আলীকদমের পাহাড়ে সোনালী ফসলের আভা
মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম:
বান্দরবানের আলীকদমের পাহাড়ে পাহাড়ে এখন সোনালী ফসলের আভা। জুমের ধান কাটার ধুম পড়েছে সর্বত্রই। পাহাড়জুড়ে বইছে জুমিদের মাঝে খুশির হাওয়া।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সোনালী ফসলে ঢাকা পড়েছে পাহাড়। জুমিয়ারা খুশিমনে জুমের ধান কাটছেন। পাহাড়ের সর্বত্রই চলছে নবান্নের খুশির আমেজ। জুমিয়াদের মাঝে এখন খুশির জোয়ার। সারা বছরের কষ্টার্জিত ফসল ঘরে তুলছে তারা। জুমচাষের মাধ্যমে তারা সারা বছরের অন্ন সংস্থান করে জুমিয়ারা।
জুমে একটি ছোট্ট ঘরও তৈরী করা হয়। এই ঘর চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যারা ‘মনোঘর’ বলে। জুমের ধান সংগ্রহের পর প্রথমেই এই মনোঘরে রাখা হয়। পরে সুবিধামত সময়ে স্থায়ী পাড়ার ঘরে জুমের ফসল নিয়ে আসে। বাঁশ-বেতের তৈরী একটি বিশেষ ঝুড়ি দিয়ে জুমের ফসল সংগ্রহ করে। এই ঝুড়িকে স্থানীয় ভাষায় ‘থুরম’ বলা হয়। প্রকৃতির নানা ঝড়-ঝঞ্ঝায় অধিকাংশ পাহাড়ী এখনো জুমচাষের ওপরই নির্ভরশীল। এখানকার পাহাড়ীদের খাদ্যের প্রধান উৎস হচ্ছে ‘জুমচাষ’।
দেশের এক দশমাংশ এলাকাজুড়ে পার্বত্যাঞ্চল। এখানে সবুজাভ অরণ্যে শতাব্দী কাল ধরে জুমচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন এখানকার জুমিয়ারা। পাহাড়কে ঘিরেই এদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম। তাই দেশের মানুষের কাছে এরা পাহাড়ি বলেও পরিচিত। আর এই পাহাড়িদের জীবন-জীবিকা দেশের অন্য এলাকা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। পাহাড়ের গায়ে সনাতনী কায়দায় বীজ ধান বপন করে সাথে মিশ্র ফল। এ চাষই পাহাড়ে ‘জুমচাষ’ বলে পরিগণিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর শরৎকালে জুমের ধান পাকা শুরু হয়। শরতের হাওয়ায় দোলা দেয় পাহাড়ে পাকা ধানের শীষ। রকমারী ফসলের হাতছানিতে আনন্দে ভাসে জুমিয়াদের মন। এখন পুরো পার্বত্য জনপদে পাহাড়ে পাকা ধানের সৌন্দর্যে অমলিন দৃশ্য ফুটে উঠেছে। এখানে একেকটি পাহাড় যেন একেকটি পরিবারের জীবনের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠেছে।
উপজেলার দোছড়ী এলাকার জুমচাষী গড়ামনি তঞ্চঙ্গ্যা জানান, এ বছর শুরুর দিকে বৃষ্টি কম হওয়ায় সঠিক সময়ে ধানের চারা বাড়তে পারেনি। তারপরও এ মৌসুমে আবহাওয়া যেন জুমের অনুকুলে ছিল। ছিলনা তেমন কোনো ঝড়ো হাওয়া কিংবা প্রাকৃতিক বিপর্যয়। তাই এতেই সন্তুষ্ট তারা। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সুত্রে উপজেলায় ৯১২ হেক্টর জমিতে জুমচাষ করা হয়েছে।