দূর্গম থানছিতে ফুটব্রীজ নির্মানে পিআইও’র নয়-ছয়

P1050180 copy

থানছি প্রতিনিধি:

বান্দরবানের থানচিতে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সাড়ে ৩ কোটি টাকা মূল্যের পিআইও ব্রীজ নামে পরিচিত ১১টি ফুটব্রীজ নির্মানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।  গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট  মন্ত্রনালয়ের পরিপত্রে প্রায় ৩৯মি. দৈর্ঘ, ১৬ মি. প্রস্থ ও উচ্চতা ২০ মি. পর্যন্ত সেতু কালভার্ট নির্মাণ করার নিয়ম বেঁধে দিয়েছিল । কিন্তু মন্ত্রনালয়ের নিয়মনীতি লক্ষ্য না করে সেতু কালভার্ট নির্মান ও প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ করে চলছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সরকারি নিতিমালা লংঙ্গন করে চলতি অর্থ বছরে বান্দরবানে থানছি উপজেলায়  ১১টি ব্রীজের নির্মাণ কাজ করছেন।

জানা যায়, ২০১৬ সালে  উপজেলার ৪ ইউনিয়নে ২ ধাপে ১১টি ফুটব্রীজ নির্মানের যথাক্রমে মংম্যা কারবারী পাড়া, জিনিংঅং কারবারী পাড়া, পর্দ্দামুখ ঝিড়ি, টিএন্ডটি পাড়া, রুমবেত পাড়া, মরিয়ম পাড়া, কানাজিও পাড়া, ছোট মধক শুভাষ পাড়া, পর্দ্দামুখ পাড়া, বলিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ, নারিকেল পাড়ায় ফুট ব্রীজ নির্মানের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয় ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ছোট ছোট সেতু কালভার্ট নির্মানে (১২ কিঃ মিঃ পর্যন্ত ) আওতায় নির্মিতব্য এইসব সেতু কালভার্ট গুলো কাজের বিনিময় খাদ্য কর্মসূচী এবং এমপ্লয়মেন্ট জেনারেল ফর দ্যা পাওয়ারেন্ট (ইজিপিপি) শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় নির্মিত মাটি রাস্তার গ্যাপে সেতু-কালভার্ট নির্মাণ করে পানি নিস্কাশন ও জলাবদ্ধতা দূর করা। এ সব প্রকল্পের দ্ধারা পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার স্থানীয় হাট, বাজার, গ্রো সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন পরিষদের সাথে কাজের বিনিময় খাদ্য কর্মসূচীর আওতায় নির্মিত রাস্তা সমূহে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে কৃষিপন্যের উপকরণ সহজভাবে পরিবহন যোগ্য ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদানসহ অভ্যন্তরীন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করা।

অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো উন্নয়নে যে সকল স্থানে অনির্মিত সেতু-কালভার্ট রয়েছে তাতে  নির্মাণের মাধ্যমে পার্বত্য জনপদে দরিদ্র দূরীকরণ ও এলাকার বসবাসরত জনগোষ্ঠিদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সুস্পষ্ট নীতিমালা ও পরিপত্র রয়েছে। অথচ সে সব নিতিমালাকে তোয়াক্কা না করে স্থান নির্ধারনের সময়ের ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মতামত না নিয়ে সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ে বান্দরবান জেলা সদরের একটি বিলাস বহুল  রেষ্টুরেন্টে বসিয়ে স্থানের নাম তালিকায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের প্রেরণ করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করেই নয়- ছয় করা হয়েছে এ সব সেতু কালভার্টের জন্য বরাদ্ধকৃত অর্থ ।

স্থানীয়রা প্রতিবেদককে জানান, নারিকেল পাড়া থেকে থানছি সদর ইউনিয়ন পরিষদ ও বাজার পর্যন্ত চলাচলের রাস্তায় উপর ডুকলুক্ষ্যং ঝিড়িতে নির্মানের জন্য পাড়াবাসী ও এলাকায় লোকজন দাবী অনুযায়ী স্থান তালিকায় থাকলে ও বাস্তবায়নের সময় মড়া ঝিড়িতে মন গড়া সেতু নির্মাণ করা ফলে সংশ্লিষ্টদের উপর ক্ষোভ অসন্তোস বিরাজ করছে । প্রশাসন সরকারি নীতিমালা  লংঙ্গন করে বিশেষ সুবিধা গ্রহনের মাধ্যমে সেতুটি ওই রকম একটা স্থানে দিয়েছে। উপজেলা অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে, যেখানে এ ধরনের সেতু কালভার্ট প্রয়োজন। অথচ কর্তৃপক্ষ সেদিকে কোন প্রকার সু-নজর  না দিয়ে এই প্রকল্প নিয়ে নয়-ছয় শুরু করেছে ।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন,  নানা অজুহাতে প্রসঙ্গ তুলে পরিবর্তনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপর দোষ চাপালেন।

জানতে চাইলে থানছি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা বলেন, প্রকল্পের ষ্ট্রাকচার ও স্থান নির্ধারনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের সংশ্লিষ্টতা রাখা হয়নি। প্রকল্পের বাস্তবায়নের উপজেলা পরিষদ কোন সম্পৃক্ত নেই। এটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার ( পিআইও) অধীনে।

তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বাররা বিভিন্ন সময় উপজেলা মাসিক সভায় অভিযোগ করে বলেন, ফুট ব্রীজ গুলো সে সব স্থানে দেয়া হয়েছে যার কোন যৌক্তিকতা নেই। জনস্বার্থে ও জনবহুল এলাকায় ব্রীজ গুলো স্থাপনের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ, নীতিমালা ও পরিপত্র থাকলেও তা এখানে উপেক্ষা করা হয়েছে।

 উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলতি অর্থ বছরে ১১টি সেতু নির্মানের জন্য উপজেলা প্রশাসন অনুমোদন করা হয়েছে । কিছু কাজ সমাপ্ত, বাকি কাজ গুলি ইতিমধ্যে সমাপ্ত হবে। তবে স্থান বিরোধপূর্ণ  প্রকল্পটি খতিয়ে দেখে জনস্বার্থে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন