‘আগে পুনর্বাসন, পরে অধিগ্রহণ’ স্লোগানে কক্সবাজারে মানববন্ধন

মহেশখালী প্রতিনিধি:

‘আগে পুনর্বাসন, পরে অধিগ্রহণ’ স্লোগানকে ধারণ করে ‘মহেশখালীর জাগ্রত ছাত্রসমাজ’ এর ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।

মহেশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ চলমান অন্যান্য মেগা প্রকল্পসমূহে ভূমি অধিগ্রহণকৃত এলাকায় ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে এবং জমির উপযুক্ত মূল্য ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবিতে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন মহেশখালীর সর্বস্তরের পেশাজীবী, রাজনীতিবিদ, ছাত্রনেতা, সচেতন শিক্ষিত যুবক ও ভুক্তভোগী নারী-পুরুষেরা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ভিশন-২০৪১ এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য বিভিন্ন মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছিলো, যা এখনো চলমান আছে।

মহেশখালীর সাধারণ মানুষ কখনো সরকারি এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেনি। কিন্তু ইতোপূর্বে অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকগণ তাদের জমির কাঙ্ক্ষিত মূল্য পায়নি বরং অনেক ক্ষেত্রেই জমির মূল্যের মোটা অংক সংশ্লিষ্ট দফতরের কিছু দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে দালাল চক্র লুটে নিচ্ছে।

মানববন্ধনেবক্তারা জোর দাবি করে বলেন, বাস্তবায়ণাধীন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য একর প্রতি কমপক্ষে তিন কোটি টাকা ধার্য্য করতে হবে। অধিগ্রহণকৃত জমির বৈধ কাগজপত্র (ফাইল) জমাদানের সর্বোচ্চ ১(এক) মাসের মধ্যে জমির মালিককে সম্পূর্ণ টাকার চেক হস্তান্তর করতে হবে এবং অবশ্যই প্রকল্পের কাজ শুরু করার আগেই জমির মালিককে যথাযথ মূল্য বুঝিয়ে দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের ভোগান্তি কমাতে প্রকল্প এলাকায় ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করতে হবে।

ইতোপূর্বে অধিগ্রহণকৃত জমির দূর্নীতির সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। ভবিষ্যতে দুর্নীতি ও দালালদের দৌরাত্ম্য শতভাগ বন্ধ/প্রতিরোধে অবশ্যই দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রকল্পে কর্মসংস্থান নিশ্চিতকল্পে স্থানীয় জনগণকে শতভাগ অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং সেই লক্ষ্যে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে যোগ্য করে  তুলতে হবে।

প্রকল্পে স্থানীয় মানুষ ও শিক্ষিত যুবকদের যোগ্যতার ভিত্তিতে শতকরা ৭০ ভাগ চাকরির কোটা সংরক্ষণ করতে হবে। বসতবাড়ি ও দোকানপাট উচ্ছেদ করে নতুন করে আর কোন জমি অধিগ্রহণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে না। আমরা উন্নয়ন চাই, তবে গৃহহীন হতে চাই না। ভিটেমাটি থেকে আমাদেরকে উচ্ছেদের পূর্বে নতুন বাড়িঘর নির্মাণ করে দিতে হবে। আমাদের মাটিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ও গ্যাস অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগে আমাদের মহেশখালীতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

এতে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ২০ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেন, যদি আমাদের উত্থাপিত দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়া না হয়, যদি আগামী ১০ মার্চের মধ্যে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয়, তাহলে জাগ্রত ছাত্রসমাজ ভুক্তভোগী মানুষকে সাথে নিয়ে তাদের আন্দোলনের অংশ হিসেবে মহেশখালীতে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হবে।

মহেশখালীর জাগ্রত ছাত্রসমাজের আহবায়ক ছাত্রনেতা ফজলে আজিম মো. ছিবগতুল্লাহর সভাপতিত্বে ও ‘আমরা মাতারবাড়ির সন্তান’ সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক এনামুল হক সাগরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মহেশখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট মোস্তাক আহমদ, মহেশখালী উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হালিমুর রশিদ, মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাসান বশির, জেলা শ্রমিকলীগের সদস্য ফরিদুল আলম, কালারমারছড়া আদর্শ দাখিল মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক নূরে তজল্লী, হোয়ানক সিভিল ইয়ুথ সোসাইটির সভাপতি ও অত্র সংগঠনের সদস্য সচিব মেহেদী হাসান পাভেল প্রমুখ।

মানববন্ধন শেষে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মহেশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদ বাবুকে সাথে নিয়ে গণদাবির প্রেক্ষিতে দ্রুত হস্তক্ষেপ চেয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।

এসময় জেলা প্রশাসক আন্তরিকতার সাথে বিষয়টির দেখভাল করবেন বলে নেতৃবৃন্দকে আশ্বাস দেন। পাশাপাশি ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন