আলোচিত সাংসদ বদি কারাগারে: মুক্তির দাবিতে পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত আ’লীগ

mp-bodi-2-copy

উখিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজার জেলার উখিয়া-টেকনাফের সাংসদ আবদুর রহমান বদিকে নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়তে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা। ‘শ্যাম রাখি নাকি কূল রাখি’ অবস্থায় পড়েছে উখিয়া-টেকনাফ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও বদির পক্ষের আওয়ামী লীগের লোকজন বিভিন্ন জনসভায় নিরব আওয়ামী লীগ নেতাদের  হুমকি প্রদান করায় ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে  ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। উখিয়া-টেকনাফে সুবিধাবাদী কিছু আওয়ামী লীগ নেতা ছাড়া ত্যাগী নেতাকর্মীরা বদির মুক্তি আন্দোলনে মাঠে নেই বললেই চলে।

একাধিক আওয়ামী লীগ ত্যাগী নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাংসদ আবদুর রহমান বদি জন্ম মূলত বিএনপি পরিবারের। তার পিতা মরহুম এজাহার মিয়া কোম্পানী বিএনপির রাজনীতির সাথে দলের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তিনি বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী হিসাবে একাধিকবার টেকনাফ সদর ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিল। শুধু তাই নয়, জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরীকে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে সব সময়ই মরহুম এজাহার মিয়া কোম্পানীর ভূমিকা ছিলো গুরুত্বপূর্ণ। মরহুম এজাহার মিয়া কোম্পানীর প্রথম পুত্র আবদুর রহমান বদি ১৯৯৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারীর সংসদ নির্বাচনে হঠাৎ করে বিএনপির মনোনয়ন লাভ করে চমক সৃষ্টি করেন। তখন বিএনপির প্রবীন নেতা সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী তাৎক্ষনিক কেন্দ্রীয় কমিটির  হাই কমান্ডের নিকট তদবির শুরু করে। আবদুর রহমান বদির দলীয় মনোনয়ন বাতিল করার জন্য।  শাহজাহান চৌধুরী সেই তদবির সফল হয়। অর্থাৎ নব্য বিএনপি নেতা আবদুর রহমান বদিকে বাদ দিয়ে পুন:রায় শাহজাহান চৌধুরীকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রদান করেন। বিএনপির হাই ফোরাম কর্তৃক মনোনয়ন দিয়ে কেড়ে নেওয়ার ক্ষোভে আবদুর রহমান বদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে তৎকালীন ধানের শীষের প্রার্থী  শাহজাহান চৌধুরীর বিরুদ্ধে। উক্ত নির্বাচনে শাহজাহান চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন বদি।

জানা যায়, উক্ত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ গ্রহণ করেনি। পরে আবদুর রহমান বদি বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আবদুর রহমান বদি প্রথম বারে মতো আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন। সেই নির্বাচনে প্রথম বারের মত উখিয়া-টেকনাফ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় বদি। এরপর থেকে শুরু হয় উখিয়া টেকনাফে আবদুর রহমান বদির রাজত্ব। একের পর এক জন্ম দিতে থাকে বির্তকৃত কর্মকাণ্ড। যার ফলে বিভিন্ন সময়ে আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে ২২টি মামলা হয়। মামলা গুলো রাজনৈতিক মামলা হিসাবে প্রত্যহার করে নেন বর্তমান সরকার। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে শাহজাহান চৌধুরীর কর্তৃক বিএনপির দল দলীয় মনোনয়ন কেড়ে নেওয়ার আবদুর রহমান বদি মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে থাকে দাউদাউ করে। উক্ত প্রতিশোধ নেয়ার সুবর্ণ সুযোগ মনে করে এরই  মধ্যে সুচতুর বদি বিয়ে করেন জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও শাহজাহান চৌধূরীর পরিবারের চরম প্রতিপক্ষ নুরুল ইসলাম চৌধুরীর প্রকাশ ‘ঠাণ্ডা মিয়া’ চৌধুরীর মেয়েকে।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম চৌধুরী পরিবার শাহজাহান চৌধুরী পরিবারের চির রাজনৈতিক শত্রু ছিল। বদি এমপি থাকাকালীন সময়ে ইয়াবা পাচার, জঙ্গী গোষ্ঠিকে মদদদান,মানব পাচার, সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের মারধর,দলীয় নেতা কর্মীদের নাজেহার, বিএনপি-জামায়াত নেতাদের প্রতি নমনীয় মনোভাব ও রাজনৈতিক সুযোগ সুবিধা দেওয়া ও নারী কেলেংকারীসহ বিভিন্ন অভিযোগ  রয়েছে। কিন্তু বদির ক্ষমতা ও অর্থের কারনে তার কিছুই হয়নি এতদিন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আবদুর রহমান বদি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে ২য় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহা ইয়াহিয়াকে পরাজিত করে। নির্বাচন কমিশনের নিকট নির্বাচনের হলফ নামায়  দায়ের করা হিসাবে তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদুক কর্তৃক মামলা দায়ের করে।

উক্ত মামলায় গত ২ নভেম্বর আদালত সাংসদ বদিকে ৩ বছরের সাজা প্রদান ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে জেলহাজতে প্রেরন করে। সাংসদ বদিকে আদালত কর্তৃক জেল হাজতে পাঠানোর পর তার কাছ থেকে সুবিধা আদায়কারী কিছু আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের গুটিকয়েক নেতাকর্মী বদির মুক্তির দাবীতে মিছিল মিটিং করলেও উখিয়া-টেকনাফ আওয়ামী লীগের সিংহভাগ ত্যাগী ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মী নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তাদের দাবী সাংসদ বদি নামে আওয়ামী লীগের সাংসদ,কাজে তিনি আওয়ামী লীগ বিদ্বেষী ও বিতর্কিত ব্যক্তি। সাংসদ বদির পক্ষে টেকনাফে পরিবারের লোকজন ও উখিয়ায় শাশুড় পরিবারের লোকজন তার মুক্তির দাবীতে মিছিল মিটিং করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষনে দলীয় বেশীরভাগ নেতাকর্মীরা নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এদিকে বদির মুক্তির দাবীতে অনুষ্ঠিত মিছিল মিটিং অংশ না নেওয়া আওয়ামী লীগে নেতা কর্মীদের আগামীতে দেখে নেওয়ার হুমকী প্রদান করে যাচ্ছে সভার বক্তারা।

অন্যদিকে মরিচ্যা বাজার ও উখিয়া স্টেশনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জনসভায় জামায়াত নেতাদের বক্তব্য রাখাসহ অন্যান্য বিষয়ে বিবক্ত হয়ে পড়েছে উখিয়া টেকনাফ আওয়ামীলীগ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীগণ। এসব দেখে মনে হচ্ছে বদির জন্য জামায়াতের বোবা কান্নার রহস্য কি? সাংসদ বদিকে নিয়ে উখিয়া-টেকনাফ আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি ব্যাপক আকার ধারন করা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বৃহত্তর ছাত্র রাজনীতি সংগঠন ছাত্রলীগ সংগঠন জেলা কমিটি থেকে শুরু করে দু’উপজেলায় একেবারে নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের গুটি কয়েক নেতাকর্মী সভা সমাবেশে গেলেও অনেকেই নিরব রয়েছে বদির মুক্তি আন্দোলনে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন