টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোটি টাকা লুটের ঘটনায় তোলপাড়

লুট

টেকনাফ প্রতিনিধি :
টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চীনা নাগরিকের টাকা লুটের ঘটনায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে তোলপাড় চলছে। এনিয়ে যেকোন মুহুর্তে বড় ধরণের সংঘর্ষের আশংকা দেখা দিয়েছে।

ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গারা টাকা লুটের ঘটনায় ক্যাম্পের চেয়ারম্যান ডাঃ দুদু মিয়া, সেক্রেটারী আমির হোসেন, ইয়াহিয়া ও আবুল ফয়েজ লুলু এই ৪ জনকে দায়ী করেছে।

এদিকে টাকা বিতরনে সহযোগিতার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করা হলেও লুটপাটে জড়িত কাউকে এখনও গ্রেফতার করেনি পুলিশ। তবে পুলিশ জানিয়েছে মামলার তদন্ত চলছে, সুনির্দিষ্ট তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িতদের আটকের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

অপরদিকে কিছু রোহিঙ্গা প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপকে ঘায়েল করার জন্য বিভিন্ন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা লুন্ঠিত টাকা উদ্ধার এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছে।

রোহিঙ্গারা জানান, ঈদের আগে ৪ জুলাই অসহায় রোহিঙ্গাদের আর্থিক সহায়তা দিতে চীনের ২ জন নারী টেকনাফের গোদারবিল মাদ্রাসার পরিচালক মৌঃ শফি উল্লাহসহ টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে (স্থানীয় ভাষায় রোহিঙ্গা টাল) আসেন। তাঁরা প্রথমে সি ব্লকের ৪৫ নং কক্ষের বাসিন্দা আবুল বশরের বাসায় গিয়ে কিছুক্ষণ অবস্থান করে দুই গ্রুপ হয়ে সি ব্লক থেকে প্রত্যেক পরিবারকে ১০ হাজার করে টাকা বিতরণ শুরু করেন।

প্রথম গ্রুপে ১ জন চীনা নারী ও মৌঃ শফিউল্লাহ এবং ২য় গ্রুপে ১ জন চীনা নারী ও ইয়াহিয়া। প্রত্যেক বান্ডিলে ছিল ১০ হাজার করে বাংলাদেশী টাকা। প্রত্যেকটা এক হাজারের নোট। টাকা বিতরণ করা শুরুর সামান্য পরে ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান ডাঃ দুদু মিয়া, সেক্রেটারী আমির হোসেন বাধা দিলে তাৎক্ষণিক তাদেরকে ১২টি বান্ডিল দেয়া হয়। উভয় গ্রুপ ৩০ থেকে ৩৫টি পরিবারে টাকা বিতরণ করার পর শত শত রোহিঙ্গা নারী পুরুষ তাদেরকে ঘিরে ফেলে টাকা লুটপাট করার চেষ্টা চালায়। এতে বন্ধ হয়ে যায় টাকা বিতরণ।

এক পর্যায়ে একটি গ্রুপ নিরুপায় হয়ে বি ব্লকের মসজিদে আশ্রয় নিলে রোহিঙ্গারা মসজিদের দরজা ভেঙ্গে ফেলে। অপর গ্রুপ আশ্রয় নেয় সি ব্লকের ৪৫ নং কক্ষের বাসিন্দা আবুল বশরের বাসায়। কোটি টাকা লুটপাটের রহস্যজনক এ ঘটনা নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প জুড়ে তোড়পাড় এবং উত্তেজনা চলছে।

উল্লেখ্য, এঘটনায় ৫ জন চীনা এবং ২ জন বাংলাদেশী নাগরিককে আটক ও নগদ টাকা, ডলার চীনা মুদ্রা ক্রেডিট কার্ড পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছিল।

টেকনাফ গোদারবিল আনাস বিন মালিক মাদ্রাসার পরিচালক মাওঃ মোঃ শফিউল্লাহ ও চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কক্সবাজার দক্ষিণ রুমালিয়ার ছড়ার আবু তাহেরের পুত্র মোঃ জামিল তাহেরকে ৫ জুলাই মঙ্গলবার সকালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। টেকনাফ থানার এসআই মাসুদ মুন্সি বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলাটি দায়ের করেন।

তবে চীনা নাগরিকদের ছেড়ে দেয়া হয়। টেকনাফ মডেল থানার ওসি আব্দুল মজিদ জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে। ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

মৌঃ ইয়াহিয়া জানান, ঈদের আগে ক্যাম্পের অসহায় পরিবার গুলো কিছু সাহায্য পাবে এ কারনে মৌ শফি উল্লাহ’র মাধ্যমে টাকা বিতরনের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। কিন্তু কিছু অর্থলোভী রোহিঙ্গার কারনে তা ভেস্তে গেছে। তবে তিনি টাকা ভর্তি একটি ব্যাগ আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ আলমের হাতে জমা রেখেছেন বলে জানান।

ব্লক মাঝি আব্দুল করিম জানান, ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, সাধারন সম্পাদ, মৌ ইয়াহিয়া ও আবুল ফয়েজ লুলু মিলে তাদের সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য আনা টাকা লুট করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গতঃ টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে (স্থানীয় ভাষায় রোহিঙ্গা টাল) ২ হাজার ৯২টি পরিবার বসবাস করছে। প্রত্যেক পরিবারের জন্য ১০ হাজার করে টাকা হিসাবে মোট টাকার পরিমাণ ২ কোটি ৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। তম্মধ্যে যৎসামান্য বিতরণ করা হলেও অবশিষ্ট টাকা লুটপাট হয়ে গিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন