সেনা-বিজিবি যৌথ অভিযানের মুখে পালিয়ে গেলো আরাকান আর্মি

বিজিবি

বান্দরবান থেকে নিজস্ব প্রতিনিধি:

সেনাবাহিনী এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র যৌথ আক্রমণে পিছু হটেছে আরাকান আর্মি। বুধবার বিকালে অভিযান শুরু হয়। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরিস্থিতি এখন শান্ত। বিজিবির পাশাপাশি সেনা সদস্যরাও দুর্গম এলাকায় তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করছে। বুধবার রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যাওয়া সন্ত্রাসীরা পুণরায় বিজিবির উপর হামলা করতে পারে এমন আশঙ্কা করেছিল বিজিবি। তবে রাতে আর তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুণরায় তল্লাশী অভিযান শুরু করবে সেনা বিজিবি যৌথ দল।

সন্ত্রাসীরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য বিজিবির পক্ষ থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকেও একই সময় তাদের অংশে অভিযান পরিচালনার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু তারা অভিযান পরিচালনা করেনি। সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বিজিবির ২৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহাঙ্গীর হোসেন। বিজিবির মহাপরিচালক তিনি সন্ধ্যা নাগাদ অভিযান শুরুর ঘোষণা দিলেও তখনই আসলে সেনা সদস্য এবং বিজিবির সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করছিলো। সন্ত্রাসীদের বিভ্রান্ত করার কৌশল হিসেবেই বিডিআর প্রধান সন্ধ্যায় অভিযানের ঘোষণা দিয়ে আগেই তা শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

bgb

এ অভিযানে বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর আর কেউ হতাহত হননি। তবে সন্ত্রাসীদের দিকে বেশ কিছু হতাহতের আশঙ্কা করছে স্থানীয় সূত্রগুলো। কিন্তু কতোজন আহত বা নিহত হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। ব্যাপক তল্লাসী শেষ হওয়ার পর এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য জানা যাবে। তবে আরেকটি সূত্র জানিয়েছেন, অভিযান বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হবে।

বান্দরবানের থানছি উপজেলার দুর্গম রোমাক্রী ইউনিয়নের বড় মদক এলাকায় বিজিবির সঙ্গে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের মধ্য গুলি বিনিময় হয়। সন্ত্রাসীরা সকালে বড় মদকের দোলিয়ন পাড়া ক্যাম্পে বিজিবির টহল দলের উপর অতর্কিত গুলি ছোড়ে, বিজিবিও পাল্টা গুলি চালায়। একই সময়ে আরেকটি গ্রুপ স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পে হামলা চালায়। এসময় গুলিতে আহত বিজিবির নায়েক জাকির এবং সিপাহী আব্দুল গনি কে চট্টগ্রাম সিএমএইচে ভর্তি করা হয়েছে।

সূত্র মতে, বান্দরবানের ওই এলাকাটি এতোই দুর্গম যে ৪৩৯ কিলোমিটার এলাকায় কিছু পাহাড়ী বসবাস করলেও সরকারিভাবে কোনো স্থাপনা নেই। ৫৩৯ কিলোমিটার সীমান্ত এরাকার মধ্য গতবছর এক বছরে ১০০ কিলোমিটার এলাকায় বিজিবি তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে একাধিক অভিযান পরিচালনা করেছে বিজিবি এবং সেনাবাহিনী। এরকম একটি অভিযানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অপহৃত দুই সদস্যকে উদ্ধার করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠায় বিজিবি।

বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল আজিজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার ১৩টি ঘোড়া আটককে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির সদস্যরা অতর্কিত হামলা করে থাকতে পারে।

থানছি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যা হা চিং মারমা, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বকুলী মার্মা ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাংসার হেডম্যান জানান, গত সপ্তাহে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান বাহিনীরা সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহারের জন্য বান্দরবান থেকে ১০/১৫টি ঘোড়া বড় মদক নেয়ার সময় তিন্দু বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা আটক করে। সূত্র জানিয়েছে, উদ্ধারকৃত ঘোড়াগুলোর মধ্যে চারটি বৈরী পরিবেশে মারা গেছে। গতকাল বুধবার পরিবহনের সময় নৌকা ডুবিতে দুটি মারা যায়। বাকি ৭টি এখনো বিজিবি ক্যাম্পে আটক রয়েছে।

রেমাক্রী ইউপি চেয়ারম্যান মালিরাম ত্রিপুরা জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে গোলাগুলি বন্ধ রয়েছে। বড় মদক বাজারে দোকান-পাট ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে স্থানীয় নিরাপদ জায়গায় অবস্থান নিয়েছে।

 থানচির বিভিন্ন ক্যাম্পে বিজিবির সদস্যদের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। বলিপাড়া ৩৩ বিজিবি’র ব্যাটালিয়ন থেকে বিজিবির সদস্যদের বড় মদক তিন্দু রেমাক্রী ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়ার গেছে। অভিযান পরিচালনায় সেনা বিজিবি’র উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়েছেন।

ছবি- আর্কাইভ

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন