নাইক্ষ্যংছড়িতে পান চাষে স্বাবলম্বী হাজারো মানুষ

বাইশারী প্রতিনিধি:

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির প্রতিটি বাজারের পান যাচ্ছে দেশ পেরিয়ে এখন মধ্যপ্রাচ্যে। সাপ্তাহিক হাট থেকে ব্যবসায়ীরা এসব পান সংগ্রহ করে থাকে। উপজেলার ৫ ইউনিয়নের পাহাড়ের ঢালুতে স্থানীয় বাঙালি ও উপজাতিরা এসব পানের চাষ করে থাকেন।

প্রতিটি ইউনিয়নে ৫শ’ থেকে ৮শ’ পর্যন্ত ছোট বড় মিলে পানের বরজ থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন।পান ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বাইশারী ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আবুল কালাম।

এসব পানের বরজ থেকে প্রতি সপ্তাহে হাটের দিন চাষীরা পান বিক্রয়ের জন্য বাজারে নিয়ে আসেন। বর্তমানে পান চাষ করে এলাকায় হাজারো লোকজন স্বাবলম্বী হয়েছেন বলেও তিনি জানান।

বর্তমানে উপজেলায় দুই ধরনের পান চাষ হচ্ছে। দেশি জাতের ও মিষ্টি জাতের পান। মিষ্টি পান বিগত এক যুগ ধরে উপজেলার বাইশারী, দৌছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর, সোনাইছড়ি, ও ঘুমধুম ইউনিয়নের সমতল ও পাহাড়ী ঢালুতে প্রচুর পরিমাণ চাষ হচ্ছে বলে জানালেন পান চাষী বটন চৌধুরী, মো. এনামুল হক, নুরুল আজিম, জালাল আহম্মদ, আব্দুল জলিল, মো. হেলাল, সোনা মিয়া, বাবুল, থোয়াইছা মং মার্মা, চাইহ্লাঅং চাক, ও ওসমানসহ আরও অনেকে।

উপজাতীয় পান চাষী হ্লামংছাইন মার্মা সাথে কথা বলে জানা যায়, আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবং অতিবৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া থেকে রক্ষা পেলে এবার পান চাষ করে অধিক লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া এখনও পর্যন্ত বাজারে পানের দাম অনেক চড়া রয়েছে। প্রতি বিরা (স্থানীয়ভাবে পান গণনার হিসাব) পান দুইশ’ থেকে তিনশ’ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। তবে এবারে চাষ ভাল হওয়ায় পান চাষীরা প্রচুর লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পান ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বটন চৌধুরী বলেন, উপজেলায় যতগুলো পানের বরজ রয়েছে সবই নিজেদের উদ্যোগে করা। সরকারিভাবে কোন ধরনের সহযোগিতা তারা পাচ্ছে না।

কৃষি কর্মকর্তারা ও পান নিয়ে তদারকি করে না। পান চাষীরা যদি সরকারিভাবে উদ্যোগ ও সহায়তা পায় তাহলে আরও ভাল ফলনের সম্ভাবনার কথা জানান।

অধিকাংশ পান চাষীরা স্থানীয় বাজারের আব্দুল করিম বান্টুর কিটনাশক দোকান থেকে বিভিন্ন ধরনের সার, ভিটামিন কিটনাশক তার পরামর্শ নিয়ে পান চাষে ঝুঁকছেন। এতে তারা পান চাষ করে মোটামুটি ভাবে লাভবান হচ্ছেন।

এছাড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ বাইশারী থেকে প্রধান সড়কে পৌছাতে বিভিন্ন জায়গায় সরকারি টোল টেক্সের পাশাপাশি আরও অনেক ট্যাক্স দিতে হয়। তাই বহিরাগত ব্যবসায়ীরা বাজারে আসতে চায় না।

সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে পান চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে দেশে প্রচুর পরিমাণ পানের চাহিদা রয়েছে। পাশাপাশি এসব পান দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে ও রফতানি হচ্ছে। সরকার পাচ্ছে পান থেকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব।

তাছাড়া প্রতি বছর শুকনো মৌসুমে পানের আগা/চারা বিক্রি করে চাষীরা লাখ লাখ টাকা আয় করে থাকেন। তবে অধিকাংশ ব্যবসায়ীর অভিযোগ সরকারি টোল ও ট্যাক্স দেওয়ার পর ও ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের হয়রানীর শিকার হতে হয়। ফলে বহিরাগত ব্যবসায়ীরা এলাকায় আসতে চায় না।

তারা আরও বলেন, উপজেলার হাট বাজার থেকে মাল কেনার পর সরকারের রাজস্ব আদায় করে নেওয়ার পর ও পথে পথে অন্যান্য ইউনিয়ন পরিষদ ও তাদের নিকট টোল ট্যাক্স আদায় করে।

ফলে ব্যবসায়ীরা হয়রানীর শিকার বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: নাইক্ষ্যংছড়িতে পান চাষে স্বাবলম্বী হাজারো মানুষ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন