খাগড়াছড়িতে জুয়ার আসর ও মাদকের ছোবল

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:

খাগড়াছড়ি শহরের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত চলছে জুয়ার আসর। প্রতিটি জুয়ার আসরের পেছনে রয়েছে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়া। এলাকা ভিত্তিক জুয়ার আসর বসায় বাড়ছে সামাজিক অপরাধ। প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি না হলেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সুশীল সমাজে। সে সাথে শহর ছেয়ে গেছে মাদকে। হাত বাড়ালে এখন মিলে ইয়াবা ও গাঁজা।

গত বছর মাঝামাঝি পর্যন্ত খাগড়াছড়ি শহরের পুলিশের জুয়া ও মাদক বিরোধ অভিযান এবং এদের আটকের ঘটনা ঘটলেও এখন তেমন কোন অভিযান চোখে পড়ছে না। ফলে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

তথ্যানুসন্ধানে খাগড়াছড়ি পৌর শহরের ৯নং ওয়ার্ডের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকায় কয়েকটি জুয়ার আসরের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ওই এলাকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসত বাড়ি, পরিত্যক্ত বাড়ি ও খোলা জায়গায় দিনরাত চলছে জুয়ার আসর। এলাকার বেশ কিছু যুবক ও বহিরাগতরা মিলে এসব জুয়ার আসর নিয়ন্ত্রণ করছে। জুয়ার বোর্ড নিয়ন্ত্রকদের রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিচয়ও। এতে করে তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ কিংবা প্রতিবাদ করার সাহস করে না।

একই অবস্থা জেলা শহরের অন্যান্য এলাকার। শ্রেণি ভেদে বিভিন্ন ক্লাব, পেশাজীবী সংগঠন, আবাসিক হোটেলসহ সুবিধাজনক স্থানে চলছে জুয়ার রমরমা আসর। জুয়ার আসরগুলোকে কেন্দ্র করে বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা ও গাঁজা। এ সবে আসক্ত হচ্ছে যুব সমাজ।

নাম না প্রকাশের অনুরোধে একজন জানান, তার এক প্রতিবেশী প্রতিদিন জুয়া খেলে। মাঝে মধ্যে টাকার জন্য স্ত্রীকে মারধর করে। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তাদের সংসার এখন বিচ্ছেদের অবস্থা।

বটতলী এলাকার কালা চাঁদ মারমা বলেন, টিটিসি(কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র) এলাকার পরে বিলের মাঝখানে প্রতিদিন জুয়ার আসর চলে। লোকজন বেশি হলে কখনও কখনও বিলের মধ্যে তারা আসর বসিয়ে দিচ্ছে। এতে করে যুব সমাজ বিপথে যাওয়ার প্রবণতা যেমন বাড়ছে তেমন বাড়ছে সামাজিক অপরাধ।

২০১৭ সালের জুলাই পর্যন্ত খাগড়াছড়ি শহরে প্রায় প্রতিদিন পুলিশের জুয়া ও মাদক বিরোধী অভিযান হয়েছে। দফায় দফায় উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ  হেরোইন ও গাঁজা। আটকও হয়েছে অনেক মাদক ব্যবসায়ী। কিন্তু গত ছয় মাস ধরে তেমন অভিযান চোখে পড়ছে। ফলে জুয়ারী ও মাদক ব্যবসায়ীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

জুয়ার ও মাদকের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ, বহুবিবাহ প্রবণতা, পারিবারিক কলহের মতো সামাজিক অপরাধ। এসব অপরাধ নির্মূলে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে আরও কার্যকরি ভূমিকা রাখার আহ্বান সুশীল সমাজের।

জুয়া খেলতে বাধা দেয়ায় খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার হাফছড়িতে গতবছরের ২৩ অক্টোবর ওড়না পেছিয়ে স্ত্রীকে হত্যা করে পাষণ্ড এক স্বামী।

খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) তারেক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বলেন, মাদক ও জোয়ার ব্যাপারে কোন ছাড় নেই। প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন