দিল্লিতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ ‘জঙ্গি’ আটক

 

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

ভারতে দিল্লি পুলিশ বলছে, শামিউর রহমান ওরফে সুমন হক নামে এক ব্রিটিশ-বাংলাদেশীকে তারা আল কায়দা জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার করেছে।

লন্ডনের একটি স্বচ্ছল পরিবারের এই যুবককে জেরা করে তারা জেনেছে, সে আগে সিরিয়াতে আল নূসরা ফ্রন্টের হয়ে লড়েছে এবং ২০১৪তে জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য সে বাংলাদেশেও গ্রেফতার হয়েছিল।

জামিন পেয়ে ভারতে পালিয়ে আসার পর শামিউর রহমান ভারতে রোহিঙ্গাদের জঙ্গি রিক্রুট হিসেবে নিয়োগ করার চেষ্টা চালাচ্ছিল বলেও দিল্লি পুলিশ দাবি করেছে।

২৭ বছর বয়সী শামিউর রহমানকে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল রবিবার সন্ধ্যায় আটক করে রাজধানীর পূর্বপ্রান্তে শক্করপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে।

পুলিশ বলছে, তার কাছ থেকে মেলে একটি কার্তুজসহ ৯ মিলিমিটার পিস্তল, ল্যাপটপ, বাংলাদেশী সিমকার্ড-ওলা মোবাইল ফোন আর বেশ কয়েক হাজার মার্কিন ডলার আর ভারত ও বাংলাদেশের টাকা।

টানা চব্বিশ ঘণ্টা ধরে ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর দিল্লি পুলিশ জানায়, সে একজন আল কায়দা জঙ্গি এবং ভারতে নতুন রিক্রুট নিয়োগ করা আর জঙ্গি ঘাঁটি তৈরি করার লক্ষ্য নিয়েই সে এদেশে এসেছিল।

ডেপুটি কমিশনার (স্পেশাল সেল) প্রমোদ কুশওয়াহা জানান, “প্রথমে তার কাছ থেকে বিহারের কিষেণগঞ্জের একটি ভোটার কার্ড মেলে যাতে তার নাম লেখা ছিল সুমন হক। কিন্তু পরে আমরা জানতে পারি তার আসল নাম শামিউর রহমান – ইংল্যান্ডে জন্মানো সে একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক।”

“আল নূসরা ফ্রন্টের হয়ে সে সিরিয়াতে যুদ্ধ করেছে, আর ২০১৪ সালে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে জঙ্গি কার্যকলাপ চালানোর অভিযোগে দু’জন সঙ্গীসহ সে গ্রেফতার হয়। এ বছরের এপ্রিলে জামিন পাওয়ার পর তাকে ভারত পাঠানো হয় – এদেশে মিজোরাম, মণিপুরের মতো রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম যুবকদের নিয়ে জঙ্গি ঘাঁটি তৈরি করে তাদের মিয়ানমারে লড়াই করতে পাঠানোই ছিল তার ম্যান্ডেট।”

শমিউর রহমানকে জেরা করে দিল্লি পুলিশ বলছে, লন্ডনে তার পরিবারের অনেকেই ব্যাংকিং খাতে উঁচু পদে কর্মরত। তবে সে নিজে কলেজের গণ্ডি পেরোয়নি।

পুলিশ জানায়, র‍্যাশ ড্রাইভিংয়ের জন্য ব্রিটেনে জেলে যেতে হয়েছিল তাকে, সেখানেই জনৈক আল কায়দা জঙ্গি তাকে ‘র‍্যাডিকালাইজ’ করে।

পরে আল কায়দায় যোগ দিয়ে সে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয়, সিরিয়াতে প্রেসিডেন্ট আসাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যুদ্ধ করে এবং এরপর তাকে পাঠানো হয় ভারতীয় উপমহাদেশে নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে, দিল্লি পুলিশের বক্তব্য।

দিল্লি পুলিশের কর্মকর্তারা আরও জানাচ্ছেন, ধৃত শমিউর রহমান বাংলাদেশে যখন প্রথম গ্রেফতার হয়, তার আগেই সে ডজন-খানেকেরও বেশি লোককে জঙ্গিবাদের পথে টেনে এনেছিল বলে দাবি করেছে।

“তবে সেটা কতটা সত্যি এখনই বলা মুশকিল। তবে এই ব্যক্তির যা প্রোফাইল, নিজে তিন মাস সব রকম অস্ত্র চালনা ও বিস্ফোরক ব্যবহারের তালিম নিয়েছে, সিরিয়াতে গিয়ে যুদ্ধ করেছে এবং বাংলাদেশ-ভারতেও জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে তাতে আমরা তাকে বড় ‘ক্যাচ’ হিসেবেই মনে করছি”, বলছিলেন ডেপুটি কমিশনার প্রমোদ কুশওয়াহা।

গত কয়েক মাস ভারতে থাকাকালীন শামিউর রহমান পশ্চিমবঙ্গে ও বাংলাদেশেও তার কন্টাক্টদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছিল বলেও দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে।

তার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে দিল্লিতে ব্রিটেন ও বাংলাদেশের হাই কমিশনের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করছেন।

সূত্র: বিবিসি

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন