বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের গুলিতে ভিডিপি সদস্য নিহত, আহত-২

 

গোলাগুলি

স্টাফ রিপোর্টার:

বান্দরবানের রুমা উপজেলা সংলগ্ন রাঙ্গামাটির সেপ্রু পাড়ায় দুই পর্যটকসহ স্থানীয় গাইড উদ্ধার অভিযান চলাকালে রবিবার  মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান লিবারেশন পার্টির সাথে সন্ত্রাসীদের সাথে যৌথবাহিনীর গুলি বিনিময়ে হয়েছে। সন্ত্রাসীদের গুলিতে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর (ভিডিপি) এক সদস্য ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন এবং সেনা ও আনসার সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সামরিক হেলিকপ্টার যোগে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

নিরাপত্তা বাহিনী সূত্র জানায়, সেপ্রু পাড়ার রাইনক্ষং খাল পাহাড় এলাকায় স্থাপিত নিরাপত্তাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পে রবিবার সকাল ১১ টার দিকে এএলপি’র সন্ত্রাসীরা যৌথ বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তাদের ছোড়া গুলিতে ঘটনাস্থলে ভিডিপি সদস্য মেং পু ম্রো নিহত হয়েছেন এবং সেনাবাহিনীর সৈনিক আবুল কাশেম ও আনসার ব্যাটিলিয়ান সদস্য মোহাম্মদ হান্নান গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় সহস্র রাউন্ড গোলাগুলি হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার যোগে যৌথবাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য পাঠানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার যৌথবাহিনী পর্যটক উদ্ধার অভিযানে সন্ত্রাসীদের আস্তানা থেকে ১টি মার্ক এস কে রাইফেল, দুটি গ্রেনেড,১০ টি পৌচসহ ম্যাগজিন, ২২২ রাউন্ড গুলি, ১টি ওয়াকিটকি সেটসহ বিভিন্ন সরঞ্জমাদি  উদ্ধার করা হয়। এসময় অপহৃত পর্যটক আব্দুল আল জুবায়ের আইডি কার্ডও উদ্ধার করা হয়।

বিজিবি সূত্রে জানাযায়, রুমা উপজেলার সীমান্ত এলাকায় অপহৃত পর্যটকদের উদ্ধারের অভিযান চালানোর সময় সন্ত্রাসীরা যৌথ বাহিনী সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় এসময় যৌথবাহিনীও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। অপহৃত পর্যটকদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানান, ভারত সীমান্তে সন্ত্রাসীদের গুলিতে এক আনসার সদস্য নিহত এবং যৌথবাহিনীর দুই সদস্য গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়েছেন।

সেপ্রু পাড়া এলাকায় হামলার ঘটনার পর বর্তমানে সীমান্ত এলাকা থমথমে রয়েছে। সেপ্রু পাড়া ও আশেপাশের পাড়াগুলোর পাড়ার লোকজন নিরাপদ জায়গায় অশ্রয় নিয়েছে। ঘটনার কথা স্বীকার করে আনসার ভিডিপির কর্মকর্তা সুব্রত দাশ জানান তার এক সদস্যসহ সেনাবাহিনীর এক সৈন্য গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। বড় থলি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আতুই মং মারমা জানান সীমান্ত এলাকায় আতংক অবস্থা বিরাজ করছে।

তবে নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো কর্মকর্তাই ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। স্থানিয়রা জনিয়েছেন ১১টার দিকে একটি অন্ত্রধারী সন্ত্রাসী দল সেপ্রু পাড়ার সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পে অতর্কিত হামলা করে। এতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

হামলাকারীরা আরাকানের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান লিবারেশন পার্টির সদস্য (এএলপি) হতে পারে বলে স্থানীয়রা ধারনা করছেন। ইউপি চেয়ারম্যান আতুই মং মারমা জানান গত দুই সাপ্তাহ ধরে ভারত মায়ানমার সীমান্ত এলাকায় অপহ্রতদের উদ্ধারে সম্বলিত অভিযান চলছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে এ পর্যন্ত বড়থলি ইউনিয়নের ২ ইউপি সদস্যসহ ৮ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অপহ্রতদের উদ্ধারে সীমান্তের কাছে সেপ্রু পাড়ায় সেনাবাহিনীর একটি অস্থায়ী ক্যাম্পও স্থাপন করা হয়। বৃহস্পতিবার এই ক্যাম্প থেকেই সন্ত্রাসীদের আস্থানায় অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। স্থানীয়রা ধারনা করছেন ওই সন্ত্রাসীরাই ঢাকার দুই পর্যটককে অপহরণ করে থাকতে পারে।

উল্লেখ্য, গত ৪ অক্টোবর রোববার রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়তলী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী নতুন পুকুর এলাকা থেকে অস্ত্রের মুখে বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের সন্ত্রাসীরা পর্যটক জাকির হোসেন মুন্না (৩০), আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের (৩২) এবং স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড মাংসাই ম্রোসহ(২৮) তিন জনকে অপহরণ করে। পরে গাইডকে ছেড়ে দিলেও পর্যটকদের আটকে রেখে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে।  এ ঘটনার পর থেকেই যৌথৈবাহিনীর সদস্যরা পর্যটকদের উদ্ধার অত্যন্ত দূর্গম এলাকায় বিরামহীন অপারেশন চালিযে যাচ্ছে। যখনই কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী আস্তানার কাছাকাছি যৌথবাহিনী পৌঁছাচ্ছে তখনই তারা যৌথবাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি করছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন