‘ক্ষুদ্রজাতির জমি কেড়ে নিতে চলছে যৌন সন্ত্রাস’

kk

বিপ্লব রহমান:

“ ক্ষুদ্রজাতির জমি-জমা কেড়ে নিতে পাহাড়ে ও সমতলে যৌন সহিংসতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করছে ‘কাপেং ফাউন্ডেশন’ ও ‘আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক’ নামের দুটি মানবাধিকার সংস্থা। মঙ্গলবার প্রকাশিত এই সংস্থা দুটির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল এই চার মাসে সারা বাংলাদেশে অন্তত ১৯ জন ক্ষুদ্রজাতির নারী যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে দুজনকে ধর্ষণের পর হত্যা, ১০ জনকে ধর্ষণ, সাতজনকে ধর্ষণের চেষ্টা এবং একজনকে অপহরণ করা হয়েছে। ১৯টি ঘটনার মধ্যে ১৫টি পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং বাকি চারটি সংঘটিত হয়েছে সমতল অঞ্চলে।

এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় মাত্র চার মাসে ক্ষুদ্রজাতির নারীর যৌন হয়রানির এই চিত্র অত্যন্ত উদ্বেগজনক। উপরন্তু পাহাড়ে ক্ষুদ্রজাতির নারী যৌন সন্ত্রাসের শিকার হওয়ার ঘটনায় দোষি ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে, গত কয়েক বছরে এমন একটিও নজির তৈরি হয়নি। সমতলে দু-একটি ঘটনার বিচার হলেও পাহাড়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ যৌন সন্ত্রাসের ঘটনায় অভিযুক্তরা সহজেই ছাড়া পেয়ে যায়। ফলে নতুন যৌন সন্ত্রাসের মাত্রা আরো বাড়ে। প্রসঙ্গত, গতবছর পাহাড়ে ৫৪ জন এবং সমতল অঞ্চলের ১৩ জনসহ সারা দেশে মোট ৬৭ জন ক্ষুদ্রজাতির নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।

মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর চার মাসে ক্ষুদ্রজাতির নারী ও শিশুর ওপর যেসব হয়রানির ঘটনা ঘটেছে, তারমধ্যে ১৭টি স্থানীয় অভিবাসিত বাঙালি এবং দুটি আইন প্রয়োগকারী বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত হয়েছে। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত বেশ কিছু যৌন হয়রানির অপরাধমূলক ঘটনায় মামলা হলেও কয়েকটি ক্ষেত্রে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের কোনো চেষ্টাই করেনি। উপরন্তু যেসব অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা-ও পুলিশের কৃতিত্ব নয়। বিক্ষুব্ধ জনতা হাতেনাতে অভিযুক্তদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করলে, তবেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আবার এসব ঘটনায় পুলিশ মামলা গ্রহণ করলেও অভিযুক্তদের মামলা থেকে রেহাই দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ ছাড়া কখনো দুর্বল অভিযোগ গঠন করায় অভিযুক্ত আসামিরা সহজেই ছাড়া পেয়ে যায়।

এতে বলা হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রশাসনের চাপে চিকিত্সকরা ধর্ষণের আলামত মুছে দিতে ধর্ষিতা ক্ষুদ্রজাতির নারীর মেডিক্যাল পরীক্ষা করতে কালক্ষেপণ করেন। ধর্ষণের উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকাও পরও পাহাড়ে বেশ কয়েকটি ঘটনায় ধর্ষিতার মেডিক্যাল পরীক্ষায় নেতিবাচক ফলাফল দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনের সুপারিশে ক্ষুদ্রজাতির নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে রাষ্ট্রকে তত্পর হওয়া, ঘটনার শিকার নারী ও শিশুদের সরকারি উদ্যোগে চিকিত্সা এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়া, রোডম্যাপ ঘোষণা করে পার্বত্য শান্তি চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বেসামরিকীকরণ, ভূমির বিরোধ মেটাতে ভূমি কমিশনকে দ্রুত সক্রিয় করা ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়।”

সূত্র: কালেরকণ্ঠ, ১৩ মে, ২০১৪।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন