কক্সবাজারে ডিসি সাহেবের বলী খেলায় দিদার ও শামসু বলী যৌথ চ্যাম্পিয়ন

ততদগহকব

স্টাফ রিপোর্টার:

কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের আয়োজনে দুইদিনের “ডিসি সাহেবের” ১৪২৩ বঙ্গাব্দের বলিখেলা শনিবার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সমাপনী দিনে যৌথ চ্যাম্পিয়নই হয়েছেন কক্সবাজারের রামু উপজেলার উমখালীর দিদারুল আলম বলী আর উখিয়ার শামসুল আলম বলী। এ বছরের এই খেলাটি ছিল ৬১ তম বলিখেলা।

গ্রামীণ ঐতিহ্যের এই খেলাটিকে ঘিরে মানুষের উচ্ছ্বাস থাকে প্রতিবছরই। এবার কক্সবাজারে ‘ডিসি সাহেবের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা’ পরিধি বেড়ে হয়েছে ৫ দিন। তার মাঝে দুইদিন বলী খেলা। শনিবার সেই বলী খেলার শেষ দিনটাকে স্মরণীয় করে রেখেছেন শামসুল আলম বলীই।

শনিবার বিকাল ৫টা ২৬ মিনিটে যখন এবারের এক নাম্বার মেডেলের খেলাটি শুরু হয়। হাজার হাজার দর্শক চেয়েছিলেন যেন খেলাটি আগের মতো দুই মিনিটের মধ্যে শেষ না হয়ে যায়। শামসু বলী দুই মিনিটের মাথায় দিদার বলীকে তুলে আছাড় দিতে চাইছেল। কোমর পর্যন্ত তুললেনও। কিন্তু অভিজ্ঞ দিদার নিজেকে সামলে নিলেন।

তারপর থেকে দীর্ঘ প্রতীক্ষা। শুরুর ৪ মিনিটের মাথায় পুরো গ্যালারিতে দর্শকদের উত্তেজনা ছড়িয়ে দুই বলী নিজেদের ছাড়িয়ে নিয়ে কয়েক মিনিটের জন্য বিশ্রামে চলে যান। তখন মাঠ ও দর্শক গ্যালারিতে চরম উত্তেজনা আর ফিসফাস। এই উত্তেজনা শেষ না হতেই ‘মুসল্লা’রা আবারও দুই বলীকে মাঠে নিয়ে এলেন। এই খেলায় আর যেন কোন উত্তেজনা নেই। একজন আরেকজন হাত ধরে বসে আছেন তো আছেনই। তেমন কোন নড়চড় নেই, কাউকে হারানোর যেন আগ্রহও নেই। মাঠের মাইকে ঘোষক বারবার ঘোষণা দিচ্ছিল, ‘যৌথ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ নেই। কাউকে না কাউকে ফেলতেই হবে।’

দ্বিতীয়বার খেলা শুরু হওয়ার ২০ মিনিটের মাথায় হঠাৎ করেই শামসু বলীর কোমর হাতে পেয়ে যান দিদার বলী। আবারও মাঠের বাইরে উত্তেজনা, ‘এবার তো শামসু বলীর রেহাই নেই!’ আদতে হলোও তাই। সেই যে শামসু বলীর কোমর পেচিয়ে ধরলেন, আর ছাড়লেন না অভিজ্ঞ দিদার। বার দুয়েক কোমর ধরে শামসু বলীকে তোলারও চেষ্টা করলেন। কিন্তু পারলেন না। শামসু বলী যেন ব্যঙের মতোই বসে রইলেন। বিকেল ৫টা ৫৪ মিনিট। মুসল্লারা আর সময় দিলেন না। খেলা শেষ করে দিলেন। আর তাদের সিদ্ধান্তে ঘোষণা আসলো, দিদার আর শামসু যৌথ চ্যাম্পিয়ন।

এক নাম্বার মেডেলের খেলার আগে দুই নাম্বার ও তিন নাম্বার মেডেলের খেলাও হয়েছে। কক্সবাজারেরই অন্তত ৩০ হাজার মানুষ এবার খেলা দেখেছেন, কিন্তু সেই দেখাতে কোন উত্তেজনা ছিল না। উত্তেজনা তো কেবল এক নাম্বারকে ঘিরেই।

এবার দুই নাম্বার মেডেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন চকরিয়া মালুমঘাট এলাকার আরেক তরুণ তারেক বলী। তিনি হারালেন মহেশখালীর বজল আহমদকে। এই তারেক একই দিনে ‘বাছাই’ পর্বের নামে আরও দুইজনকে চমৎকার ভাবে হারিয়ে দুই নাম্বার মেডেলের ফাইনালে উঠে আসেন । আর তিন নাম্বার মেডেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন শাহাব উদ্দিন। তিনি হারিয়েছেন ভুলু বলীকে।

প্রতিবারের মতো দর্শকদের একটু আনন্দ দিতে দুইজন ‘নারী বলী’কে মাঠে নামানো হয়েছিল। তারা আসলে বলী নন, ওই দুই নারী মূলতঃ তাইকোয়ান্ডো খেলোয়াড়। দুই নারী মাঠে নামতেই দর্শকদের শত শত মোবাইল ক্যামেরার চোখ শুধুই তাদের উপর নিবদ্ধ হয়ে গেল। দুই মিনিটের মতো চলা তাদের ‘বলী’ খেলায় একজন আরেকজন ফেললেন, তবে সেই ফেলার মধ্যে আক্রোশ ছিল না! ছিল বন্ধুত্বের আয়োজন।

খেলা শেষে প্রধান অথিতি কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, বিশেষ অথিতি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোঃ আলী হোসেনসহ প্রশাসনের অন্য কর্তা ব্যক্তিরা বিজয়ী বলিদের হাতে ট্রপি ও নগদ টাকা তুলেদেন।

এবারের ডিসি সাহেবের ৬১তম বলী খেলার স্পন্সর করেছেন মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন