দীঘিনালার দুর্গম এলাকায় খাবার পানির অভাব

Dighinaala picture 14-02-2017 copy

দীঘিনালা প্রতিনিধি:

কোথাও পানি নেই। খাবার পানিও এক থেকে দেড় কিলোমিটার দুর থেকে আনতে হয়। কারণ পাশের ছড়া, ঝরনাগুলোও শুকিয়ে গেছে। গ্রামের সকলেই পানির কষ্ট ভোগ করছে। সারারাত ঝরনার কুয়ায় পানি জমা হওয়ার পর ভোরে যে আগে যেতে পারে সেই পানি পায়। বাকিরা ঘন্টার পর ঘন্টা পানির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। কথা গুলো জানালেন, সীমানা পাড়া গ্রামের রেমেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

জানা যায়, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার দুর্গম এলাকা গুলোতে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নেই। এসব গ্রামের লোকজন এখনো ছড়া, ঝর্ণা এবং কুয়ার পানির উপর নির্ভর। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করার সুবিধা থাকলেও, শীত মৌসুমে ছড়া, ঝর্ণা কুয়াগুলো শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এসব গ্রামে পানির সমস্যা দেখা দেয়।

এখানকার লোকজন ঝর্ণা, ছড়া এবং কুয়ার পানি পান করতে করতে এখন পরিষ্কার পানিকেই তারা পান করার উপযোগ্য পানি মনে করে। আর যুগ যুগ ধরে এসব পানি পান করে আসছে। উপজেলার সীমানা পাড়া, মাইয়াপো পাড়া, বুদ্ধমা পাড়া সহ বেশ কয়েক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার কোথাও নলকূপ নেই। নেই নিরাপদ পানির বিকল্প অন্যকোন ব্যবস্থা। এসব এলাকার সকলেই নদী, ছড়া, ঝিরি এবং কুয়ার পানি পান করা সহ সকল কাজে ব্যবহার করছে। এ গ্রামের অধিকাংশ লোকজন নিরাপদ পানি কি জানে না। নদী, ছড়া, ঝিরি, কুয়ার পরিষ্কার পানিকেই নিরাপদ পানি হিসেবে জানে। আর এসব পানি পান করার কারণে কলেরা এবং ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এসব এলাকার লোকজন।

এব্যাপারে সীমানা পাড়া গ্রামের মতিবালা ত্রিপুরা(৪৫) জানান, ছড়া ঝর্ণা গুলো শুকিয়ে গেছে। দেড়-দুই কিলোমিটার পথ যাওয়ার পর পরিষ্কার পানি পাওয়া যায় না।

সীমানাপাড়া গ্রামের খমিতা ত্রিপুরা(৫৫) জানান, ছড়া ঝিরি কুয়ার পানি পান করেই আমি বড় হয়েছি। এখনো পান করছি। খাওয়া দাওয়া হতে শুরু করে সকল কাজই এ পানি ব্যবহার করি। তিনি আরও জানান, এখন শীতকাল তাই ছড়া, ঝর্না এবং কুয়ার পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে পানির জন্য অনেক দুর যেতে হয়।

নয়মাইল এলাকার হিরু ত্রিপুরা(৩৩)জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে এ গ্রামের সকলেই ছড়া, ঝিরি, কুয়ার পানি পান করে আসছে। এসবের পানি পান করেই এ এলাকার সবাই অভ্যস্ত। তাই এসব ছড়ার পানি পান করার ফলে পানি বাহিত অনেক রোগ হয়। এসব এলাকার নিরাপদ পানি ব্যবহারের জন্য সরকারী ভাবে উদ্যোগ নেয়া দরকার।

এব্যাপারে দীঘিনালা উপজেলা দুর্গম এলাকাগুলোতে নিরাপদ পানির সুব্যবস্থা না থাকার কথা স্বীকার করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো.জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানান, সীমানা পাড়া, বুদ্ধমাপাড়া, মাইয়াপো পাড়া সহ পাহাড়ি এলাকাগুলোতে আমরা নলকূপ বসাতে চেষ্টা করেছি। নলকূপ বসানোর জন্য কিছু বোরিং করার পর পর পাথর পাওয়া যায়, যার ফলে ভালো  পানির স্তর পাওয়া যায় না। পাথর থাকার কারণে এসব গ্রামের কোথাও নলকূপ বসানো সম্ভব হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন