গন্তব্যহীন রোহিঙ্গারা: খাদ্য সংকটে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে

টেকনাফ প্রতিনিধি:

প্রাণে বাঁচতে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের টেকনাফে এখন তারা গন্তব্যহীন। যে যেদিক পারছে শুধু ঘুরাঘুরি করছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা এখন খাদ্য ও আশ্রয় সংকটে মানবেতর জীবন যাপন করছে। গত কয়েকদিনে টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ঢুকে পড়া এসব রোহিঙ্গারা অনাহারে অর্ধাহারে ছুটছে অনিশ্চিত গন্তব্যে।

গত ১১ দিনে বেসরকারি জরিপে প্রায় ২ লাখের কাছাকাছি রোহিঙ্গা টেকনাফের নাফ নদী ও সমুদ্র উপকুলীয় অনুপ্রবেশ করেছে। ঢুকে পড়া এসব রোহিঙ্গারা সর্বত্রই গন্তব্যহীনভাবে এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছে। তাদের আপাতঃ লক্ষ্য নয়াপাড়া ও লেদা এলাকার নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত শরনার্থী ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকা। তবে ঠাই মিলছেনা সেখানেও। এভাবে চলতে থাকলে খাদ্য ও আশ্রয় সংকটে এপারেও পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) টেকনাফের মোচনী, নয়াপাড়া, লেদা, হোয়াইক্যংয়ের রইক্ষ্যং, উলুবনিয়া, কান্জর পাড়া, মিনাবাজার, লম্বাবিল ও সাবরাংয়ের শাহপরীরদ্বীপ এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ঢুকে পড়া বেশিরভাগ নারী শিশুসহ রোহিঙ্গারা একটু মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য বিক্ষিপ্তভাবে গন্তব্যহীনভাবে ছুটে চলছে।

এদের অনেকে আবার যানবাহনের মাধ্যমে নয়াপাড়া ও লেদা এলাকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে। আবার কেউ উখিয়ার কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্পে ঢুকছে। এসব ক্যাম্প ও আশপাশে যারা আশ্রয় পাচ্ছেনা তারা টেকনাফ উখিয়ার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় বস্তা, পলিথিন ও বাঁশ নিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে নতুন নতুন বসতি গড়ে তুলছে।

এরমধ্যে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের রইক্ষ্যং এলাকায় পাহাড়ি ভূমি দখল করে অন্তত ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। নয়াপাড়া, মোছনী, লেদা, সাবরাং, শাহপরীরদ্বীপ, শামলাপুর এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে অন্তত ১ লাখ রোহিঙ্গা। এছাড়া টেকনাফের বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে রয়েছে আরো ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা।

টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান জানিয়েছেন, সোমবার রাত ও বুধবার সকালে সমুদ্র উপকুল পয়েন্ট দিয়ে টেকনাফে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গার সংখ্যা অন্তত ৮০ হাজার হতে পারে বলে তিনি অনুমান করছেন।

টেকনাফ উপজেলার রইক্ষ্যং এবং নয়াপাড়া ও লেদা শরনার্থী অভিমুখে রোহিঙ্গাদের ঢল অব্যাহত ছিল। অধিকাংশ নারীর কোলে শিশু।

টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কে রোহিঙ্গাদের ঢল। ভার কাঁধে নিয়ে দলে দলে ছুঁটছে আশ্রয়ের জন্যে। অনেকে শতবর্ষী পিতা-মাতা, শ্বশুড়-শাশুড়ীকে ভারে করে এপারে নিয়ে আসতে দেখা গেছে।

পালিয়ে আসা নয়াপাড়া, লেদা ক্যাম্পে ও আশপাশের এলাকায় আশ্রয় নেওয়া গোলবাহার, রহমত উল্লাহ, ফাতেমা খাতুন, নুর বেগমসহ একাধিক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন তারা খাদ্য ও পোশাক সংকটে রয়েছে। স্থানীয় লোকজন যে যেভাবে পারেন রোহিঙ্গাদের শুকনো খাবার, খিঁচুড়ি সরবরাহ করছে। আবার ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের চাঁদা তুলে খাদ্য সরবরাহ করছে ক্যাম্পের পুরাতন রোহিঙ্গারা।

অপরদিকে সীমান্তের জিরো পয়েন্টসহ দুই দেশের দুই পারে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছে বলে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছে।

মিয়ানমারের মংডুর দংখালী থেকে আসা জাবেদ ইকবাল (৪৫)’র পুরো পরিবারের ৭জন রয়েছে। রয়েছে ৯০ বছর বয়সী মাতা সমবানু । তিনি জানান, মিয়ানমারের দংথালী থেকে নারী পুরুষসহ একটি বোটে ৪০জন বাংলাদেশে পাড়ি দেন। এপারের পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের লেগুরবিল সৈকত থেকে অনুপ্রবেশ করে। প্রতিজন ১৫ হাজার টাকা করে বোটটি ভাড়া করেন।

এদিকে বুধবার বিকালে শাহপরীরদ্বীপ, সাবরাং ও টেকনাফের উপকুলের কাছাকাছি রোহিঙ্গা শত শত ফিশিং বোট রাত নামার অপেক্ষায় রয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।

রাখাইন জ্বলছে এখনো: সোমবার রাত ও বুধবার দিনেও রাখাইনের কয়েকটি এলাকায় অগ্নিসংযোগ করেছে বর্মী সেনারা। এর মধ্যে রাইম্মাঘোনা, মাঙ্গালা, মনিরঘোনা এলাকার আগুনের লেলিহান শিখা সীমান্তের এলাকার লোকজন প্রত্যক্ষ করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন