কক্সবাজারে বখাটেদের নির্যাতনে কলেজ ছাত্রের আত্মহত্যা

fec-image

আত্মহত্যা

কক্সবাজার প্রতিনিধি:
কক্সবাজার বাসটার্মিনালস্থ লারপাড়ায় বখাটের নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে সাজ্জাদ হোসেন (১৮) নামে এক কলেজ ছাত্র। শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সে কক্সবাজার হার্ভাড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক শাখার ছাত্র। তার গ্রামের বাড়ি কুতুবদিয়া। চাচার সাথে লারপাড়ার ছালেহ আহমদের বাসায় ভাড়া থাকতো। পুলিশ নিহত সাজ্জাদের লাশ উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় সাজ্জাদের প্রেমিকা ও রুমমেট চাচাকে জিজ্ঞাসবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, সাজ্জাদের সাথে পূর্ব লারপাড়ার রিয়া নামের রিয়া এক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটি কক্সবাজার টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী। চাচাসহ অন্য রুমমেটদের অনুপস্থিতিতে মাঝে-মধ্যে প্রেমিক সাজ্জাদের সাথে তার বাসায় দেখা করতে আসতো প্রেমিকা রিয়া। শনিবারও সকাল ১০টার দিকে মেয়েটি সাজ্জাদের বাসায় আসে। কিন্ত সেখানে আগে ওৎপেতে ছিল স্থানীয় ১০/১২ জন বখাটে ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সাজ্জাদ ও রিয়াকে জিম্মি করে টাকায় আদায়।

পরিকল্পনা মোতাবেক রিয়া সাজ্জাদের রুমে প্রবেশ করা মাত্রই ওই বখাটেরা বাইর থেকে রুমের দরজায় তালা দিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে তারা প্রেমিকজুটিকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দেয়ায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দু’জনকে আটকে রাখে বখাটেরা। এঘটনা জানাজানি হলে এলাকার লোক সারাদিন ভিড় জমায় সেখানে। এই সময়ে প্রেমিকজুটিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে বখাটেরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাজ্জাদের এক রুমমেট জানান, চাচা রুবায়েতসহ অন্য রুমমেটরা সকালে যার যার কাজে চলে যায়। দুপুরে বাসায় ফিরে তারা সাজ্জাদ ও তার প্রেমিকা রিয়া আটকে রাখার দৃশ্যটি দেখতে পান। এসময় সাজ্জাদ রুমমেটদের জানিয়েছেন, বখাটেরা ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে তাকে ব্যাপক মারধর করেছেন। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্নও দেখেছেন রুমমেটরা।

পুলিশের হাতে আটক সাজ্জাদের চাচা কক্সবাজার কলেজের অনার্স ৩য় বষের্য়র ছাত্র রুবায়েত জানিয়েছেন, দুপুরে বাসায় ফিরে তিনি আর বের হননি। তিনি তালাবদ্ধ সাজ্জাদ ও রিয়ার সাথে রাতে ছিলেন রাত পর্যন্ত। এসময় বখাটেরা ছুরি নিয়ে চারিদিক থেকে ঘিরে থাকেন।

তিনি বলেন, ‘রাত ৮টার দিকে প্রশ্রাবের কথা বলে সাজ্জাদ বাথরুমে যায়। কিন্তু বাথরুমে ঢুকে অনেক্ষণ ধরে বের হয় না সে। কোন সাড়া-শব্দও পাওয়া যাচ্ছে না। বাথরুমের দরজা ঠেলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। শেষে বখাটেরাসহ এসে ধাক্কা দিয়ে বাথরুমের দরজা ভেঙে দেখা যায় বাথরুমের চালার গাছের সাথে গামছায় ঝুলে আছে সাজ্জাদ। এই দৃশ্য দেখার সাথে সাথে সব বখাটে পালিয়ে যায়। এরপর রুবায়েত পুলিশকে খবর দেন।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী জানান, খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এসময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চাচা রুবায়েত ও প্রেমিকা রিয়াকে আটক করা হয়। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।

বখাটে কারা?: প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বখাটেদের মধ্যে ছিলো, লারপাড়ার আবদু শুক্কুরের পুত্র হারুন, আবুল হোসেন ড্রাইভারের পুত্র মামুন, চৌকিদার মুছা আলীর পুত্র আবদুল গণি, ধলামিয়ার পুত্র রুবেল, দিল মোহাম্মদের পুত্র ইসমাঈল, ফাতেমার পুত্র ফারুক, কবির আহমদের পুত্র ফারুক, গুল হোসেনের পুত্র দেলোয়ার। এরা সবাই এলাকার চিহ্নিত অপরাধী বলে জানা গেছে। অভিযুক্তদের কেও এলাকায় না থাকায় তাদের কারো সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এরা সবাই আবদুল গণি বাহিনী নামে এলাকায় পরিচিতি। তারা পুরো লারপাড়া জুড়ে দাপিয়ে বেড়ায়। সাধারণ মানুষকে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়, ইয়াবা চোরাচালান, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সাথে এরা জড়িত। তাদের গড়ফাদার হিসেবে রয়েছে বাংলাবাজারের শফিউল আলম। সাজ্জাদের মৃত্যুর পর দায়ী বখাটেদের বাঁচাতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে শফিউল আলম। তিনি ঘটনার পরপরই থানায় গিয়ে তদবির শুরু করেছেন। সরকার দলীয় নেতা ব্যবহার করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন এই গডফাদার।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন