লক্ষ্মীছড়িতে ঘটনাবহুল এপ্রিল মাস: ২ খুন ৬ মামলা

 Untitled-13

মোবারক হোসেন, লক্ষ্মীছড়ি:

খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় অস্ত্র উদ্ধার, আসামী আটক ও  খুনসহ নানা ঘটনাবহল গত এপ্রিল মাসে থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে ৬টি। এর মধ্যে ২টি খুনের ঘটনা, ২টি অস্ত্র উদ্ধার ও আসামী আটক এবং ১টি আত্মহত্যা ছাড়াও অন্যান্য ঘটনায় আরো ১টি মামলা রেকর্ড হয়। এদিকে ঘটনাস্থল এ জেলার বাহিরে হওয়ায় আরো ২টি খুনের ঘটনায় অবশ্য এ থানায় মামলা হয় নি। সীমান্তবর্তী এলাকা খীরামে এবং রাঙ্গামাটির কলেজ গেইট এলাকায় এ দুটি ঘটনা ঘটে বলে সূত্রে প্রকাশ।     

খবরে প্রকাশ, বছরের সব চেয়ে আলোচিত মামলাটি রের্কড হয় ১৯ এপ্রিল। প্রতিপক্ষ গ্রুপের সন্ত্রাসীদের গুলিতে এক ব্যবসায়ী নিহতের ঘটনা ঘটে এ দিন। গুলি বিদ্ধ হয়ে আহত হন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী কল্পরানী চাকমা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর কিছুটা সুস্থ্য হলে তাকে ডাক্তার রিলিজ দিয়েছে। মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটে ১৯ এপ্রিল শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে। উপজেলা সদরে জুর্গাছড়ি পাড়ায় জনসংহতি সমিতি(জেএসএস) এর আস্তানায় ইউপিডিএফ’র সন্ত্রাসীরা আকষ্মিক হামলায় অপ্রস্তুত জেএসএস নেতা-কর্মীরা এক পর্যায় পালিয়ে রক্ষা পায়। এ সময় পথচারি চায়ের দোকানের মালিক কিরন চাকমা ওরফে জয় চাকমা(৪৫) নামে এক ব্যবসায়ী ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় তৈরী এল.জি, ৫ রাউন্ড তাজা গুলি এবং ৩৩ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। অস্ত্রসহ জনতার হাতে আটক হয় এক জেএসএস কর্মী। এর আগে গত ৫ এপ্রিল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদর বেলতলী পাড়া এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে জেএসএস কর্মী নারায়ন চাকমা(২৫) নিহত হয় এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন জীতেন চাকমা (২২)। এসব ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই উপজেলা সদরে বেলতলী পাড়া এলাকায় চায়ের দোকানে অস্ত্র উদ্বার ঘটনা ঘটে। ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। আটক করা হয় চা দোকানের মালিক প্রবিল কুমার চাকমা(৩৬)কে। এর এক দিন আগে ২৮ এপ্রিল সোমবার জনতার হাতে এমরান হোসেন রবিন (আনুমানিক বয়স ১৭/১৮) নামে ভুয়া সাংবাদিক পরিচয়ে এস.আই আটক করে পুলিশের কাছে সোর্পদ করা হয়।

এদিকে ১৬ এপ্রিল বুধবার সাঁওতাল পাড়া নামক এলাকায় আনুমানিক রাত ১০টার দিকে সচিন্দ্র সাঁওতালের মেয়ে রুপনা ভীম ওরফে রুপা (১৯) রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়। এছাড়াও আরো ২ টি ঘটনা ঘটে এ জেলার বাহিরে। একটি রাঙ্গামাটি জেলায় অপরটি লক্ষ্মীছড়ি কাউখালী সীমান্তে বর্মাছড়ির খীরাম এলাকায়। ২৫এপ্রিল শুক্রবার রাঙ্গামাটির কলেজ গেইট এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া ক্যাজাই প্রু মার্মার লাশ ময়না তদন্ত শেষে নিজ বাড়ি দুল্যাতলী আনার পর না-ভাঙ্গা শশ্মনে দাহ করা হয়। এদিকে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা ও রাঙ্গামাটি কাউখালি উপজেলার সীমান্তবর্তি খীরাম এলাকা থেকে মো: ইউসুফ অপহরণের ৩দিন পর বাড়ি থেকে আনুমানিক দেড় কি: মি: দুরে লাশ পাওয়া যায়। ফটিকছড়ি থানা পুলিশ এ লাশ উদ্ধার করে।

২১ এপ্রিল সোমবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে ইউসুফ(৩৫) কে অস্ত্রের মুখে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে নিয়ে যায়। মো: ইউসুফ নানুপুর ইউনিয়নের উত্তর খীরাম হাজির বাম এলাকার মৃত আব্দুচ ছালামের পুত্র বলে জানা গেছে। অবাক হওয়ার কিছুই নয় যে, এসব ঘটনায় নিরপরাধি নিরীহ পথচারি ও শিশুরাও নির্মম প্রাণহানীর মত ঘটনার শিকার হচ্ছেন।   

তথ্যানুসন্ধান করে জানা যায়, ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসটি ছিল ঘটনাবহুল। এক মাসে ৬টি মামলা রেকর্ড যা স্মরণকালের ইতিহাস বলে মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞমহল। সূত্রে জানা যায়, এর আগের মাস মার্চ মাসে কোন মামলা নেই। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে ১টি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ১টি মামলা হয়েছে। আর ২০১৩ সালে সারা বছরে মামলা হয়েছে মাত্র ৮টি। ২০১২সালে ১২টি এবং ২০১১সালে ১৩টি মামলা রেকর্ড হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে সে সময়কালে রাজনৈতিক মামলা হয়েছে বেশ কয়েকটি। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ-জেএসএস’র মধ্যে গোলাগুরির ঘটনায় আহত কিংবা নিহতের ঘটনায় সরাসরি কেউ বাদী হয়ে অভিযোগ নিয়ে আসে না থানায়। আইনগত বাদ্যবাধকতা থাকায় পুলিশ বাদি হয়েই এসব খনের ঘটনায় মামলা করে থাকে।

লক্ষ্মীছড়ি থানার অফিসার্স ইনচার্জ এসআই বাহার জানান, প্রতিটি মামলাই গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এলাকার মানুষ যদি সঠিক তথ্য দিয়ে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে সহায়তা করে তাহলে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা কঠিন কোন কাজ নয় বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান। এদিকে পর পর বেশ কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষ আতংকিত। যদিও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে বৃদ্ধি করেছে। আর কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড যাতে কেউ ঘটাতে না পারে সে জন্য সেনা জোয়ানরা সর্বদা টহলে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

তবে অর্থনৈতিক চাকা সচল ও এলাকার উন্নয়ন, শান্তি-শৃঙ্খলা এবং জানমাল রক্ষায় স্থীতিশীল পরিবেশ অত্যাবশ্যক বলে মনে করছে সচেতন মহল। সন্ত্রাসের বলি নিরীহ মানুষ কিংবা শিশুরা যাতে এর স্বীকার না হয় তাই সঙ্ঘাত পরিহার করে সকলে মিলে উন্নয়নের কাতারে সামীল হয়ে কাজ করার দাবি শান্তিপ্রিয় জনগনের এমন প্রত্যাশা এখন সর্বত্র।      

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

2 Replies to “লক্ষ্মীছড়িতে ঘটনাবহুল এপ্রিল মাস: ২ খুন ৬ মামলা”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন