চিকিৎসক ও নার্স শূণ্য থানচি হাসপাতাল: তিন শতাধিক গর্ভবতী প্রসবের অপেক্ষায়

sam_9580-copy

থানচি প্রতিনিধি:

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র প্রশাসন বিভাগ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, প্রধান সহকারীসহ অনেকে কর্মস্থলে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত। ৯ জন চিকিৎসক এর স্থলে দায়িত্বরত আছেন ১ জন, তাও  চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ট্রেনিংয়ে। ফলে  তিন শতাধিক গর্ভবতী মহিলা  সন্তান প্রসবের অপেক্ষমান থাকায় গর্ভবতী স্বজনদের দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম । গত শুক্রবার এক প্রসূতির বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু সংবাদ গনমাধ্যমে রোববার  প্রকাশিত হলে  এ আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক বিভাগের অফিস সহকারী মোহাম্মদ ইমরান হোসেন জানান, চলতি বছরে  থানচি উপজেলা ৪ ইউনিয়নে হত দরিদ্র গর্ভবতী মহিলাদের সুস্থ স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অর্থিক সহায়তা পেতে  ২০১৬ সালের জুন মাসের মোট আবেদন করেছে ৩২০জন। ইতিমধ্যে ১৪ জন গর্ভবতী সন্তান প্রসব হয়েছে বাকি রয়েছে তিন শত ছয়জন। ক্রমন্বয়ে যে কোন সময়ে গর্ভবতী মহিলা ও স্বজনরা সু চিকিৎসার জন্য নিকটতম হাসপাতাল ও মাতৃমঙ্গলে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা বেশী ।

রবি ও সোমবার সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র দেখা হলে মেডিকেল অফিসার ডাঃ রিপন দত্ত, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (এসএসিএমও) মোঃ ইমরান এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা দুইজন নিয়োগ ও পোস্টিং সূত্রে রেমাক্রী ইউনিয়নে কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বরত আছি। অত্র হাসপাতালে  চিকিৎসক না থাকায় অতিরিক্ত কাজ করছি। প্রশ্ন করা হলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও প্রধান সহকারী দীর্ঘদিন থেকে বান্দরবান গেছেন।  জনবল ও অন্যান্য তথ্য জানে না উপস্থিত থাকা সকলের । গেল শুক্রবার প্রসূতির মৃত্যু খবর পেয়ে  মর্মাহত প্রসূতি কোন স্বজনরা হাসপাতালে আসেননি  ও ভর্তির জন্য যোগাযোগও করা হয়নি বলে দাবী করেন।

প্রতিদিনের রেজিস্টারে শনি-রবি ৪৯ জন আউটডোর রোগী হাসপাতালের চিকিৎসার জন্য আসছেন। ৯ বছরে শিশু একজন সেলিব্রা ম্যালেরিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে।  বর্তমানে রোগী আশঙ্কামুক্ত বলে জানালেন।

পুরো কমপ্লেক্স ঘুরে দেখি প্রতিটি  কক্ষের ফটকের পড়ে রয়েছে ময়লা আবর্জনা ও দুর্গন্ধ পরিবেশ ও জনশূণ্যতা ।

হাসপাতালে উপস্থিত থাকা  ফার্মাসিস্ট সৈয়দ আলম, ন্যাশনাল সার্ভিসে শৈলাইন ত্রিপুরা জানান, রবিবার হতে নার্স ২, সুইপার ৪, পিয়ন ২ জনসহ সর্বমোট ১০ হতে ১২জন উপস্থিত রয়েছে। বাকিরা কোথায় রয়েছে এমনটা  জানতে চাইতে এড়িয়ে যান।

ডা. রিপন দত্ত জানান ,থানচি বাজার হতে কমপ্লেক্স’র রাস্তা খানাখন্দে পায়ে হাঁটার উপযোগী নয় এবং পানি ও বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালের পরিবেশ খুবই নাজুক ।

এদিকে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের  পিয়ন রামথং বম, অংথোয়াই ত্রিপুরা দুইজন অফিস পরিস্কার পরিছন্ন করার উদ্দেশ্যে  দপ্তরে সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সিনিয়র কর্মচারীদের অনুপস্থিতির কারনে পুরো কার্যালয় ভবনে রয়েছে তালা ঝুলন্ত।

জানা গেছে, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের শিশু হাসি ও মাতৃমঙ্গল প্রকল্পের ৬ জন ধাত্রী ও নার্স প্রতিষ্ঠাকাল থেকে নিয়োগ প্রাপ্ত । ধাত্রীদেরকে নূন্যতম প্রসূতি প্রসবের জন্য  ট্রেনিং, প্রশিক্ষণ ও উপকরণসহ সরজ্ঞাম দিয়েছে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর । কিন্তু সব উপকরণ সরজ্ঞাম নিয়ে অত্র মাতৃমঙ্গল থেকে ৬ ধাত্রী ও নার্স  বিভিন্ন উপায়ে বান্দরবান সদরে থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত  রয়েছে। তাদের সেবা না পাওয়া সাধারণ গর্ভবতীরা  সুপরামর্শ নেয়া হয় না।  অপরদিকে মাতৃমঙ্গল সূর্য হাসি কেন্দ্রে অনেকে যেতে বিমূখ ।

মুঠো ফোনে জানতে চাইলে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা রণধির বড়ুয়া জানান,পালাবদল করে অফিস চালাই । বৃহস্পতিবার মাসিক মেটিং শেষ করে আসছি বান্দরবানে । চলতি মাসের বেতন হলে কর্মস্থলে যাবো।

মুঠো ফোনে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক বিভাগের প্রধান ডা. মংটিঞো জানান, তিনি পারিবারিক কাজের জন্য বান্দরবানে আছেন শেষ হলে কর্মস্থলে যাবেন । পরিবারিক কাজ কখন শেষ হবে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি নিজেই জানে না বলে জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন