চকরিয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে উপকূল প্লাবিত : অনিশ্চিত বোরো চাষাবাদ

Chakaria Pc 22-07-2016 copy

চকরিয়া প্রতিনিধি:

সম্প্রতি ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর তাণ্ডবে কক্সবাজারের চকরিয়ার উপকূলীয় বিভিন্ন ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। সামুদ্রিক জোয়ার ও বন্যার পানির প্রবল ধাক্কায় কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৩৩ কিলোমিটার এলাকার বর্তমানে ভেঙ্গে যাওয়া অন্তত ৪২টি পয়েন্টে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে প্রতিদিন চলছে রীতিমত জোয়ার ভাটা। উপজেলার বেশির ভাগ পয়েন্টের বেড়িবাঁধের অংশ দিয়ে নিত্যদিন সামুদ্রিক জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ার কারণে কোন স্থানে হাটু সমান আবার কোন স্থানে কোমড় সমান এলাকা পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে হাজার হাজার পরিবার। এ অবস্থার কারনে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় বেড়ে চলছে জনদুর্ভোগ। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এই মৌসুমে এলাকার বোরো চাষাবাদ।

সূত্রে জানা গেছে, ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে চকরিয়া উপজেলার ৬৫এ-৩ পোল্ডারের অধীন বরইতলী ইউনিয়নের পহরচাঁদা, ৬৫এ-১ পোল্ডারের চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সওদাগরঘোনা এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। একই ভাবে উপজেলার ৬৫ পোল্ডারের অধীন কোণাখালী ইউনিয়নের মরংঘোনা ও বিএমচর ইউনিয়নে ৬টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে।

চকরিয়া উপজেলার মতো ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে পেকুয়া উপজেলার মগনামা, উজানটিয়া ইউনিয়নে অন্তত ৬টি ও দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় সাতটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। তার মধ্যে কুতুবদিয়া উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধের অংশ দিয়ে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ার কারণে প্রতিদিন এলাকার শত শত বসতবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে পানিতে।

অপরদিকে জোয়ারের পানিতে খেলতে গিয়ে ইতোমধ্যে কুতুবদিয়া উপজেলায় তিন শিশুর করুণ মুত্যু ঘটেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুত্র জানিয়েছেন, জেলার অন্যসব উপজেলার সাথে পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ এসব বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য নতুন টেন্ডারে অন্তভুক্ত করা হয়েছে। সহসা এসব এলাকায় মেরামত কাজ শুরু হবে।

চকরিয়া উপজেলার কোণাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, রোয়ানু তাণ্ডবে ইউনিয়নের মরংঘোনা এলাকার অন্তত তিনশত মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। বর্তমানে ভেঙ্গে যাওয়া অংশটি শাখা খালে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সকালে ও রাতে দুই দফা জোয়ারের সময় সামুদ্রিক জোয়ারের পানি বেড়িবাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এতে এলাকার শত শত পরিবার চরম দূর্ভোগের রয়েছে।

তিনি বলেন, জোয়ারের পানিতে ইউনিয়ন পরিষদের মাঠ প্লাবিত হচ্ছে। তলদেশের মাটি ক্ষয় হয়ে যাওয়ার কারণে ইউপি পরিষদের ভবন বর্তমানে ঝুঁকর মধ্যে পড়েছে। ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধের অংশ সমুহ সহসা মেরামত করা না গেলে মানুষের দূর্ভোগের শেষ থাকবে না।

উপজেলার বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার বলেন, তার ইউনিয়নের একটি বিশাল অংশের জনগণের বসবাস মাতামুহুরী নদীর তীর এলাকায়। প্রতি বছর বর্ষা নামলে মাতামুহুরী নদীর ঢলের কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধগুলো ভেঙ্গে যায়। জুন মাসে কয়েকটি অংশ বেড়িবাঁধের মেরামত কাজ শেষ করা হলেও ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে ফের কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধের ফাটল সৃষ্টি হয়।

তিনি বলেন, ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায় ভেঙ্গে যাওয়া অংশের বেড়িবাঁধ মেরামতে গত মাসে টেন্ডার হলেও এখনো কাজই শুরু করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থার কারণে বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্থ অংশ দিয়ে প্রতিদিন মাতামুহুরী নদীর জোয়ারের পানি ঢুকে গ্রামে গ্রামে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। গত একমাস ধরে এলাকার শত শত পরিবার কার্যত পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, রোয়ানুর তাণ্ডবে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন পোল্ডারে অন্তত ৩৩ কিলোমিটার এলাকার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরির্দশন করে জরুরী ভিত্তিতে তা মেরামতের জন্য অর্থবরাদ্ধ চেয়ে পাউবো’র সংশ্লিষ্ট উধর্বতন দপ্তরে লিখিত সার সংক্ষেপ পাঠানো হয়। উধর্বতন কর্তৃপক্ষ ১৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ক্ষতিগ্রস্থ ৪২টি পয়েন্টের বেড়ি বাঁধ মেরামতের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ৪২ প্যাকেজের আওতায় কাজের বিপরীতে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। দাখিলকৃত কাগজপত্র সমুহ যাছাই বাছাই চলছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সকল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হবে। তারপর শুরু করা হবে মেরামত কাজ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন