানে তল্লাশী চালিয়ে দিল মোহাম্মদের রাবার বাগানের স্টাফ কোয়ার্টারের পাশে গুলিবিদ্ধ তিন ডাকাতের লাশ দেখতে পায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ডাকাতদের ব্যবহৃত তিনটি দেশীয় তৈরী একনলা বন্দুক, একটি শর্টগান (এলজি), ৮টি কার্তুজ, ৪টি মোবাইল সেট সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম আলামত হিসেবে উদ্ধার করে।

বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পরিদর্শক) একেএম হাবিবুল ইসলাম জানান, ভোরে স্থানীয়রা মোবাইল ফোনে বাইশারীর গহীন পাহাড়ে গুলাগুলির শব্দ শুনে তাকে জানালে তিনি তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পৌছান এবং ডাকাত দলের সদস্যরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ায় জীবিত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে ঘটনাস্থল থেকে ডাকাত দলের বন্দুক যুদ্ধে আনাইয়্যা বাহিনীর প্রধান আনাইয়্যা সহ তার দুই সহযোগীর গুলিবিদ্ধ লাশ, অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয় ।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মো. আলমগীর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিৎ করে বলেন, ডাকাত দলের সদস্যদের মাঝে হয়ত টাকার ভাগভাটোয়ারা নিয়ে মনোমালিন্য হওয়ায় নিজেদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থল থেকে ৪টি দেশীয় তৈরী বন্দুক, ৮টি কার্তুজ, ৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। লাশ সুরত হাল শেষে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার পূর্বক ময়না তদন্তের জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বাকী ডাকাতদের ধরতে পুলিশ-বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং উক্ত ঘটনাটি গভীর ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আলম স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, আনোয়ার বাহিনীর প্রধান আনাইয়্যা সহ তার দুই সহযোগী নিহত হওয়ায় তার ইউনিয়নের ত্রিশ হাজার মানুষের মাঝে ফিরেছে স্বস্তি। পাশাপাশি হাজার হাজার রাবার বাগানের শ্রমিকেরা এখন নির্বিঘ্নে বাগানের কষ আহরণ করার জন্য যেতে পারবে। তাই তিনিও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন।

উল্লেখ্য, আনোয়ার বাহিনীর প্রধান আনাইয়্যা সহ তার দুই সহযোগী ডাকাত দলের বন্দুক যুদ্ধে মারা যাওয়ার ঘটনায় এলাকায় চলছে আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ ও বাগান শ্রমিকদের মাঝে ফিরেছে স্বস্তি। ডাকাত আনাইয়্যা দীর্ঘ ৭ বছর যাবৎ বাইশারী-ঈদগড়-ঈদগাঁও সড়ক, বাইশারী, ঈদগড়, গর্জনীয়ার বিভিন্ন রাবার বাগানে চাঁদাবাজী, ডাকাতি, খুন-খারাবি, নারী ধর্ষণ সহ নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। তার বাহিনীর অত্যাচারে তিন ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে রামু, নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজার সহ অন্যান্য থানায় খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজী, ডাকাতি সহ অর্ধডজন মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। এছাড়া গত ২১ সেপ্টেম্বর আনাইয়্যা বাহিনীর আরেক সহযোগী আনোয়ার বলি বাইশারী ইউনিয়নের ব্রীকফিল্ড নামক স্থানে পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। ঐ সময় পুলিশ তার কাছ থেকে দুইটি দেশীয় তৈরী বন্দুক, ৬ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন