নির্বিচারে চলছে পাহাড়ী নারীদের উপর আঞ্চলিক উপজাতীয় সংগঠনগুলো যৌন হয়রানি(ভিডিও)

দিঘীনালার দীপা ত্রিপুরার ধর্ষক পিসিপি নেতা সজীব ত্রিপুরার চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি

সজীব ত্রিপুরা

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

অজ্ঞাত কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় তরুণীরা প্রেমিক হিসাবে, স্বামী হিসাবে বাঙালী যুবকদের পছন্দ করে থাকে অনেক ক্ষেত্রেই। তাদেরই একজন খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার ক্ষেত্রলাল ত্রিপুরার মেয়ে দীপা ত্রিপুরা (১৮)। দীপা ত্রিপুরা ভালবেসে ঘর বাঁধার  স্বপ্ন দেখেছিল চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার আহমদ কবীরের ছেলে মো. আবদুল হান্নানের (২৪) সাথে। কিন্তু দীপা জানতো, তাদের সমাজ এ ভালবাসা মেনে নেবে না। বরং এর জন্য তার জীবন বিপন্ন হতে পারে। সেকারণে গত ১২ এপ্রিল প্রেমিক হান্নানের হাত ধরে পালাচ্ছিল সে। কিন্তু তার এই পলায়নের খবর পৌঁছে যায় আঞ্চলিক সংগঠন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সন্ত্রাসীদের কাছে। বাইল্যাছড়ি এলাকায় বহনকারী বাস থামিয়ে দীপা ত্রিপুরা ও হান্নানকে নামিয়ে অপহরণ করে পিসিপি’র কর্মীরা।

অপহরণের পর স্থানীয় সন্ত্রাসী ক্রিফল ত্রিপুরা ও নেপাল ত্রিপুরা দীপা ত্রিপুরাকে মোটরসাইকেলে করে রেংকুম-এ একটি জুম ঘরে আটকে রাখে। আর সজীব ত্রিপুরার নেতৃত্বে আদিত্য ত্রিপুরা, রাজু ত্রিপুরা, উৎপল ত্রিপুরা আবদুল হান্নানকে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। এদিকে রেংকুম-এ একটি ঝুম ঘরে আটক করে দীপা ত্রিপুরাকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে পিসিপি’র স্থানীয় নেতা ক্রিফল ত্রিপুরা, নেপাল ত্রিপুরা, সজীব ত্রিপুরা, সুরঞ্জিত ত্রিপুরা, অভি ত্রিপুরা, রাজু ত্রিপুরা। একাধিকবার গণ-ধর্ষণের পর গভীর রাত পর্যন্ত দীপা ত্রিপুরাকে নিয়ে উল্লাস করে এসব সন্ত্রাসীরা। এসময় রাজু ত্রিপুরা পুরো গণ-ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করে।

গত ১৩ জুন বিকালে নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে আটক ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ-পিসিপি‘র নেতা সজীব ত্রিপুরা(২২) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছে।

এসময় আরো আটক হয় তার সহোদর প্রিয় রঞ্জন ত্রিপুরা(৩৮)। তারা দু’জরই বাইল্যাছড়ি রাবার বাগান এলাকার বাসিন্দা মৃত মনোরঞ্জন ত্রিপুরার পুত্র। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নিরাপত্তাবাহিনীর একটি টহল দল শনিবার বিকালের দিকে মাটিরাঙ্গার বাইল্যাছড়ি এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করে। এসময় তাদের কাছে থেকে কিছু উস্কানীমুলক পোস্টারও উদ্ধার করা হয়। সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছে, পুরো ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছে পিসিপি‘র স্থানীয় নেতা ক্রিফল ত্রিপুরা ও নেপাল ত্রিপুরা।

সজীব ত্রিপুরার দেয়া তথ্য মোতাবেক নিরাপত্তাবাহিনী ২০ জুন চাঁদাবাজি, অপহরণ ও ধর্ষণের মতো ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে চুক্তিবিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সন্ত্রাসী ক্রিফল বিকাশ ত্রিপুরা (২০)-কে আটক করেছে নিরাপত্তাবাহিনী। আটক ক্রিফল বিকাশ ত্রিপুরা বাইল্যাছড়ি স্কুল পাড়ার হেমেন্দ্র বিকাশ ত্রিপুরার ছেলে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নিরাপত্তাবাহিনী মাটিরাঙ্গা বাজার থেকে বাইল্যাছড়ি যাবার পথে একটি যাত্রীবাহি বাসে তল্লাসী চালিয়ে মাটিরাঙ্গা জোন সংলগ্ন মাটিরাঙ্গা পাইলট হাই স্কুলের সামনে থেকে তাকে আটক করে। এসময় তাদের কাছে থেকে একাধিক মোবাইল ফোন, সীম ও চাঁদা আদায়ের রশিদ উদ্ধার করা হয়। আটক ক্রিফল বিকাশ ত্রিপুরা নিরাপত্তাবাহিনীর বাহিনীর কাছে দীপা ত্রিপুরাকে অপহরণ ও ধর্ষণের সকল কথা স্বীকার করে।

নিরাপত্তাবাহিনীর কাছে সজিব ত্রিপুরার স্বীকারোক্তির একটি ভিডিও ক্লিপ পার্বত্যনিউজের হাতে এসেছে। ভিডিও স্বীকারোক্তিতে সজিব আরো বলেন, পরদিন দ্বিতীয় দফায় গণ-ধর্ষণের পর বেলা তিনটার দিকে দীপা ত্রিপুরাকে বাইল্যাছড়ি সাইনবোর্ড এলাকায় স্থানীয় গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেমং মারমা, ফাতেমা বেগম মেম্বার, শরণার্থী নেতা হেমেন্দ্র ত্রিপুরা, দিগেন্দ্র ত্রিপুরা ও সুজাউ মারমার মধ্যস্থতায় তার মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আরো দেখুন:

♦ মুসলিম যুবককে বিয়ে করায় কুতুকছড়িতে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের হাতে ত্রিপুরা যুবতী অপহৃত

♦ বাঙ্গালী ছেলেকে বিয়ে করার অপরাধে নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও হুমকির মুখে গুইমারায় এক মারমা পরিবার

♦ রেটিনা চাকমাকে ভালবেসে বিয়ে করায় চাকরী হারালেন : মৃত্যুর হুমকি তবু স্ত্রীকে ফেরত চান প্রথম আলোর সাবেক ফটো সাংবাদিক সৈকত ভদ্র

♦ পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতীয় কর্তৃক বাঙালী নারী ধর্ষণ নির্যাতন আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে চলেছে

এছাড়াও দীপা ত্রিপুরার পাশাপাশি পিসিপি‘র বিভিন্ন নারী কর্মীদের সাথে তাদের নিয়মিত যৌন সম্পর্কের কথা স্বীকার করে সজীব ত্রিপুরা। পাশাপাশি সে ইউপিডিএফ’র চাঁদাবাজির নানা তথ্যও প্রকাশ করে নিরাপত্তাবাহিনীর কাছে।

এদিকে অপহরণের বিষয়টি জানার পর মাটিরাঙ্গা জোনের ক্যাপ্টেন আসিফ আহমেদ’র নেতৃত্বে সেনাসদস্যরা পুরো এলাকায় তল্লাশী চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে স্থানীয় পাঁচ জনকে আটক করে গুইমারা থানায় সোপর্দ করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা দায়ের করেনি গুইমারা থানা পুলিশ। উল্টো মুচলেকা নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। অন্যদিকে আটককৃতদের মধ্যস্থতায় এদিন রাত ন’টার দিকে আবদুল হান্নানকে ছেড়ে দেয় সন্ত্রাসীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি বিশেষ মহল থেকে ধর্ষণকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা না করতে দীপা ত্রিপুরার পরিবারকে চাপ দেয়া হয়। ফলে তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে সাহস পায়নি। এমনকি পুলিশের পক্ষ থেকেও কোন ধরনের মামলা করা হয়নি এ ঘটনায়। ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে গণধর্ষণকারী সন্ত্রাসীরা।

বর্তমান বিশ্বে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দেশে, মহাদেশ নির্বিশেষে বিয়ে হচ্ছে সর্বত্র। কেবল বাংলাদেশের পাহাড়ী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কাছেই এটা মহা অপরাধ। যেকোনো কোনো পাহাড়ী মেয়ে কোনো বাঙালী ছেলেকে বিয়ে করলে পাহাড়ী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো ওই মেয়েকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে থাকে। এমনকি পাহাড়ী মেয়েরা বাঙালী ছেলেদের সাথে প্রেম, বন্ধুত্ব, চলাফেরা করলে পাহাড়ী সংগঠনগুলো ওই মেয়েকে চাপ দেয় ফিরে আসতে। কিন্তু ফিরে না এলে জাতি রক্ষায় নামে উল্লিখিত শাস্তি দেয়া হয়। এটাই তাদের অঘোষিত শাস্তি। পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালী মুসলিম ছেলেকে ভালবেসে গুইমারা উমাচিং মারমা, মাটিরাঙার সোনাবি চাকমা, রাঙামাটি কুতুকছড়ির রীনা ত্রিপুরা, রামগড়ের মণিকা ত্রিপুরা, এরকম আরো অসংখ্য পাহাড়ী মেয়েকে বাঙালী বিয়ে করায় অপহরণ, গণধর্ষণ, হত্যাসহ বিভিন্ন নারকীয় অভিজ্ঞতার শিকার হতে হয়েছে। এ রকম আরো একজন উপজাতীয় তরুণী খাগড়াছড়ির রেটিনা চাকমা।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারী ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সদস্য সাংবাদিক সৈকত ভদ্র। তিনি ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন খাগড়াছড়ির মেয়ে সহযোদ্ধা রেটিনা চাকমাকে। বাঙালী ছেলেকে বিয়ে করায় রেটিনা চাকমার উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। একই কারণে প্রথম আলো থেকে চাকুরী হারাতে হয় তাকে। পাহাড়ীদের চাপে তাকে চাকরী থেকে বহিস্কারের জন্য প্রথমআলোর সম্পাদক বরারব সুপারিশ করেছিলেন ঐক্যন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য। সৈকত ভদ্র সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “একবিংশ শতাব্দীতে এসে বাংলাদেশেও মেয়েদের উপর নিলামের মত মধ্যযুগীয় বর্বরতা সংঘটিত হতে পারে সেটা জেনে আপনারা অবাক হতে পারেন” । তিনি স্ত্রী রেটিনা চাকমাকে নিলামের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য জাতীয় বিবেক ও মানবিকতার কাছে আর্তনাদ করেছেন। রেটিনার চাকমার পরবর্তী জীবনের গল্প আমাদের জানা নেই।

এভাবেই বেপরোয়া গতিতে বাংলাদেশের পাহাড়ী জনপদে ঘটছে উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক নারী ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির ঘটনা। এর অধিকাংশই সাধারণ মানুষের অজ্ঞাতে থেকে যায়। ফতোয়াবাজি নিয়ে যেসব মিডিয়া সোচ্চার পাহাড়ী নারীদের উপর প্রদত্ত আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর অঘোষিত শাস্তির ব্যাপারে তারা নীরব।  বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত নারী ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির এ ঘটনাগুলো বর্বরতাকেও হার মানায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ নিয়ে কোনো মামলা করার সাহস পায়না ভুক্তভোগীর পরিবার। কিম্বা মামলা হলেও কোন ঘটনারই সুষ্ঠু বিচার হয়নি এখনো। কোন এক অদৃশ্য ক্ষমতাবলে এসব অপরাধীরা রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে বেপরোয়া এই সন্ত্রাসীরা পাহাড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে নারী নির্যাতন ও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

2 Replies to “নির্বিচারে চলছে পাহাড়ী নারীদের উপর আঞ্চলিক উপজাতীয় সংগঠনগুলো যৌন হয়রানি(ভিডিও)”

  1. Pingback: নির্বিচারে চলছে পাহাড়ী নারীদের উপর আঞ্চলিক উপজাতীয় সংগঠনগুলো যৌন হয়রানি (ভিডিও) | পার্বত্য চট্ট
  2. ভুয়া খবর পরিবেশনের কারন জানতে পারি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন