খাগড়াছড়িতে গাওয়ালে এসেছে বেদেরা, বসতি গড়তে নয়

pic

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ॥
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় ভ্রাম্যমান ‘বেদে’ সম্প্রদায়ের অস্থায়ী বসতি গড়েছে। বেদেরা সাধারণভাবে বাদিয়া বা বাইদ্যা নামে পরিচিত একটি ভ্রাম্যমান জনগোষ্ঠী। ভারতের আসম থেকে বাংলাদেশে এসেছে তারা। ঢাকার সাভারে এদের প্রায় লক্ষ্যাধিক পরিবার বাস করে।

বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় ঢাকা থেকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। বেদে নামটি অবজ্ঞাসূচক ‘বাইদ্যা’, ‘বদ্যি’ (হাতুড়ে ডাক্তার), পরিমার্জিত ‘বৈদ্য’ (চিকিৎসক) থেকে উদ্ভূত। অধিকাংশ বেদেই সনাতনি চিকিৎসা পেশার সাথে সম্পৃক্ত। এদের গাত্রবর্ণ ও আকৃতি বাঙালিদের মতোই, কথাও বাংলায় বলে।

এ বছর চট্টগ্রাম জেলার মিরেশ্বরাই উপজেলার সোনা পাহাড় এলাকা থেকে খাগড়াছড়িতে এসেছেন এই বেদেরা।বেদে সম্প্রদায়ের লিডার বা দলনেতা মো. সুমন মিঞার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, তারা সাধারণত বেদে সম্প্রদায় নামে পরিচিতি। অনেকে আবার তাদেরকে বলে যাযাবর অর্থাৎ ভাসমান জনগোষ্ঠী বলেন। বেদের কোন স্থায়ী ঠিকানা নেই, নেই কোন স্থায়ী বসবাস। তাদের সংস্কৃতিতেই এটা নেই। ফলে নির্দিষ্ট স্থানে বসতি স্থাপন করে থাকতে তারা পছন্দ করেন না। স্বাভাবিক কারণে মাস খানেকের মধ্যেই খাগড়াছড়ি ছেলে চলে যাবেন অন্যত্র, অন্য ঠিকানায়।

pic 3

সুমন মিঞা আরো জানান, বছরের অধিকাংশ সময়, বিশেষ করে ফসল তোলার মৌসুমে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে তারা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিভ্রমণ করে থাকে। বিশেষ করে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান তিন পার্বত্য অঞ্চলসহ ফেনী, নোয়াখালী বছরে ১ বার করে প্রত্যেকটি জেলায় ১০-১২ দিন করে পরিভ্রমন করে থাকেন। এই পরিভ্রমণকে বেদেরা নিজেদের ভাষায় ‘গাওয়াল’ বলে।

তারই ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় বেদেদের এবার আসা। খাগড়াছড়িতে তারা মোট ৩০টি পরিবার এসেছে। এর মধ্যে ১৩ টি পরিবারের নারী-পুরুষমিলে ৪৮ জন বর্তমানে জেলা শহরের বাস ট্রার্মিনালস্থ এলাকায় অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে। দিনে তারা গাওয়ালে সকালে বের হয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিকেলে ফিরে আসে। গাওয়ালে এরা হেঁটেই যায়। মহিলারাই বেশি গাওয়ালে যায়। তাদের সাথে থাকে সাপের ঝাঁপি বা গাছড়াছড়ার ঔষধের ঝুলি। বেদে মেয়েরা সাপ নিয়ে খেলা দেখায়।

গাওয়ালের সময় এরা স্থানীয়ভাবে মূলত তাঁবু গেড়ে বা কোন সরকারী ঘরের বারান্দায় সপরিবারে থাকে। সাধারণত সমতল ভূমিতে নদী-নালার আশপাশে দলবদ্ধভাবে মাচা তৈরি করে থাকে। গাওয়াল শেষে দলবদ্ধভাবে আবার স্থায়ী ঠিকানায় ফিরে আসে।

এদিকে স্থানীয় উপজাতিদের একটি গ্রুপ প্রচার করছে, বেদেরা সমতল থেকে এসে পার্বত্য জেলায় ভূমি দখল করতে এসেছে । কিন্তু বেদেরা দাবী করেন, তারা কোন ভূমি দখলদার নয়। সমতল থেকে পার্বত্য জেলায় এসেছে ব্যবস্যার উদ্দেশ্যে। এরা প্রতিটি জেলায় ১০-১২ দিন অস্থায়ীভাবে তাঁবু টাঙিয়ে বসবাস করে থেকে আবার চলে যাবে অন্য জেলায় । তাদের ভূমির প্রতি কোন লোভ-লালসা নেই। কোন রকম ডাল ভাত খেয়ে দিন জীবনযাপন করে থাকে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন