আলীকদম-থানচি সড়ক অবৈধ কাঠ পাচারের নিরাপদ রুট

Untitled-2

মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান):

বান্দরবান পার্বত্য জেলায় নির্মাণাধীন আলীকদম-থানচি সড়ক অবৈধ কাঠ পাচারের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই চলাচল করছে কাঠবোঝাই ভারি যানবাহন। এরফলে সড়কের নির্মাণ কাজের ব্যাঘাত ছাড়াও নির্মিত সড়কের কার্পেটিং ভেঙ্গে চুরমার হচ্ছে। অপরদিকে, ১৩ থেকে ২৪ কিলোমিটার পর্যন্ত নির্মিতব্য এ সড়কের দু’পাশে সরকারী খাস বনাঞ্চল থেকে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে গাছ। সড়ক নির্মাণ কাজ তদারকি করছে সেনা বাহিনীর ১৭ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন (ইসিবি)।

আলীকদম-থানচি সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, কাঠ চোরেরা নির্বিচারে উজাড় করছে রাস্তার দু’পাশের বনভূমি। মাঝে মধ্যে কাঠ পাচাররোধে সেনা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করলেও বনবিভাগ থাকে কুম্ভকর্ণের ভূমিকায়। তবে তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বন বিভাগ অবৈধ গাছ কাটা ও পাচারে সজাগ রয়েছে। তারপরও কেউ অবৈধভাবে গাছ কাটলে আইনের আওতায় আনা হবে। গত সপ্তাহে লামা বন বিভাগ প্রায় ৮’শ ঘনফুট (২৬২ টুকরা রদ্দা) জব্দ করেছে। ১নং আলীকদম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন বলেন, মাংগু, তৈনফা ও চাইম্প্রা মৌজায় জোতের আড়ালে যেভাবে বনভূমিতে ধ্বংসযজ্ঞ হচ্ছে অচিরেই ওইসব এলাকা মরুভূমি হয়ে যাবে। নির্মাণাধীন আলীকদম-থানচি সড়কের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে সড়ক নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে অবৈধ কাঠ পরিবহন বন্ধ করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

স্থানীয় উপজাতীয় নেতা চাহা মং মার্মা বলেন, সেনা বাহিনীর অভিযানে কাঠ আটক হলেও বন বিভাগ এ ধরণের অভিযান পরিচালনা করে না। বিষয়টি রহস্যজনক। সেনা বাহিনী দ্বারা জব্দকৃত কাঠগুলি প্রকাশ্যে নিলাম দেয়না বন বিভাগ। যাদের দ্বারাই অবৈধভাবে গাছ কাটা হয়ে থাকে নিলামে তাদের হাতেই তুলে দেওয়া হয় ওইসব কাঠ। ফলে নিলামে পাওয়া কাঠ পরিবহনের অজুহাতে আরো শত শত ফুট অবৈধ কাঠ পরিবহন করা হয়। কিন্তু এসব অবৈধ কাঠ পরিবহনে ইস্যু করা হয় তথাকথিত ‘নিলামের কাঠ’ পরিবহনের কাগজপত্র। স্থানীয় পাড়া কার্বারী চাহা মুরুং বলেন, নির্মাণাধীন এ সড়কের দু’পাশের জায়গাগুলি সরকারী খাস বনভূমি। তবে স্থানীয় মুরুংরা যুগ যুগ ধরে এসব বনের ভোগ দখলে রয়েছে। ইদানীং কতিপয় কাঠ চোর নানা কৌশলে মূল্যবান গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

একই অভিযোগ করলেন আদু কার্বারী পাড়ার মেনপয় মুরুং ও তংপং মুরুং। তারা বলেন, শত শত শ্রমিক গাছ কাটছে। বাধা দিলে তারা মানে না। শ্রমিকরা দলবদ্ধ থাকায় স্থানীয়রা ভয় পান। তারা আরো বলেন, চকরিয়ার আজিম চেয়ারম্যান, রুহুল আমিন ও স্থানীয় ছেনোয়ারা বেগমসহ অনেকে জোতের নাম দিয়ে গাছ কাটতে শ্রমিক নিয়োগ করেছে। স্থানীয় নিয়াদুই মুরুং বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে সেনা বাহিনী এ সড়কের ১৮ কিলোমিটার এলাকায় ৮শ’ ঘনফুট অবৈধ কাঠ জব্দ করে বন বিভাগকে হস্তান্তর করে। জব্দকৃত এই ৮শ’ ঘনফুট কাঠ পরিবহনের নামে জনৈক আজিম চেয়ারম্যানের লোকজন এখনো পর্যন্ত কাঠ পরিবহন করে চলেছে। তার প্রশ্ন ৮শ’ ঘনফুট কাঠ পরিবহনের কতদিন সময় লাগে?

সরেজমিন দেখা যায়, সড়কের ১৮ হতে ২৪ কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তার পাশের জঙ্গলে পড়ে আছে শত শত ঘনফুট মূল্যবান প্রজাতির কাঠের রদ্দা। রাস্তার পাশের খাস জমি গত ৫/৬ বছর থেকে স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙ্গালীরা হেডম্যান রিপোর্ট নিয়ে ভোগ দখলে রয়েছে বলে জানা যায়। জানা গেছে, নানা কৌশলে ব্যবসায়ীরা এ সড়কের ১৩, ১৬ ও ১৭ কিলোমিটার এলাকায় কৌশলে জোত পারমিটে কাগজ সৃজন করে নিয়েছে। জোত এলাকার বাইরে থেকে গাছ কাটা হলেও পরে জোতের নামে সেগুলিকে বৈধতা (!) দেয়া হয়। ২৯০নং মাংগু মৌজার হেডম্যান (মৌজা প্রধান) লাংনেট মুরুং বলেন, আমার মৌজার সিংহভাগ এলাকা সরকারী খাসভূমি। এখানে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে গর্জন, গামারী, কড়ই, চাপালিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। আমার জানামতে আলীকদম-থানচি সড়কের কোথাও গাছ কাটার অনুমতিপত্র (জোত) নেই। তারপরও প্রতিদিন শ্রমিকরা গাছ কেটে পাচার করছে। বাধা দিলে তারা মানে না।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন