আলুটিলা সড়ক দুর্ঘটনা : এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হলো না মহালছড়ির উচনু ও অংক্যচিং মারমার
এম. সাইফুর রহমান
স্বপ্ন ছিলো উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে সরকারী বড় কোন কর্মকর্তা হয়ে দেশের জন্য কাজ করা। সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না খাগড়াছড়ি’র মহালছড়ি উপজেলার উচনু আর অংক্যচিং মারমার। শিক্ষা জীবনের প্রথম ধাপ পার না হতে অকালেই ঝরে গেলো দুই মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রাণ। সেই সাথে মা-বাবার বুক খালি করে ঘাতক ট্রাক কেড়ে নিয়েছে তাদের অনাগত স্বপ্নকে।
গত ৩ ফেব্রুয়ারী খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন এলাকায় অবস্থিত আলোক নবগ্রহ ধাতুচৈত্য বৌদ্ধ বিহারে প্রয়াত ভদন্ত চন্দ্রমনি মহাস্থবিরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ গিয়ে ট্রাকের চাপায় পড়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলো তারা। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে ৭জন সহ নারী-শিশু মিলে মোট আট জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ১৫জন।
মহালছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত চৌংড়াছড়ি গ্রামের মংক্র মারমার ছেলে অংক্যচিং মারমা ও চরাপ্রু মারমার ছেলে উচনু মারমা। দুজনেই ছিলো ভালো বন্ধু, একই সাথে মহালছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়াশোনা করতো।
কথায় আছে “বন্ধু তুমি একলা হলে আমায় দিও ডাক, হাতের মুঠোয় জোসনা পেলে আমায় দিও ভাগ”
বন্ধুত্বের টান আকাশ সমান, তাইতো মেলায় যাওয়াটাও ঠিক হলো একসাথে। কিন্তু কে জানতো এক সাথেই লাশ হয়ে পাড়ি জমাবে না ফেরার দেশে। এসএসসি পরীক্ষায় বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা দিয়ে আর দুটি প্রাণ চিরতরে বিদায় নিলো জীবনের সকল পরীক্ষা থেকে।
তাদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে চৌংড়াছড়ি গ্রাম ও মহালছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শিক্ষার্থী-শিক্ষক মিলে নিহত ছাত্রদের বাড়িতে গিয়ে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় সহপার্টিদের অশ্রুশিক্ত নয়নে তাদের সৎকার সম্পন্ন হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবী ঘাটক ট্রাক চালকের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়, ভবিষ্যতে যেন আর কোন মেধবী মুখ এ ভাবে ঝরে না যায়।
মহালছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিপুল বিকাশ খীসা জানান, আলুটিলার ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। যে দুই ছাত্র নিহত হয়েছে তারা অত্যন্ত মেধাবী শান্ত ও অনুগত ছিলো। এ ধরণের দুর্ঘটনা সহজে মেনে নেওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার। নিহত ছাত্রদের আত্মার শান্তি কামনার্থে বিদ্যালয়ে ধর্মীয়ভাবে কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।