টাকার বিনিময়ে প্রকল্প চেয়ারম্যানের নাম প্রস্তাবের অভিযোগ

fec-image

নিউজ ডেস্ক:

খাগড়াছড়ির ৯ উপজেলার ৮১ বাঙালি গুচ্ছগ্রামে প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগে টাকার বিনিময়ে নাম প্রস্তাবের অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতারা লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে প্রকল্প চেয়ারম্যানের নাম প্রস্তাব করছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত রয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ইতোমধ্যে প্রকল্প চেয়ারম্যানের নাম প্রস্তাব নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। নিজেদের নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তি বা সুবিধা গ্রহণকারীদের নাম প্রস্তাব নিয়ে এ দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলার তথ্য বাতায়নের তথ্যমতে, ৯ উপজেলার ৮১ গুচ্ছগ্রামে (বাঙালি) ২৬ হাজার ২শ’ ২০ পরিবার কার্ডের আওতায় রয়েছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে খাগড়াছড়িতে পুনর্বাসনকৃত পরিবার নিয়ে গুচ্ছগ্রাম। প্রতি মাসে তাদের কার্ড প্রতি চাল ও গম দিয়ে আসছে সরকার। যা বিতরণের জন্য প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়।

নীতিমালা অনুসারে গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা, সংশ্লিষ্ট গুচ্ছ গ্রামের জনপ্রতিনিধিদের অগ্রাধিকার দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা অনুসরণ না করে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা টাকার বিনিময়ে চেয়ারম্যানের জন্য উচ্চ পর্যায়ে নাম প্রস্তাব দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

পানছড়ির ১২ গুচ্ছ গ্রামে প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার কাছে দুইটি তালিকা জমা দিয়েছে। যার অধিকাংশ নেতাকর্মীদের স্বজন ও টাকার বিনিময়ে নাম প্রস্তাবকারী। একই অবস্থা মহালছড়ি, দীঘিনালা, মাটিরাঙা, মানিকছড়িসহ সবকটি গুচ্ছগ্রামে। গুচ্ছগ্রামের আকারভেদে তিন থেকে আট লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের বিরুদ্ধে।

পানছড়ির একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করা শর্তে গণমাধ্যমকে জানান, প্রকল্প চেয়ারম্যানের নাম প্রস্তাবের জন্য ছোট গুচ্ছগ্রা ম প্রতি আড়াই লাখ থেকে তিন লাখ টাকা এবং বড় গুলোতে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা করে লেনদেন হচ্ছে। সভাপতি বাহার মিয়া, সাধারণ সম্পাদক জয়নাথ দেবসহ প্রভাবশালী নেতারা এমপি’র নাম ভাঙ্গিয়ে এই টাকা নিচ্ছেন বলেও তারা জানায়।

এ বিষয়ে পানছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাথ দেব জানান, উপজেলা সভাপতি বাহার মিয়া নিজের আত্মীয় স্বজন ও কিছু মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নাম প্রস্তাব করছে। ত্যাগীরা বাদ পড়ায় আমরা আরেকটি তালিকা দিয়েছি।

পানছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহার মিয়া জানান, জয়নাথ দেব উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতাদের নিয়ে টাকার বিনিময়ে প্রকল্প চেয়ারম্যানের নাম প্রস্তাব করেছে। আমি বিষয়টি এমপিকে জানানোর পর তিনি আমাকে আরেকটি তালিকা দিতে বললে আমি ১২ জনের নাম প্রস্তাব করি। তাদের মধ্যে কয়েকজন আমার আত্মীয় থাকতে পারে তবে তা নীতিমালা অনুসরণ করে দেওয়া হয়েছে।

টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, টাকা ছাড়া কোন বার প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ হয়নি। প্রশাসন ও এমপি স্যারের জন্য কিছু খরচের টাকা নেওয়া হয়।

পার্বত্য অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাঈন উদ্দিন জানান, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে গুচ্ছ গ্রামের প্রকল্প চেয়ারম্যানের পদটি। যার প্রভাব পড়ছে নীরহ মানুষদের ওপর। নিয়োগের সময় দেওয়া অর্থ তুলতে ওজনে কম দেওয়ার পাশাপাশি কার্ডধারীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হয়। তা বন্ধে গুচ্ছগ্রাম ভিত্তিক প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ হলেও সচ্ছতা ফিরতে পারে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার সাথে মুঠোফোনে যোগযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: টাকার বিনিময়ে প্রকল্প চেয়ারম্যানের নাম
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন