অবাধে বন জঙ্গল উজাড়ে বিপন্ন বন্য প্রাণীদের জীবন : পানছড়ির লোকালয়ে ভিমরুলের বাসা

VIMRUL PIC

শাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি : 

পাহাড়ে অবাধে জুম পদ্ধতিতে চাষাবাদসহ বিভিন্নভাবে বন-জঙ্গল উজাড় হওয়ায় পানছড়ির বনগুলোতে নানা  প্রজাতির বন্য প্রাণীদের জীবন এখন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এখন তারা নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে বেচে নিচ্ছে লোকালয়কে। কিন্তু এখানেও কি শতভাগ নিরাপদ ? এইতো কিছুদিন পূর্বে পানছড়িতে কৃষকের লাঠি পেটায় মারা পড়েছিল ময়াল প্রজাতির এক অজগর। এবার উপজেলার চৌধুরী পাড়াস্থ মং সাথোয়াই চৌধুরীর লাকড়ির ঘরে বিশালাকার বাসা বেঁধেছে ভিমরুল।

প্রকৃতির সৌন্দর্যবর্ধনকারী ভিমরুল এখন প্রায় বিলুপ্তির তালিকায়। গহীন অরণ্য লোকচক্ষুর আড়ালে বাসা বেঁধে ভো-ভো শব্দে উড়ে চলে ভিমরুলের দল। বাবুই পাখির মত নিজেদের ফর্মূলায় তৈরী বাসার ছিদ্র দিয়ে কোথা থেকে উড়ে এসে ডুকে আর বের হয়। কারো সাহস নেই এদের আস্তনায় হামলা দেয়ার। শেষ লড়াই করে হলেও জীবনটুকু বিসর্জন দেয়। তবে আগুনের কাছে অতি সহজে হার মানে এই প্রাণী। বর্তমানে দৃষ্টিনন্দন এই ভিমরুলের বাসা তেমন চোখে পড়ে না।

ক্যাপ্রুচাই মারমার মাধ্যমে খবর পেয়ে চৌধুরীপাড়া এলাকার মং সাথোয়াই চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ঘরের ভীমের সাথে খুব শক্ত ভাবে ঝুলে আছে ভিমরুলের বাসাটি। দেখে মনেই হবে না এটা যে এই ক্ষুদে প্রাণীদের গড়া। মাটির প্রলেপ দিয়ে বাসার বাহিরের অংশ সাজিয়েছে নান্দনিক সাজে। মনে হবে কোন অভিজ্ঞ মৃত্তিকা শিল্পীর তুলির ছোয়ার আছড়। মাটি দিয়ে বিশাল গোলাকার এই বাসার সামনে ও পিছনে রয়েছে তিন-চারটি প্রবেশ পথ। এই প্রবেশ পথ দিয়েই ভো-ভো শব্দে বেরিয়ে চলে অজানার উদ্দেশ্যে আবার যথাসময়ে ফিরে আসে নিজ গন্তব্যে।

এলাকার অনেক প্রবীন ব্যক্তিদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, এই প্রাণীর মাটির প্রলেপ দিয়ে তৈরী বাসা খুব শক্ত। বাইরের কোন শত্রু মাটির শক্ত আবরণের ক্ষতি করতে পারেনা। তাছাড়া ঝড়-বৃষ্টিতেও আবরণের কোন ক্ষতি হয় না। জানা গেছে, এরা নিয়ম-কানুন মেনে চলতে খুবই অভ্যস্ত। বাসার ভেতরে প্রবেশ করার মুহুর্তে একে অপরকে সহায়তা দিয়ে থাকে। একজন জানালেন আট-দশটি ভিমরুল এক সাথে কামড়ালে বিষ ক্রিয়ায় যে কেউ মারা যেতে পারে।

প্রকৃতি প্রেমিকদের মতে, বনে-জঙ্গলে অবাধে আগুন না দিয়ে, বন-জঙ্গল উজাড় না করে পরিবেশের পাশাপাশি এ বিরল প্রজাতিকেও রক্ষা করতে হবে। আমরা নিজেরা একটু সচেতন হলেই ওরা বেঁচে থাকার সুযোগ পাবে আপন ভূবনে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন