নাইক্ষ্যংছড়িতে পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে

kaki

আবুল বাশার নয়ন:
পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে পাহাড় কণ্যা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি নয়নাভিরাম উপবন পর্যটন ও গয়াল প্রজনন খামারে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে পর্যটকদের আগমন। বিগত সময়ের তুলনায় গত এক সপ্তাহে কয়েক হাজার পর্যটক বেশি এসেছে বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চকরিয়া, উখিয়া, ঈদগাও ও রামুসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা নাইক্ষ্যংছড়ির দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে আসেন তারা। কিন্তু পর্যটন এলাকায় পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পর্যটকদের।

বাংলাদেশের এক মাত্র গয়াল প্রজনন কেন্দ্র, বৈদেশিক রপ্তানিকৃত চা পাতার বাগান, রাবার বাগান ও সম্ভাবনাময়ী সীমান্তবর্তী মায়ানমার বাংলাদেশ মৈত্রী বানিজ্য বন্দর সমৃদ্ধ এ পর্যটন নগরীতে প্রয়াজনীয় উদ্যোগ নেয়া হলে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন সচেতন মহল।

কিন্তু বিভিন্ন সময় সরকারের সংশ্লিষ্টরা নাইক্ষ্যংছড়ির পর্যটন গড়ে তোলার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে আজও তার কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। উন্নয়নের অভাবে বর্তমানে উপবন পর্যটন লেকের ঝুলন্ত সেতুর কাঠগুলো ভেঙ্গে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাইল আহামদের মনে করেন, সরকারের পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভাগের সদিচ্ছা আর কর্মপ্রচেষ্টার সমন্বয় হলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে। এতে এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে বলে তিনি মনে করেন।

জানা গেছে, ১৯৯৬ সনে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উদ্দ্যোগে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের পশ্চিমে মহাজনঘোনা এলাকা (লেকেরপাড়) পাহাড়ের চূড়ায় কৃত্রিম বাঁধ দিয়ে হ্রদ গড়ে তোলা হয়। এ হ্রদটিকে ঘিরে গড়ে ওঠেছে ‘উপবন পর্যটন কেন্দ্র’। উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এ পর্যটন কেন্দ্রে নামমাত্র প্রবেশ মূল্যে ভ্রমনের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া এ লেকে শৌখিন মৎস্য শিকারিরা বড়শি দিয়ে মাছ ধরে থাকেন। উপজেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় বছরজুড়ে থাকে মৎস্য শিকারের এ আয়োজন। তবে মাছ শিকারের জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে টিকেট সংগ্রহ করতে হয়।

পর্যটন এলাকা সরেজমিনে গিয়ে ঈদগাও থেকে বেড়াতে আসা এক মাদরাসা শিক্ষকের সাথে কথা হলে  তিনি জানান, ‘দু‘পাহাড়ে মাঝখানে কৃত্রিম হ্রদের উপর ঝুলন্ত সেতু আধুনিকায়ন করা হলে আরো ব্যাপক পর্যটক সমাগম হবে।’ অপরদিকে উপবন পর্যটন লেকে টিকিট কাউন্টারে কর্মরত অনিক মার্মা জানান, ‘বিগত সময়ের তুলনায় গত এক সপ্তাহ পর্যটকের আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে ভবিষ্যতে উপবন পর্যটন এলাকা উন্নয়ন হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।’

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবু শাফায়াৎ মুহম্মদ শাহেদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারের প্রচেষ্টায় উপবন পর্যটনসহ শিশু পার্কের সার্বিক উন্নয়ন ও সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য নতুন করে কাজ করে যাচ্ছেন। পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপবন পর্যটন এলাকা একটি এক্সক্লুসিভ পর্যটন জোন হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন এগিয়ে যাচ্ছে। এ ধারাবাহিকতায় উপবন পর্যটন লেক থেকে দ্বিতীয় হ্রদে যাতায়তের সড়ক উন্নয়ন, লেকের চার পার্শে বিদ্যুতায়ন, পর্যাপ্ত শৌচাগার, নব নির্মিত মঞ্চ সিড়ির পার্শ্ববর্তী সামনে ফ্লোর নির্মাণ এবং ভবিষ্যতে পর্যটন এলাকায় রেস্টুরেন্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।’ পর্যটন কেন্দ্রগুলো পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী উন্নত করা হয়েছে এবং এতে দিন-দিন পর্যটক বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে তিনি জানান।

যেভাবে যেতে হবে নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন পর্যটন কেন্দ্রে: যে কোন এলাকা থেকে বাস যোগে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কের রামু বাইপাস এলাকায় নামতে হবে। এরপর সিএনজি বা যে কোন ছোট যানবাহন নিয়ে ১৩ কিলোমিটার দুরত্বে নাইক্ষ্যংছড়ি স্টেশনে এসে পায়ে হেটে বা রিক্সা নিয়ে একটু দক্ষিন দিকে গেলে দেখা যাবে নয়নাভিরাম উপবন লেক।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন