খাগড়াছড়িতে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে জনসংখ্যানুপাতে নিয়োগের দাবি বাঙালি ছাত্র পরিষদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগে জনসংখ্যানুপাতে ৫০% শতাংশ বাঙালিদের শিক্ষক নিয়োগসহ চার দফা দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ। মৌলিক অধিকারসহ যুক্তিক দাবি আদায় না হলে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার(৭সেপ্টেম্বর) সকালে খাগড়াছড়ি শহরের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার একাংশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. মাঈন উদ্দীন এ হুমকি দেন। এ সময় বাঙালি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখারা একাংশের সহ সাধারণ সম্পাদক রবিউল হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. পারভেজ হোসেন, প্রচার সম্পাদক শাহীন আলমসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে বাঙালি ছাত্র পরিষদের দাবিগুলো হচ্ছে, সকল নিয়োগে জনসংখ্যানুপাতে ৫০% শতাংশ বাঙালিদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ, অন্যান্য সকল নিয়োগেও জনসংখ্যানুপাতে ৫০% শতাংশ বাঙালি ও উপবৃত্তিসহ সকল সুযোগ সুবিধা ও একই নিয়মে প্রদান করা, শুধুমাত্র চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা নয় অন্যান্য সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সদস্যদের জনসংখ্যানুপাতে নিয়োগ দেওয়া, চলতি নিয়োগেই জনসংখ্যানুপাতে নিয়োগ সম্পন্ন করা এবং অন্যথায় অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে পূনরায় স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ পরিক্ষা নেওয়া।

সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, গত ২০০১ সাল থেকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের  সকল নিয়োগে জনসংখ্যানুপাতে ৪৮% শতাংশ বাঙালিদের নিয়োগ দেওয়া হলেও  সময়ের পরিক্রমায় উগ্র সম্প্রদায়িক মনোভাবের কারণে বাঙালি বিদ্বেষী উপজাতি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে নিজেদের মনগড়া নিয়মে শুধুমাত্র চাকমা মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ৭০% শতাংশ উপজাতিদের দিয়ে রমরমা নিয়োগ বানিজ্য চালাচ্ছেন। বঞ্চিত করছেন বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠি সহ অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির সদস্যদের। জেলা পরিষদ স্ব-গৌরবে বাঙালি ৩০% শতাংশ নিয়োগের কথা প্রচার করলেও সেটি ঠিকমত মানা হচ্ছেনা। যে কয়েকজন বাঙালি চাকরী পাচ্ছেন তাও আবার ৫ লক্ষ থেকে ৭ লক্ষ টাকার বিনিময়ে।  চলতি নিয়োগে ৩৫৮টি পদানুসারে হিসাব করলে বাঙালি নিয়োগ পাচ্ছে ২০% শতাংশেরও কম। চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায় আলাদাভাবে কোটা পেলে কেন এ অঞ্চলে  সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া বাঙালি হিন্দু, বড়ুয়া, মুসলিমসহ অন্যান্যরা আলাদা কোটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, গত ২৫ আগস্ট শুক্রবার পার্বত্য জেলা পরিষদ খাগড়াছড়ি এর নিকট হস্তান্তরিত প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়রে জন্য এই প্রথমবারের পুরুষ প্রার্থীর জন্য স্নাতক পাশ বাধ্যতামূলক করা হয় । নিয়োগের লিখিত পরিক্ষার জন্য চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত ৩২৮৩ জনের আসন বিন্যাস পরিকল্পনা জেলা পরিষদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলেও রাতারাতি অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে ৩২৯৩জনের আরেকটি আসন বিন্যাস প্রকাশ করা হয়। একই তারিখে   সারাদেশে জাতীয় নিবন্ধন পরিক্ষা থাকায় জেলা পরিষদের নিকট শিক্ষক নিয়োগ পরিক্ষার তারিখ পরিবর্তনের জন্য একাধিকবার আবেদন করা হলেও যড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১৩৫২জন উচ্চ শিক্ষিত মেধাবী প্রার্থীকে বাহিরে রেখে পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বাদ পড়াদের বেশির ভাগই ছিল বাঙালি। নিয়োগ বাণিজ্যকে সমৃদ্ধ করার জন্য অনেকটা তাড়াহুড়ো করেই ফলাফল প্রকাশ করে জেলা পরিষদ। অনেকটা অবিশ্বাস্য ভাবে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র ফাঁস করে ৮০ নম্বরের পরিক্ষায় গনহারে ৭৩ নম্বর পেয়েছে অসংখ্য উপজাতি প্রার্থী। নিয়মানুসারে মৌখিক পরিক্ষায় সর্বনিম্ন ৩ (তিন) জন প্রার্থী থাকার বিধান থাকলেও ফলাফল প্রকাশে এটি মানা হয়নি। এই সকল কাজকর্মে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি যেমন  প্রশ্নবিদ্ধ , সার্বিক ভাবে পার্বত্য বাঙালিদের বাদ দিয়ে উপজাতিদের একচেটিয়া সুযোগ সুবিধা বিধানের প্রয়াস মাত্র এটি। এ ধরনের ঘটনাকে জাতিগত বিদ্বেষী বলে নিন্দা জানানো হয়, সাংবাদিক সম্মেলনে।

সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, দীর্ঘদিন যাবত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ একচেটিয়া উপজাতিদের সার্বিক নিয়োগ, উপবৃত্তিসহ শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে লাগামহীন বৈষম্য করে আসছে। বৈষম্যের শিকার পিছিয়ে পড়া জাতির জন্য দুঃখজনক।

তবে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বাঙালি ছাত্র পরিষদের সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্বচ্ছাতার সাথে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে। কোন ধরনের অনিয়ম হচ্ছে না। তিনি আইন ও বিধি মেনে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ হস্তান্তরিক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগসহ সব বিভাগে নিয়োগ দিচ্ছে। এখানে কোন ধরনের অনিয়ম হচ্ছে না। একটি মহল নিয়োগ পক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার  জন্য নানা ষড়যন্ত্র করছে। পরীক্ষায় কোন ধরনের প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নিয়োগ বাণিজ্য হচ্ছে না বলেও তিনি দাবি করেন।

আসন বিন্যাস প্রসঙ্গে জেলা পরিষদের একটি সূত্র জানায়, নিয়োগের লিখিত পরিক্ষার জন্য চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত ৩২৮৩জন হলেও বাছাইয়ে বাদ যাওয়া অপর ১০জনের  আবেদন যাচাই-বাছাই করে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন