Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

পাহাড়ে চলছে ভয়াবহ নারী নির্যাতন: বাঙালি ছেলের সাথে বিয়ের শাস্তি গণধর্ষণ

রেটিনা চাকমা
মিয়া হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ফিরে :

পাহাড়ে চলছে ভয়াবহ রকমের নারী নির্যাতন। দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে তোয়াক্কা না করে নিজেরাই শাস্তির নামে নারীদের গণধর্ষণ করছে পাহাড়ি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। পাহাড়ি মেয়েরা বাঙালি ছেলেদেরকে বিয়ে করলে এসব মেয়েদের ধরে নিয়ে গণধর্ষণ করে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। এমনকি ধষর্ণের পর হত্যা করা হয়।

আর বাঙালি ছেলেদের সাথে পাহাড়ি মেয়েরা কথা বললেও তাদেরকে হয়রানি ও লাঞ্ছিত করে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। সেই সাথে তাদের পরিবারের সদস্যদের উপরও চালায় ভয়াবহ নির্যাতন। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ নির্যাতন বন্ধ করার কঠোর কোন পদক্ষেপ নেই। এমনকি নারী অধিকার সংগঠনগুলো এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না।

সম্প্রতি পাবর্ত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ঘুরে সরেজমিনে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি তরুণীরা প্রেমিক বা স্বামী হিসেবে পছন্দ করে বাঙালি যুবকদের। ফলে পাহাড়ি মেয়েরা ভালোবেসে বাঙালি ছেলেদের বিয়েও করে। কিন্তু পাহাড়ি সংগঠনগুলো এসব বিয়ে মেনে নেয় না। খবর পেলে ওই পাহাড়ি মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যায় জঙ্গলে। সেখানে তাকে দল বেঁধে গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয়।

আর কোন বাঙালি ছেলের সাথে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে তুললে সেই মেয়েকে চরমভাবে লাঞ্ছিত করা হয় এবং পরিবারের উপর মোটা অংকের চাঁদা ধার্য করা হয়। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম এলাকায় এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে। কিন্তু প্রশাসন এদের বিষয়ে তেমন কোন ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এমনকি থানায় অভিযোগ করলেও নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে হয় ভুক্তভোগীদের।

সরেজমিনে জানা যায়, সম্প্রতি রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি এলাকায় নারী নির্যাতনের এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। পাহাড়ি মেয়ে বাঙালি ছেলেকে বিয়ে বা প্রেম করার অপরাধ নয়, বাঙালি ছেলের দোকানে যাওয়াই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে পাহাড়ি এক মেয়ের। ঘটনা গত ২৯ মে ২০১৬ ইং তারিখে। রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায় মা মোবাইল সেন্টার নামক এক বাঙালি ছেলের দোকানে  কলেজ ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে যায় এক চাকমা কিশোরী। এ অপরাধে এই চাকমা কিশোরীকে ধরে এনে প্রকাশ্যে হাসপাতালের মাঠে মারধর করেছে পাহাড়ের একটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

শুধু এখানেই শেষ নয়। পরে এ কিশোরীকে নেওয়া হয় পাহাড়ের গহীন জঙ্গলে। সেখানে তার সকল জামাকাপড় খুলে নেয়া হয়। দল বেঁধে করা হয় যৌন নির্যাতন। এ বর্বর মুহূর্তের দৃশ্যও ধারণ করা হয় মোবাইলে। পরে সেখান থেকে ছুটে এসে গাছকাটাছড়া আর্মি ক্যাম্পে উপস্থিত হয়ে ঘটনার বর্ণনা দেয় চাকমা যুবকদের নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়া এ মেয়েটি। এ সময় মেয়েটির শরীরের কিছু অংশ রক্তাক্ত দেখে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পুলিশকে খবর দেয়। পরে মেয়েটি বাদী হয়ে বিলাইছড়ি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৭/১০/১৩ ধারায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং ১/৫/১৬।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর করা মামলায় সুনীতিময় চাকমা (৩০) নামে এক পিসিপি নেতাকে ১৪ জুন আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। সে উপজেলা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (সন্তু লারমা) অর্থ সম্পাদক। এ ঘটনায় মামলার পর ভুক্তভোগীকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৪ জুন আটকের পর পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন সুনীতিময়। আটকের পর তাকে শনাক্ত করেছে ভুক্তভোগী।

ভুক্তভোগী ও মামলা সূত্রে জানা যায়, চাকমা কিশোরী এ বছর এসএসসি পাস করেছে। উচ্চ মাধ্যমিকে অনলাইনে আবেদনের জন্য গত ২৯ মে বিলাইছড়ি বাজারের শিহাবের কম্পিউটারের দোকানে যায় সে। এ সময় স্থানীয় সুনীতিময় চাকমাসহ ১৫ থেকে ২০ জন পাহাড়ি দোকানের মধ্যেই আটকে ফেলে তাকে। বাঙালি ছেলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক আছে দাবি করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে নিয়ে প্রকাশ্যে মারধর করা হয়। পরে তাকে অপহরণ করে কেরণছড়ির অজ্ঞাত জঙ্গলে নিয়ে যায় পিসিপি কর্মীরা। সেখানে তাকে পুনরায় মারধর ও গালিগালাজ করে। অতঃপর তার চোখ বেঁধে যৌন হয়রানি করা হয়। এ ঘটনা কাউকে জানালে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিকে এ ঘটনায় আটক পিসিপি নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তার গ্রেফতারের প্রতিবাদে দু’দিন হরতাল পালন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (সন্তু গ্রুপ)। গেল ১৫ ও ১৬ জুন বিলাইছড়ি উপজেলায় এ হরতাল পালন করা হয়।

বিলাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরুল আলম মোল্লা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জানান, আটক পিসিপি নেতার বিরুদ্ধে শিগগিরই রিমান্ড আবেদন করা হবে। বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে।

মা মোবাইল সেন্টারের মালিক শিহাব জানান, তার স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। ওই চাকমা কিশোরীর সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। তার মতো অনেক পাহাড়ি মেয়েই তার দোকানে নিয়মিত আসত। এ ঘটনা ২৯ মে ঘটলেও ১৪ জুন পিসিপি নেতা আটক হওয়ার পর দোকান বন্ধ করতে বাধ্য হন শিহাব। তার বাড়িওয়ালা সুশীল চাকমা জানান, অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি তিনি নিজে না দেখলেও তাকে আর দোকান ভাড়া দেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এদিকে গত ২২ জুন বুধবার রাঙামাটি রিজার্ভ বাজার বাস স্টেশন মোড়ে ‘ধর্ষকদের’ দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন পার্বত্য বাঙালি ছাত্রঐক্য পরিষদ। এ সময় বক্তারা অভিযোগ করেন, সন্তু লারমার মদদে জেএসএস ও পিসিপি পাহাড়ে চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ ও জাতি বিদ্বেষী কর্মকা- পরিচালনা করছে।

সূত্রে জানা যায়, এর আগে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে ভালবেসে এক বাঙালি ছেলেকে বিয়ে করার অপরাধে খাগড়াছড়ির গুইমারার এক মারমা তরুণী ও তার পরিবারকে নির্যাতন ভোগসহ মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হয়। তাকে একটি কক্ষে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে ভালবেসে চাকমা মেয়েকে বিয়ে করাই কাল হয় একটি প্রথম শ্রেণীর জাতীয় পত্রিকার স্টাফ আলোকচিত্র সাংবাদিকের। অপরদিকে ভালবাসার মানুষকে ভুলে যেতে চাকমা স্ত্রী‘র উপর চলে বর্বরতা। তোলা হয় নিলামে, যা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে গণমাধ্যমে।

সবচেয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করা ঘটনা ঘটে গত বছরের এপ্রিলে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালায়। উপজেলার এক ত্রিপুরা মেয়ে ভালবেসে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার আহমদ কবীরের ছেলে মো. আবদুল হান্নানের (২৪) সাথে। এ সময় প্রেমিক হান্নানের হাত ধরে পালানোর সময় বাস থেকে নামিয়ে ওই ত্রিপুরা মেয়ে ও হান্নানকে অপহরণ করে পিসিপির কর্মীরা।

অপহরণের পর একটি ঝুম ঘরে আটক করে ত্রিপুরা মেয়েটিকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে পিসিপির স্থানীয় কয়েকজন নেতাকর্মী। গণধর্ষণের পর গভীর রাত পর্যন্ত মেয়েটিকে নিয়ে উল্লাস করে এসব সন্ত্রাসী। পুরো গণধর্ষণের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করা হয়। এ ঘটনায় আটক ইউপিডিএফ সমর্থিত পিসিপির নেতা সজীব ত্রিপুরা (২২) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানায়।

এভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি মুসলিম ছেলেকে ভালবেসে বিয়ে করার কারণে মাটিরাঙা, রাঙামাটির কুতুকছড়ি ও রামগড়ের কয়েকটি ঘটনাসহ এরকম আরও অসংখ্য পাহাড়ি মেয়েকে অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যাসহ বিভিন্ন নারকীয় অভিজ্ঞতার শিকার হতে হয়েছে।

সম্প্রতি পাহাড়ি তরুণীদের নিজ জাতি-গোষ্ঠীর লোকদের হাতে এরূপ নির্বিচারে গণধর্ষণের শিকার হওয়া নিয়ে গবেষণাধর্মী উপন্যাস বের করেন লেখিকা রোকেয়া লিটা। চলতি বছরের শুরুর দিকে ‘ডুমুরের ফুল’ নামে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এ বইটি বের করলে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয় তাকে।

রাঙামাটির বিলাইছড়ির কেরণছড়ি মৌজা কার্বারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অংচাখই কার্বারী জানান, কোনো পাহাড়ি মেয়ে বাঙালি ছেলেকে বিয়ে করলে উপজাতিদের সামাজিক নিয়মে কোনো শাস্তির বিধান নেই। তবে আমরা এ ক্ষেত্রে কার্বারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সাধারণত ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে থাকি। এরপর তাদের একত্রে বসবাসে সমস্যা নেই।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন