খাগড়াছড়ির বড়পিলাক ট্রাজেডি’র তিন বছর আজ

07

 গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও আসামীদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ

মুজিবুর রহমান ভুইয়া : খাগড়াছড়ির গুইমারা থানার বড়পিলাক কচুবাউন্তি এলাকায় সশস্ত্র উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা দাড়লো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে সুনিল সরকার, আইয়ুব আলী, নোয়াব আলী নামে তিন বাঙ্গালী শ্রমিককে। এঘটনাকে কেন্দ্র করে সেসময় বাঙ্গালী ও উপজাতীয় উভয় পক্ষের শতাধীক বাড়ী ঘরে অগ্নিসংযোগ করার ঘটনা ঘটে। এতে  গুরুতর  আহত হয় কমপক্ষে ৩০ জনের বেশি লোক। ঘটনাটি ঘটেছে ১৭ এপ্রিল রবিবার ২০১১’র এই দিনে । আজ সেই নির্মম হত্যাকান্ডের তিন বছর পূর্ণ হলো। শোকের ছায়া এখনও নিহতদের পরিবারের মাঝে।

১৭ এপ্রিল২০১১ রবিবার দুপুর ২টা। কচুবাউন্তি এলাকায় বাঙ্গালীদের জমিতে আদা-হলুদ লাগানোর জন্য শ্রমিকরা কাজ করছে। এ জমিটি বাঙ্গালীদের নিজস্ব। তারা ২৫/৩০বছর যাবত এখানে বসবাস করে আসছে। উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ দীর্ঘদিন যাবত বাঙ্গালীদের উচ্ছেদ করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। মূলত তাদের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। হঠাৎ ১০/১২জনের উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ সশস্ত্র অবস্থায় তাদের উপর আতর্কিত হামলা করে দাড়ালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে তিন বাঙ্গালী শ্রমিককে হত্যা করে। বদিউজ্জামান, আ: মোমিন, ইনতিয়াজ, সফিকুল, সালেহ মুছা সহ গুরুতর আহত হয় অন্তত ৩০ জন। এ ঘটনা সহিংসতায় রূপ নিলে উভয় পক্ষের শতাধিক বাড়ীঘর আগুন দিয়ে পুড়ানো হয়। পরে সংঘটিত এলাকায় ১৪৪ ধারা জারী করে স্থানীয় প্রশাসন। হত্যা, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করে। হত্যা মামলায় ৫ জনকে চিহ্নিত করে অজ্ঞাত দুই/আড়াইশ উপজাতীয় সন্ত্রাসীকে আসামী করে মামলা করা হয়। যার নং-১, তাং ১৮ এপ্রিল ২০১১। এ মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী খেচু মারামা নামে এক সন্ত্রাসীসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তারা জামিনে বের হয়ে আসে। অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের ঘটনায় অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামী  করে অপর একটি মামলা করে পুলিশ।

দীর্ঘ প্রায় এক বছর মামলার বাদী এস আই মঞ্জুরুল আবছার তদন্ত করার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা বাদী হওয়ায় এসআই মুঞ্জুরুল আবছারের পরিবর্তে এস আই ঠাকুর দাস মন্ডলকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় । দায়িত্ব প্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা ঠাকুর দাস মন্ডল মাত্র ১৫ দিনের তদন্তে ১১ আগস্ট ২০১২ তারিখে দায়সারাভাবে মামলার চুড়ান্ত চার্জসিট প্রদান করে। তার তদন্ত সাপেক্ষে হত্যা মামলায় ৩১ জন উপজাতি এবং অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের মামলায় ২৮ জন বাঙ্গালীকে চিহ্নিত করে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে আসামী করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ।

অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের মামলায় ২৮ জন বাঙ্গালী আসামী একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ও সিনিয়র চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজেষ্ট্রেটের আদালতে বিভক্তভাবে হাজির হয়ে জামিন চাইলে তাদেরকে জামিনে মুক্তি দেয় আদালত। বর্তমানে এ মামলাটি আদালতের বিচারাধীন রয়েছে। তিন বাঙ্গালী শ্রমিক হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ৩১জন উপজাতীয় আসামীর নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে আদালত। কিন্তু দীর্ঘ তিন বছরের মধ্যেও তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারেনি  পুলিশ। অনেকের ধারণা অজ্ঞাত কোন এক হাতের ইশারায় নীরব ভুমিকা পালন করছে পুলিশ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করছে না। আথচ আসামীরা স্বশরীরে পুলিশের সামনে দিয়ে চলাফেরা করছে বীরদর্পে। অতীতে উপজাতীয় সন্ত্রাসী কর্তৃক প্রায় ৩০ হাজার বাঙ্গলীকে হত্যাসহ নারী নির্যতন, অপহরনসহ নানা অপকর্মের বিচার হয়নি আজো। অথচ যাদের নির্দেশে  এসব হত্যা, গুম, লুটতরাজ, চাঁদাবাজীসহ বাঙ্গালীদের উপর নির্মম-নিষ্টুরতম আচরণ করেছে উপজাতীয় সস্ত্রাসীরা তাদেরকে পুরস্কৃত করেছে সরকার।

বর্তমানে নিহতদের পরিবারে সুখ নেই। এখনও আছে শোকের মাতম। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার হয়নি সেসব খুনী-সন্ত্রাসীদের। জামিনে বেরিয়ে এসে আবার এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। সরেজমিনে গেলে কথা হয় নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে। তারা অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার পররপর তাৎক্ষনিক কিছু সহযোগিতা পেলেও দীর্ঘ তিন বছরের মধ্যে তাদের খোঁজ নেয়নি কেউ। কিভাবে তাদের পরিবার চলছে তার খবর ও রাখেনি কেউ। নিহত সুনিল সরকারের স্ত্রী সীমা সরকার ও তার ৫ বছরের শিশু সন্তান জয় সরকার কান্না জরিত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামীকে যারা হত্যা করল তারা দিব্যি চলাফেরা করছে। আজও খুনীদের কারো বিচার হয়নি। স্বামী নেই ছোট্র এই সন্তানকে লেখা-পড়া করানো আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা। সন্তান বাবাকে খুঁজে বেড়ায় কিন্তু তার বাবাতো আর ফিরবে না। সুনিলের মা-বাবার চোখ দিয়ে ঝড়ছে অশ্রু। পুত্রশোকে মাতম থামছে না তার। আর কোন দিন খোঁজে পাবে না বুকের ধনকে। উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাঠিয়ে দিয়েছে না ফেরার দেশে। বুকফাটা আর্তনাত বলে দিচ্ছে ছেলে হারিয়ে কতটা যন্ত্রণায় ভোগছেন তিনি। তিন বছর পার হয়ে গেলেও বিচার না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন নিহত সুনিলের পরিবার।

এমনই অভিযোগ নিহত আয়ুব আলী ও নোয়াব আলীর পরিবারের। নিহত নোয়াব আলীর স্ত্রী রহিমা বেগম একই প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন সাংবাদিকদের কাছে। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে নির্মম হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবী করেছেন বড়পিলাক এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের আক্রমণে নিহত বাঙালি, পার্বত্য চট্টগ্রাম, বড়পিলাক হত্যাকাণ্ড
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন