কিংবদন্তী নায়করাজের প্রস্থান
পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী নায়করাজ রাজ্জাক আর নেই। আজ বিকালে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অসুস্থ রাজ্জাককে। সেখানে তাকে কার্ডিয়াক বিভাগে ভর্তি করা হয়। ৬টা ১৩ মিনিটে মারা যান তিনি। রাজ্জাকের বয়স হয়েছিল ৭৬। তিনি নিউমোনিয়াসহ বার্ক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
নায়করাজের অন্তিম সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন তার দুই ছেলে বাপ্পারাজ ও সম্রাট, স্ত্রী লক্ষীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। কিংবদন্তী এই অভিনেতার মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শোক জানিয়েছেন।
পাঁচশ’র বেশি চলচ্চিত্রের অভিনেতা আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশের মানুষের কাছে নায়করাজ নামেই খ্যাত ছিলেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সাদা কালো যুগ থেকে শুরু করে রঙিন যুগ পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেন রাজ্জাক। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে প্রায় ২৫ বছর প্রায় একাই টেনে রেখেছিলেন এই চিত্রনায়ক।
রাজ্জাকের জন্ম ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। শৈশবেই তিনি বাবা-মাকে হারান। টালিগঞ্জের খানপুর হাইস্কুলে পড়ার সময় নাটকে অভিনয় করেন রাজ্জাক। কলেজে পড়ার সময় তিনি ‘রতন লাল বাঙালি’ নামে একটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন।
১৯৬৪ সালে বর্তমান বাংলাদেশ টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হলে সেখানে অভিনয়ের সুযোগ নেন রাজ্জাক। তখন ধারাবাহিক নাটক ‘ঘরোয়া’য় অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। কিন্তু তার লক্ষ্য ছিল চলচ্চিত্রে অভিনয় করা। আবদুল জব্বার খানের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ করার সুযোগ পান তিনি তবে নায়ক হিসেবে নয়। সহকারী পরিচালক হিসেবে।
সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার মধ্যেই ‘তেরো নাম্বার ফেকু ওস্তাগার লেন’ চলচ্চিত্রে ছোট একটি ভূমিকায় অভিনয় করেন রাজ্জাক। এরপর ‘ডাকবাবু’, উর্দু ছবি ‘আখেরি স্টেশন’সহ কয়েকটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন।
রাজ্জাকের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে, আনোয়ারা, সুয়োরাণী-দুয়োরাণী, দুই ভাই, মনের মতো বউ, জীবন থেকে নেয়া, নীল আকাশের নীচে, ময়নামতি, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, বেঈমান। পিচ ঢালা পথ, স্বরলিপি, কি যে করি, টাকা আনা পাই, অনন্ত প্রেম, বাঁদী থেকে বেগম, আনার কলি, বাজিমাত, লাইলি মজনু, নাতবউ, মধুমিলন, অবুঝ মন, সাধু শয়তান, মাটির ঘর, দুই পয়সার আলতা, কালো গোলাপ, নাজমা’সহ অসংখ্য ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রের নায়ক রাজ্জাক।
অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কারসহ অনেক সম্মাননা। ২০১৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আসরে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয় তাকে।
বদনাম, সৎ ভাই, চাপা ডাঙ্গার বউসহ প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন রাজ্জাক। তার মালিকানার রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন থেকে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়।