দেয়াল চাপায় পৃষ্ট হল স্কুল ছাত্রী ভক্তি রানীর স্বপ্ন

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

মা আমি এখন বিয়ে করব না। বড় আপাকে বিয়ে দেওয়ার সময় আমাদের বসত ভিটা বিক্রি করতে হয়েছে। সেই থেকে মাথা গোজাবার ঠাঁই নাই আমাদের। অন্যের ঘরের বারান্দায় থাকি। আর তুমি বলছ বিয়ে করতে। সারাদিন তুমি আর বাবা কষ্ট করছ আমাদের খাওয়ানো আর লেখাপড়া করানো জন্য। আর আমার বুঝি কিছু করার নাই। আমি লেখা পড়া শেষ করে চাকরি করব। তুমি, বাবা এবং ছোট ভাইসহ একসাথে থাকারমত একটা ঘর করব। এর পর দেখা যাবে বিয়ে করব কি করবনা।

কিন্তু সেই স্বপ্ন পূর্ণ হলনা কক্সবাজার সদর উপজেলা চৌফলদণ্ডী সাগর মণি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্রী ভক্তি রাণী দে’র (১৫)।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে চৌফলদণ্ডী পশ্চিম হিন্দু পাড়ায় পাহাড় ধ্বসে ঘরের দেওয়াল পড়ে মারা যায় ভক্তি রানী দে। মেয়ের বলা এসব কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নিহত ভক্তি রাণী দে’র মা কুঞ্চুবালা দে।

ভক্তি রাণী দে চৌফলদণ্ডীর পশ্চিম হিন্দু পাড়ার নুনা রাম দে’র মেয়ে। তারা ২ বোন ১ ভাই। বড় বোন প্রিয়াংকা দে বিয়ে হয়েছে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে। তার বিয়ের খচর যোগাতে গিয়ে তাদের বসত ভিটা বিক্রি করে দিতে হয়েছিল। আর ছোট ভাই রাজ কিশোর একই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। সেই থেকে তারা পাশ^বর্তী এক বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছে। দরিদ্র দিনমুজর পিতা নুনা রামের সংসারের খচর আর সন্তানদের লেখা-পড়া চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছিল। তাই বাধ্য হয়ে মা কুঞ্জুবালা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে লেইস ফিতা বিক্রি করে।

পরিবারের এ চিত্র নিহত ভক্তি রানী দে কে খুবই কষ্ট দিত। তাই সে জীবনটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিল। সে রাত-দিন লেখা পড়া করত। বিয়ের অনেক প্রস্তাব আসলেও ফিরিয়ে দিয়েছে। তার উদ্দেশ্য ছিল লেখা পড়া শেষে চাকরি করে নিজেদের একটি ঘর তৈরি করে পরিবারের মুখে হাঁসি ফুটাবে।

সাগর মণি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম জনান, গভীর রাত পর্যন্ত লেখা পড়া শেষে ঘুমাতে গেলে পাহাড় ধ্বসে মাঠির দেয়ার ভেঙ্গে পড়ায় ভক্তি রানী দে’র শরীরের বেশিরভাগই মাঠির নিচে চাপা পড়ে। আর ছটপট করতে করতে ১০ মিনিটের মধ্যে মারা যায়। সৌভাগ্যক্রমে অল্পের জন্য তার ছোট ভাই রাজ কিশোর বেঁচে যায়। তাদের নিজের বসতঘর না থাকায় অন্যের ঘরের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছিল। আর ওখানেই এই ঘটনা ঘটে।

প্রধান শিক্ষক আরও জানান, ভক্তি রানী দে ছিল ভিন্ন ধরনের এক ছাত্রী। সে লেখা পড়া ছাড়া আর কিছু বুঝতোনা। তার পরিবার দরিদ্র ছিল জানতাম কিন্তু এত দরিদ্র তা জানতাম না। বিদ্যালয়ে পক্ষ থেকে ৩ হাজার টাকা সহযোগিতা করা হয়েছে। আসলে এ সহযোগিতা তাদের তেমন কোন কাজে আসবে না। তাদের এখন প্রয়োজন মাথা গোজার ঠাঁই।

একদিকে চলে গেছে সন্তান অন্যদিকে মাথা গোজার ঠাঁই নাই। সব মিলে তারা খুবই অসহায়। এ অবস্থায় সকলের প্রত্যাশা প্রশাসন যদি তাদের সহযোগিতায় একটু এগিয়ে আসত।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন