ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমার আর্মির মহড়া, জিরো পয়েন্টে আটকে আছে অসংখ্য রোহিঙ্গা

 

 

ঘুমধুম প্রতিনিধি:

নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে জড়ো হয়েছে মুসলিম রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশে ঢুকতে না পেরে নারী-শিশুসহ অসংখ্য রোহিঙ্গা জিরো পয়েন্টে গত শুক্রবার থেকে অবস্থান করছেন। হঠাৎ করেই সোমবার(২৮আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমারের আমির প্রায় ৩০-৪০ জন সদস্য মহড়া দেন। তাদের দেখে জিরো পয়েন্টে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন।

এ সময় বাংলাদেশের সীমান্ত বাহিনী বিজিবিও কড়া অবস্থান নেয় এবং জিরো পয়েন্ট থেকে সবাইকে সরে আসার নির্দেশ দেয়। প্রায় একই সময়ে মিয়ানমার সীমান্তের ভেতরে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। সীমান্তের এই পাড় থেকে আগুনের ফুলকি ও ব্যাপক পরিসরে ধোঁয়া দেখা যায়।

ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ফের হত্যাযজ্ঞ এবং জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে উগ্রপন্থী বৌদ্ধারাও চালায় হত্যাযজ্ঞ। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া আর রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ যেন নিত্য ব্যাপার। চলতি মাসের শুরুতে রাখাইনে সেনা মোতায়েন করে মিয়ানমার সরকার। ঘোষণা দেয় অভিযানের। এরই মধ্যে গ্রামের পর গ্রাম রোহিঙ্গাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। ২০১৬সালে অক্টোবর মাসে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো মিয়ানমার সেনাদের এমনই এক হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় জাতিসংঘের সাবেক প্রধান কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন বৃহস্পতিবার তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কমিশন রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার এবং তাদের নাগরিকত্ব প্রদানের আহ্বান জানায়।

প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নতুন করে হামলা ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে মিয়ানমার। এই সংঘর্ষে সোমবার(২৮আগস্ট) সকাল পর্যন্ত সরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে, যার মধ্যে ১২ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। তবে রোহিঙ্গা নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনের দাবি, নতুন করে ৮ শতাধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। সংগঠনটি দাবি করে, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলীয় রাথেতুয়াং শহর এলাকা গত দুই সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ। সেখানে রোহিঙ্গারা না খেয়ে মারা যাচ্ছেন। মাউংদোতেও তারা যখন একই কাজ করতে যাচ্ছিল, তখন বার্মিজ উপনিবেশিক বাহিনীকে হটাতে চূড়ান্ত পর্যায়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছি। বরাবরের মতো গত বছরের অক্টোবরে এ ধরনের সংঘর্ষের পর প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। পরে তারা কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষের পরও একইভাবে স্রোতের বেগে সীমান্তে আসছে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত। এসব এলাকায় বাংলাদেশ সীমান্ত বাহিনী বিজিবির কড়া নজরদারি থাকা সত্ত্বেও তারা রাতে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে।

এদিকে, স্থানীয়রা বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের পিলার ৪১নম্বর থেকে ৪৭নম্বর পিলারে ঘুমধুম,তুমরু,চাকঢালা,আশারতলী,ফুলতল ও লিমুছড়িসহ ছয়টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে।

বান্দরবানের ঘুনধুম ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, সীমান্তের পরিস্থিতি হঠাৎ করেই অবনতি হয়েছে। শুক্রবার ভোর থেকে শত শত রোহিঙ্গা শিশু, নারী-পুরুষ সীমান্তে অবস্থান নিয়েছে। তবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে স্থানীয়রা বিজিবিকে সহায়তা দিচ্ছে। রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে স্থানীয় লোকজন। এর মধ্যে দুপুরে হঠাৎ করেই মিয়ানমারের ক্যাম্প থেকে গুলিবর্ষণের ঘটনা নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন