জাতীয় সংসদে আজ পাশ হতে পারে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন 

জাতীয় সংসদ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আজ মহান জাতীয় সংসদে পাশ হতে পারে বহুল বিতর্কিত পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধনী- ২০১৬। এর আগে ভূমি মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ বুধবার রাতে  জাতীয় সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন- ২০০১ সংশোধন কল্পে আনীত বিলটি [পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) বিল, ২০১৬] স্থায়ী কমিটি কর্তৃক সুপারিশকৃত আকারে অবিলম্বে বিবেচনার জন্য গ্রহণ করার প্রস্তাব করেন। বৃহস্পতিবার বিলটি পাশের জন্য প্রস্তত করা হয়েছে বলে সংসদ সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিদ্যমান অচলাবস্থা দূর করার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় বিধানের প্রস্তাব করে মঙ্গলবার সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) বিল-২০১৬ উত্থাপন করেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ।

এরপর পরীক্ষা নীরিক্ষা করে ১ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদে রিপোর্ট প্রদানের জন্য বিলটি ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হলে স্থায়ী কমিটি পরীক্ষা নিরাীক্ষার পর বিলটি সংসদ অধিবেশনে ফেরত পাঠায়। সংসদ সূত্র জানিয়েছে, বিলটিতে উল্লেখযোগ্য কোনো সংশোধনী আনা হয়নি।

বিলে বিদ্যমান আইনের প্রস্তাবনায় তৃতীয় অনুচ্ছেদে উল্লেখিত পার্বত্য জেলা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য জনসংহতি সমিতি শব্দগুলোর পরিবর্তে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি শব্দগুলো প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিলে বিদ্যমান আইনের ধারা-৩ এর উপধারা (২) এর দফা (ঘ) তে উল্লেখিত সংশ্লিষ্ট সার্কেল চিফ, পদাধিকার বলে শব্দগুলোর পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট সার্কেল চিফ বা তৎকর্তৃক মনোনীত একজন প্রতিনিধি শব্দগুলো প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিলে বিদ্যমান আইনের ধারা-৬ এর দফা (ক) এর পরিবর্তে পুনর্বাসিত শরণার্থীদের ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ এবং অবৈধ বন্দোবস্ত ও বেদখল হওয়া ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা শীর্ষক নতুন (ক) ধারার শব্দগুলো প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া দফা (খ) তে উল্লেখিত আইন ও রীতি শব্দগুলোর পরিবর্তে আইন, রীতি ও পদ্ধতি শব্দগুলো এবং দফা (গ) এর পরিবর্তে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি বহির্ভূতভাবে জলেভাসা ভূমিসহ (ফ্রিঞ্জ ল্যান্ড) কোন ভূমি বন্দোবস্ত প্রদান বা বেদখল করা হয়ে থাকলে তা বাতিলকরণ এবং বন্দোবস্তজনিত বা বেদখলজনিত কারণে কোনো বৈধ মালিক ভূমি থেকে বেদখল হয়ে থাকলে তা দখল পুনর্বহাল শীর্ষক নতুন (গ) দফা প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিলে বলা হয়, তবে শর্ত থাকে যে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি অনুযায়ী অধিককৃত ভূমি ও বসতবাড়িসহ জলে ভাসা ভূমি, টিলা ও পাহাড় ব্যতিত কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা ও বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ এলাকার ক্ষেত্রে এ উপধারা প্রযোজ্য হবে না।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের আইনে রিজার্ভ বনাঞ্চল, সরকার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নামে অধিগ্রহণকৃত ভূমি, সরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান এই আইনের আওতায় থাকলেও বর্তমান আইনে তা বাদ দেয়া হয়েছে। এই সাথে পদ্ধতিগতভাবে অধিগ্রহণকৃত শব্দটি যুক্ত হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারী প্রতিষ্ঠানের নামে অধিগ্রহণকৃত ভূমি, পার্বত্য চট্টগ্রামের ২০ ভাগ রিজার্ভ ফরেস্ট ইত্যাদির বিরুদ্ধে ভূমি কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা যাবে।

ইতোমধ্যে বান্দরবানে ভূমি কমিশন সংক্রান্ত সিভিল পর্যায়ের একাধিক বৈঠকে পাহাড়ী নেতৃবৃন্দ রিজার্ভ ফরেস্ট ও খাস জমির অধিকার নিয়ে কথা বলেছে, হেড ম্যানদের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প সমুহের খাজনা আদায় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

এদিকে পার্বত্য বাঙালীরা এই বিলকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বভৌমত্ব, সরকারের কর্তৃত্ব ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালীর অস্তিত্ব বিনাশী আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে হরতাল পালন করেছে ও আগামী দিনে কঠোর কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দিয়েছে।

বিলে বিদ্যমান আইনের ধারা ৭, ৯, ১৩, ১৮ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০১৬ রহিত করারও প্রস্তাব করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন