আবারও বেপরোয়া শামলাপুরের কুখ্যাত ডাকাত নুরুল আলম

Dakat Nurol Alam w copy

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার:

টেকনাফ উপজেলার উপকূলীয় বৃহৎ ইউনিয়ন বাহারছড়া। ইউনিয়নের শামলাপুর ১নং ওয়ার্ডের কুখ্যাত ডাকাত নুরুল আলম। দীর্ঘদিন জেল খেটে বের হয়ে আবারও বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। ডাকাতি, চাঁদাবাজি, হুমকি ও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে সে। এতে করে এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষ চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০ সালে হোয়াইক্যং ঢালাস্থ কুদুম গুহায় বিদেশি পর্যটক মিস ক্যারিনাকে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর ১নং ওয়ার্ডের ইজ্জত আলীর পুত্র ডাকাত নুরুল আলম। তার বিরুদ্ধে ২০০৭ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত রামু উখিয়া টেকনাফ থানায় বিভিন্ন অপরাধে ১২টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে মাদক আইনে ৩, ডাকাতি ৪, অস্ত্র আইনে ৪ ও একটি হত্যা মামলা রয়েছে। ইতোমধ্যে বহুবার কারাভোগ করেছে সে।

এর আগে ইয়াবাসহ আটক হয়ে দীর্ঘদিন জেল খাটে। জেল থেকে বের হয়ে একমাসের মধ্যে হিমছড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়। এরপর আবার বের হয়ে ৬ মাস পর উখিয়ার রেজুব্রিজ এলাকায় বিজিবি’র হাতে ইয়াবাসহ আটক হয়। সম্প্রতি জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তার হুমকি, চাঁদাবাজি ও নানা রকম হয়রানিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে শামলাপুরের নিরীহ মানুষ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ২০১৬ সালের ৩অক্টোবর শামলাপুর বাজার থেকে রফিক নামে এক ব্যক্তি অপহরণ করে নিয়ে যায় ডাকাত নুরুল আলম ও তার সহযোগীরা। পরে তাকে এক লক্ষ ৭০হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়।

সম্প্রতি সে মানুষ হত্যার চুক্তিবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন জায়গায় হুমকি-ধমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করছে। কয়েকদিন আগে স্থানীয় শিফা গার্ডেন’র দুই কর্মচারী মছেন চাকমা ও ঝন্টুইয়া চাকমাকে ডেকে নিয়ে হুমকি দেয়।

বাগানের কর্মচারী মছেন চাকমা বলেন, ডাকাত নুরুল আলম আমাকে ও ঝন্টুইয়া চাকমাকে পার্শ্ববর্তী দোকানে ডেকে নেয়। এরপর বাগানের মালিক হাবিব উল্লাহ হাবিবের কাছ থেকে নগদ ১০লাখ টাকা এনে দিতে বলে। অন্যথায় আমাদেরকে বাগান ছেড়ে চলে যেতে বলে। নইলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।

শিফা গার্ডেন’র ব্যবসায়ী হাবিব উল্লাহ হাবিব জানিয়েছেন, কর্মচারীদের কাছ থেকে শুনে আমি বিষয়টি শামলাপুর পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ করি।

শামলাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মাসুদ মুন্সী বলেন, এ ধরণের হুমকির একটি অভিযোগ আমরা মোবাইলে পেয়েছি। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় দোকানদার ও বাগানের কর্মচারীর সাথে কথা বলেছি। তবে অভিযুক্ত নুরুল আলমকে পাইনি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নুরুল আলম ডাকাত এতই বেপরোয়া হয়ে গেছে যে, সে আইনশৃঙ্খলা কোন কিছুর তোয়াক্কা করছেনা। ইয়াবা ব্যবসা, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ তার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অভিযোগ ওঠে আসছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে। কেবল তার বিরুদ্ধেই নয়; ডাকাত নুরুল আলমের পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে ইয়াবা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

কুমিল্লার সাথে বেকারী ব্যবসার নামে ইয়াবার চালান পাঠানো হয় বলেও স্থানীয়রা পুলিশকে একাধিকবার অভিযোগ করেছেন। এছাড়া তার সৎ মা মিয়ানমার নাগরিক সানজিদা খাতুন সামি কবিরাজি চিকিৎসার নামে দৈনিক ২৫ থেকে ৩০হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

স্থানীয়দের দাবি, চিকিৎসার নামে যারা আসেন-তারা আসলেই ইয়াবার জন্যই আসেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত করলে তা বেরিয়ে আসবে।

এদিকে ভুক্তভোগী স্থানীয় নিরীহ মানুষ গুলো ডাকাত নুরুল আলমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। তারা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে অভিযোগও করেছেন। তারা ডাকাতের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন