উখিয়ার মরিচ্যা উচ্চ বিদ্যালয় ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও আর্থিক কেলেংকারীতে নিমজ্জিত: তদন্তের দাবি
উখিয়া প্রতিনিধি:
উখিয়ার মরিচ্যাপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে ব্যাপক অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলামের আর্থিক কেলেঙ্কারীর ঘটনায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক, সচেতন অভিভাবকদের মাঝে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি সহ নানা অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। দূর্নীতি ও আর্থিক কেলেঙ্কারীর ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসক ও দুদকের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনকে অবজ্ঞা ও জৈষ্ঠতা লংঘন করে মো. নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পরিবেশ বিঘ্নসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির প্রতিকার চেয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য ও শিক্ষকগণ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে বলে জানিয়েছেন পরিচালনা কমিটির সদস্য পরিমল বড়ুয়া।
শুধু তাই নয় সিনিয়র সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক না করে গোপন আতাতের মাধ্যমে বয়সে কম সদ্য চাকুরীতে যোগদানকৃত সহকারী শিক্ষক মো. নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ অবৈধ চ্যালেঞ্জ করে কক্সবাজার আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। যার মামলা নং- অপর-৫৫/২০১৭।
বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে এনে প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। মামলাটির বাদী হয়েছেন সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মৌলভী নুরুল হক আনসারী। উক্ত মামলাতে উল্লেখ করা হয় নিয়মিত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালীন কিংবা নিয়োগ চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত সিনিয়র সহকারী শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের জৈষ্ঠ শিক্ষক নুরুল হক আনসারী, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পাওয়ার কথা।
কিন্ত পরিচালনা কমিটির সভাপতি গত ০৯ আগস্ট, ২০১৫ ইং তারিখ অবৈধ ভাবে সভা আহ্বানের মাধ্যমে কমবয়সী শিক্ষক মো. নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করে। এই নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে নানা অসন্তোষসহ মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এমনকি পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষক অভিভাবকদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ সৃষ্টি হয়।
পরিচালনা কমিটির সদস্য মির্জা জহির রায়হান অভিযোগ করে বলেন নিয়ম লংঘন করে নিয়োগ পাওয়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম দীর্ঘ ১ বছর ১১ মাস দায়িত্ব পালন কালে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। বিদ্যালয়ের হালনাগাদ আয়-ব্যয় হিসাব নিরক্ষণের জন্য একাধিকবার নোটিশ পাঠালেও তিনি অবজ্ঞা করে নোটিশ গ্রহন কিংবা স্বাক্ষর দেয়নি । পরবর্তীতে সদস্যদের চাপের মুখে ২ কিস্তিতে শুধু মাত্র ৬ মাসের হিসাব নিরক্ষণ করার সুযোগ দিয়েছেন।
মহিলা অভিভাবক প্রতিনিধি কহিনুর ইসলাম ও মো. আলম মেম্বার অভিযোগ করে জানান বিদ্যালয়ের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রমে বিকেন্দ্রীকরণ না থাকায় একাডেমিক ও সহপাঠ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুচারু রুপে সম্পাদন হচ্ছে না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রভাব খাটিয়ে তিনি নিজেই এখতিয়ার বর্হিভুত কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধি ও সিনিয়র সহকারী শিক্ষক নুরুল হক আনসারী সাংবাদিকদের জানান, সাবেক প্রধান শিক্ষক সৈয়দুল আলম চৌধুরী ৪ বছর ৪ মাস দায়িত্ব পালন করে কোন হিসাব বুঝিয়ে না দিয়ে ১৩ নভেম্বর, ২০১৪ ইং তারিখ পদত্যাগ করেন। সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাবু শাক্য সেন বড়ুয়া ১ বছর ৮ মাস দায়িত্ব পালন করে তিনিও হিসাব না দিয়ে ৮ আগস্ট, ২০১৫ ইং তারিখ অবসর গ্রহণ করেন। সেই থেকে ৮ বছর পর্যন্ত মরিচ্যাপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের আয়-ব্যায় হিসাব খেয়াল খুশি মতো পরিচালিত হয়ে আসার কারণে বর্তমান সময়ে বিদ্যালয়ের তহবিলে কোন অর্থ জমা নেই।
পরিচালনা কমিটির সভায় এব্যাপারে একাধিকবার আলোচনা হলেও রহস্য জনক কারণে সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নাই। বলতে গেলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম হুংকার, হুমকি এবং ইচ্ছা মত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার কারণে পুরো শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
এব্যপারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও মোবাইল সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।