গুইমারা উপজেলার তিন ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে চলছে নির্ঘুম প্রচার-প্রচারণা

election-pic
এম. সাইফুর রহমান :

আগামী ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খাগড়াছড়ির নবসৃষ্ট গুইমারা উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন (গুইমারা সদর, হাফছড়ি, সিন্দুকছড়ি) পরিষদের নির্বাচন। উপজেলায় রুপান্তরিত হওয়ার পর প্রথমবারের মত নতুন উপজেলার অধীনে অনুষ্টিত হতে যাচ্ছে ইউপি নির্বাচন।

নির্বাচনকে ঘিরে পুরো উপজেলা জুড়ে চলছে বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনা। প্রচার-প্রচারণায় মুখর প্রত্যন্ত পাহাড়ী পল্লীগুলো। গণসংযোগ চলছে, মাইকিং এর পাশাপাশি ভোট প্রার্থনায় পায়ে হেঁটে প্রার্থীরা ছুুটছেন পাহাড় থেকে পাহাড়ে। পাহাড়ী-বাঙ্গালী সবাইকে কাছে টানছেন তারা। সদর ইউনিয়নে সরকার দলীয় প্রার্থী মেমং মারমা নৌকা প্রতীক নিয়ে শতভাগ আশাবাদী হলেও মাঠে সমান তালে আছেন ধানের শীষ প্রতিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোখলেছুর রহমান। তবে দুজনের মাঝেই কালো মেঘ হয়ে দেখা দিয়েছেন আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্মল নারায়ন ত্রিপুরা।

গত ৬ অক্টোবর ৩ ইউনিয়নের মনোনয়ন পত্র জমা জমা দেয়ার পর যাচাই-বাচাই ও প্রত্যাহার পর্ব শেষে মোট ১০ জন চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত মহিলা আসনে ২৩জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৮০জন প্রার্থী মাঠে নেমেছে বিজয়ের লড়ায়ে। গুইমারা সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার পদপ্রার্থী হরিপদ্ম ত্রিপুরা এবং ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার পদপ্রার্থী জ্যোতি বসু ধামাইর বিপক্ষে কোনো প্রতিদন্ধি প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছেন তাঁরা।

এদিকে গত ১৫ অক্টোবর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে পোষ্টার ব্যানার আর ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো নির্বাচনী এলাকা। জয়ের লক্ষ্যে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন প্রার্থীরা। প্রতিদন্ধিতার মাঠে জনগণের সমর্থন আদায়ে প্রার্থীর পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরা দিন-রাত চষে বেড়াচ্ছেন মাঠ। অনেকেই প্রচার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে মাঠে ময়দানে এখন বইছে নির্বাচনী আমেজ। আর ভোটাররাও উপভোগ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা।

গুইমারা সদর ইউনিয়ন : নৌকা নিয়ে নির্বাচনী জোয়ারে ভাসছে সরকারী দলীয় প্রার্থী গুইমারা উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান ইউ.পি চেয়ারম্যান মেমং মারমা। রাজনৈতিক দিক থেকে উপজেলা জুড়ে যথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে তার। একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে গত ৫ বছর সাধারণ মানুষের পাশে থাকার পাশাপাশি আধুনিক গুইমারাকে সাধারণ একটি ইউনিয়ন থেকে উপজেলায় রুপান্তর করতে অনেক ত্যাগ ও অবদান রয়েছে তার। স্থানীয়রা বলছে, এতসব উন্নয়নের পর এখন সময় এসেছে যোগ্য ব্যক্তির মূল্যয়নের।

জয়ের বিষয়ে শত ভাগ আশাবাদী মেমং মারমা জানান, বিগত ৫ বছর আমি চেয়ারম্যান হিসেবে গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করেছি এবং প্রায় ২১ বছর গুইমারা উপজেলা আ:লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এখানে জাত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে আমারা একই মায়ের অভিন্ন সন্তান, এলাকাকে আমরা শান্ত রাখতে সফল হয়েছি, সকলে মিলে মিশে গুইমারাবাসীর উন্নয়নে কাজ করেছি। একজন পরিক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে আমি আশা করছি গুইমারাবাসী তা মূল্যায়ন করবেন এবং নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তার প্রমাণ দিবেন।

অপরদিকে ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে মাঠে সমান তালে আছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোখলেছুর রহমান। সদা হাস্যজ্বল মানুষ হিসেবে এলাকায় ব্যপক পরিচিতি তাঁর। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক সংগঠন ছাড়াও সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে সাধারণ মানুষে পাশে ছিলেন তিনি। রাজনীতির মাঠে বিচক্ষণ ও কর্মঠ মানুষ হিসেবেও পরিচিতি তিনি। এ ইউনিয়নে বিএনপি-জামায়াতের বিদ্রোহী কোন প্রার্থী না থাকায় শতভাগ বিজয়ের স্বপ্ন দেখছেন বিএনপির এ প্রার্থী। মোকলেছুর রহমান জানান, দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়ে জনগন যোগ্য ব্যক্তির মূল্যায়ন করবে।

একই ইউনিয়নে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্মল নারায়ন ত্রিপুরা। বিগত দিনে এ ইউনিয়নে তার পিতা দীর্ঘ ৩০ বছর একাধারে একজন সফল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্মল নারায়ন ত্রিপুরা জানান, আমার সর্গীয় পিতা নগেন্দ্র নারায়ন ত্রিপুরা ১৯৭৩ইং সাল থেকে টানা ৩০বছর এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। আমার পরিবারকে গুইমারাবাসী ব্যক্তিগত ভাবে চিনে-জানে। আমি নির্বাচিত হলে এলাকাবাসীর সেবা করে আমার বাবার রেখে যাওয়া কাজগুলোকে এগিয়ে নিবো।

হাফছড়ি ইউনিয়ন : নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে লড়াইয়ে নেমেছেন গত দুইবারের চেয়ারম্যান খাগড়াছড়ি জেলা আ. লীগের সদস্য ও বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীর চাচা চাইথোয়াই চৌধুরী। এলাকায় সরল মানুষ হিসেবে তার যথেষ্ট পরিচিত। তিনি বলেন, বিগত দিনে দীর্গ ১০ বছর আমি এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এ সময়ে জনগণের পাশে থেকে আমি কাজ করেছি। আশা করছি এবার জনগণ তার মূল্যায়ন করবে এবং নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবে।
অপরদিকে প্রার্থী ধানেরশীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ে মাঠে আছেন গুইমারা উপজেলা বিএনপির সদস্য মো. মাহবুব আলী। তিনি হাফছড়ি ইউনিয়ন বিএনপির তৃর্নমূল নেতাকর্মীদের গোপন ভোটে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন। মাহবুব আলী বলেন, উপজেলার মধ্যে হাফছড়ি ইউনিয়নটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তাছাড়াও অতিতে আমি ব্যক্তিগত ভাবে মানুষের পাশে থেকে দুঃখে সুখে মানুষের সেবা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি জনগণন ধানের শীষে ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবেন।

তবে সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামীলীগ-বিএনপি বড় দুদলের মাঝে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান তরুণ চেয়ারম্যান উশ্যেপ্রু মারমা। আনারস প্রতীক নিয়ে লড়াইয়ের লক্ষ্যে চলছে তার জোর প্রচারণা। জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলেও সাংবাদিকদের জানান তিনি।

অপরদিকে গুইমারা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে একমাত্র হাফছড়ি ইউনিয়নে জাকের পাটির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে (গোলাপ ফুল) প্রতীক নিয়ে মাঠে লড়াইয়ে আছেন দুইবারের ইউ,পি মেম্বার মো: জামাল উদ্দীন। তিনি বলেন, আমি র্দীঘ ১০ বছর ইউ,পি সদস্য হিসেবে জনগণের কাছে থেকে সেবক হিসেবে কাজ করেছি। ভোটাররা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনে চারিত্রিক বৈশিষ্ট দেখে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করলে ইনশাআল্লাহ গোলাপ ফুল মার্কা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।

সিন্দুকছড়ি ইউনিয়ন : আ. লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে লড়ছেন জেলা আ. লীগের সদস্য ও চার বারের ইউ,পি চেয়ারম্যান সুইনুপ্রু চৌধুরী। এবারও তিনি বিজয়ের ব্যপারে শতভাগ আশাবাদী। তিনি জানান, সিন্দুকছড়ি বাসীর সুখে দুঃখে আমি দীর্ঘ ২০ বছরের সাথী ছিলাম। আশা করছি সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সিন্দুকছড়িবাসী সঠিক সিন্ধান্ত নিবেন এবং নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবেন।

একই ইউনিয়নে ধারেন শীষ প্রতীক নিয়ে জয়ের লক্ষ্যে লড়ছেন গুইমারা উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী দীন মুহাম্মদ। তিনি জানান, এলাকার মানুষের আন্তরিকতাই আমার অনুপ্রেরণার উৎস। সিন্দুকছড়ি একটি দুর্গম এলাকা ও অনুউন্নত ইউনিয়ন। এলাকাবাসী আমাকে ধানের শীষে ভোট দিয়ে বিজয়ী করলে আমি সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নকে একটি আধুনিক ইউনিয়ন হিসেবে গড়ে তুলবো। আনারস প্রতীক নিয়ে লড়াই করছেন অপর সতন্ত্র প্রার্থী রেদাক মারমা। জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী রেদাক মারমা জানান, সিন্দুকছড়িবাসী পরিবর্তন চায়। জনগণ আমাকে নির্বাচিত করলে আমি সবাইকে সাথে নিয়ে সিন্দুকছড়িকে একটি মডেল ইউনিয়নে রুপান্তরিত করবো।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, গুইমারা সদর ইউনিয়নে ৯৫৫৬, হাফছড়ি ইউনিয়নে ১৩২১৮, সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নে ৪৬০৭সহ গুইমারা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ২৭৩৮১। ৩টি ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ২৭টি।

গুইমারা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রিপন হোসেন বলেন, আগামী ৩১ অক্টেবর অবাধ, সুষ্ট ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে ইতিমধ্যেই আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। আশা করি, সকলের সহযোগিতায় সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দিতে পারব।

এদিকে সাধারণ ভোটাররা জানিয়েছেন সব সময় যাকে কাছে পাবে এমন সৎ, যোগ্য ও শিক্ষিত ব্যক্তিকেই তারা ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। এলাকার উন্নয়ন ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় সচেষ্ট থাকবে এমন প্রার্থীকে বেছে নিতে ভুল করবেন না তারা। প্রার্থী বা্ছাইয়ের বিষয়ে অনেকের মতে, সদর ও হাফছড়ি ইউনিয়নে আ. লীগ-বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ৩ জনই অঘোষিতভাবে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফের সমর্থন নিয়ে ভোট আদায়ে পাড়া-মহল্লায় চষে বেড়াচ্ছেন। তাই আ. লীগ-বিএনপির প্রার্থীর জন্য তারাও হতে পারে একটি ফ্যাক্টর।

খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলা সৃষ্টি হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীরা নিঃসন্দেহে  ইতিহাসে স্থান পাবেন। শুধু বিজয়ের গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ থেকে ইতিহাসের অংশ না হয়ে নির্বাচিত ব্যক্তিরা গুইমারা উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে ইতিহাসের এক উজ্জল নক্ষত্র হবেন এমনটাই প্রত্যশা স্থানীয়দের।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন