প্রথমবারেই শতভাগ সফল গুলশাখালী বর্ডার গার্ড কলেজ


পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:
এইচএসসির মতো বড় পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থীর পাস করা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আর সেটি যদি হয় সেই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথমবার অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তাহলে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের জন্য সেটা কতটা আনন্দ আর গর্ব বয়ে আনতে পারে তা বলে বোঝানোর মতো না। তেমনই আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করছে লংগদু উপজেলার গুলশাখালী বর্র্ডার গার্ড মডেল কলেজ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। ২০১৮ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় গুলশাখালী কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৭ জন এবং মানবিক বিভাগের ২১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়, এটিই ছিল প্রতিষ্ঠানটির প্রথম ব্যাচ। ১৯ জুলাই বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৩৮ জন শিক্ষার্থীর সবাই পাস করেছে। সর্বোচ্চ সিজিপিএ ৩.৮৩ এবং ৩.০০ এর উপরে সিজিপিএ অর্জন করেছে ২১ জন শিক্ষার্থী। সারাদেশে যখন পাসের হার কমেছে এবং ৫২টি প্রতিষ্ঠান থেকে কেউই পাস করেনি সেই সময় প্রত্যন্ত অঞ্চলে নতুন প্রতিষ্ঠিত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ সফলতা প্রায় অকল্পনীয়, সে কারণেই আনন্দটাও বেশি। আর সেই খুশিতে ভাসছে এলাকাবাসীও।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেজালিন আরেফিন জানান, শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণেই এই সফলতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। তাই সকলের প্রতিই অভিনন্দন এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বিশেষ করে কলেজ পরিচালনা কমিটির সার্বক্ষণিক তদারকি না থাকলে এ অর্জন সম্ভব হতো না। শুরু থেকেই শিক্ষক সংকট ছিল। প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এখানে শিক্ষকদের চাহিদা পূরণ করাও কঠিন। তাই অনেকেই কিছুদিন থেকে অন্যত্র চলে যান। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস নেয়া অনেক সময়ই কঠিন ব্যাপার ছিল। তাছাড়া আইসিটি বিষয়ে প্রথম দেড় বছরের বেশি সময় কোনো শিক্ষকই ছিলেন না, শেষের দিকে আমরা একজন শিক্ষক নিয়োগ করতে পেরেছিলাম। তাই এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা ভয় ছিল, শিক্ষার্থীরা তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে আবার খারাপ করে কিনা। কিন্তু না তারা কয়েক মাসের চেষ্টাতেই কৃতকার্য হতে পেরেছে। এখনো কলেজে আইসিটি বিষয়ে ব্যবহারিক ক্লাস করানোর মতো ল্যাব নেই, কোনো কম্পিউটারও নেই। তারপরও সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমাদের এই সফলতা এসেছে।

কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং গুলশাখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের দিন। রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা গুলশাখালী। জেলা সদর তো দূরের কথা উপজেলা সদরের সাথেও আমাদের সড়ক যোগাযোগ নেই, নেই বিদ্যুৎ। এমন একটি এলাকায় কলেজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব এটা ভাবাই কঠিন। তারপরও এলাকাবাসী এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দের আন্তরিক সহযোগিতা ও সমর্থনে আমরা এই কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে পেরেছিলাম। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তা ছাড়া আমাদের পক্ষে এ প্রতিষ্ঠানটি দাঁড় করানো সম্ভব ছিল না। ২০১১ সালের ২৯ জুলাই তিনিই প্রথম এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এরপর বিভিন্ন প্রজেক্টের আওতায় তিনি কলেজের ভবন, মাঠ, আসবাপত্রের ব্যবস্থা করেছেন। রাজনগর বিজিবি জোনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় ও তত্ত¡াবধানের ফলে আমাদের এই প্রচেষ্টা আজ সফল হয়েছে। তাই আমি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সেই সাথে ছাত্র, শিক্ষকদের প্রতিও তাদের সফলতার জন্য অভিনন্দন জানাই।

গুলশাখালী বর্ডার গার্ড মডেল কলেজের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি এবং রাজনগর বিজিবি জোনের জোন কমান্ডার লে. কর্নেল এম এম গোলাম মোহায়মেন জানান, কলেজের প্রথম ব্যাচের সকল শিক্ষার্থীর কৃতকার্য হওয়ায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল, আমরা প্রচুর সময় এবং শ্রম দিয়েছি। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরাও যথেষ্ঠ পরিশ্রম করেছে বলেই আজ এই সফলতা এসেছে। তবে এক কথায় বলতে গেলে, শিক্ষার্থীদের এই অভূতপূর্ব সফলতায় আমি খুবই অবাক হয়েছি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সদ্য প্রতিষ্ঠিত কলেজ, সেখানে শিক্ষক সংকট, শিক্ষক হিসেবে যারা আছেন তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতাও নেই, ক্লাস রুমের সংকট, শিক্ষা উপকরণের সংকটÑ এত সংকটের মধ্যেও প্রথম ব্যাচেই শতভাগ সফলতা পাওয়া আমাদের ভাবনাতেও ছিল না। তবে ভালো কিছু করার প্রত্যয় ছিল, চেষ্টা ছিল আমাদের মধ্যে। সকলের প্রচেষ্টার সন্বয়ের কারণেই সেই অসম্ভবকে সম্ভব করা গেছে। বিশেষ করে গুলশাখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম, বর্তমান চেয়ারম্যান আবু নাছিরসহ এলাকাবাসীর সার্বিক সহায়তায় শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই এটা সম্ভব হয়েছে। প্রত্যাশা করি, প্রথমবারের এই সফলতা কলেজের ভিত্তিকে দৃঢ় করবে। আমাদেরকে আরও এগিয়ে যেতে সাহস যোগাবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন