নানিয়ারচর থেকে বাঙ্গালীদের উৎখাত করতেই তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে

10917595_809582409112278_1011673690_n

মুজিবুর রহমান ভুইয়া, রাঙ্গামাটির নানিয়াচর থেকে ফিরে- ২ :

নানিয়রচরে ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বরের ঘটনাকে দু:খজনক উল্লেখ করে এ সহিংসতার পেছনে তৃতীয় কোন পক্ষের ইন্ধন ও স্বার্থ জড়িত রয়েছে বলে মনে করেন নানিয়ারচর জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল সোহেল আহমেদ। ইতোপুর্বেও বাঙ্গালীদের সৃজিত বাগান ধ্বংস করার কথা স্বীকার করে এ কর্মকর্তা বলেন, এটা তৃতীয় কোন পক্ষের সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনারই অংশ।

তিনি বলেন, বাঙ্গালীদের সৃজিত আনারস বাগানের লাখ লাখ চারা উপড়ে ফেলার পেছনে বাঙ্গালীদের ভিটেমাটি থেকে উৎখাত করা বলেও মনে করেন এ সামরিক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, একটা বিশেষ মহল চায় না বাঙ্গালীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠুক। যেহেতু এখানে রুটি-রুজির প্রশ্ন জড়িত। রুটি-রুজির পথ বন্ধ করতে পারলেই বাঙ্গালীরা স্বাবলম্বী হতে পারবে না। তাদেরকে দমিয়ে রাখা সম্ভব।

স্থানীয় পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের সামরিক পোশাকে প্রকাশ্যে স্বশস্ত্র মহড়া বিষয়ে বাঙ্গালীদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে নানিয়ারচর জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল সোহেল আহমেদ বলেন, এটা যারা দেখেছে তারাই ভালো করে বলতে পারবে। তিনি বলেন, নিশ্চিত না হয়ে এ বিষয়ে কোন কথা বলা যাবেনা। তবে ওদের মহড়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেননি।

সেনা সহযোগিতায় বাঙ্গালীরা পাহাড়ীদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংয়োগ করেছে মর্মে ইউপিডিএফ‘র অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিবৃতি বা অভিযোগ নতুন কিছু নয়। এটা তাদের বরাবরের কাজের ধারাবহিকারই অংশ। তারা এখানে কিছু হলেই সেনাবাহিনীকে অভিযুক্ত করে বিবৃতি দেয়া বা অভিযোগ করা নিয়মে পরিনত হয়েছে। বরং সেনাবাহিনী ঘটনার পরদিন ক্ষতিগ্রস্ত আর বিক্ষুবদ্ধ বাঙ্গালীদের লাঠিচার্জ করে নিবৃত করেছে। তা করা না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারতো বলেও মনে করেন নানিয়ারচর জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল সোহেল আহমেদ।

পাহাড়ীরা বাঙ্গালীদের মালিকানাধীন জমিতে নতুন করে বাড়ি-ঘর তৈরী করছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, বাঙ্গালীদের ভুমিহীন করতে নতুনভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে দাবী করে তিনি বলেন, বাঙ্গালীদের কিছু ভুমি পাহাড়ীদের জবর দখলে রয়েছে। বাঙ্গালীরা আদালতের রায় পেয়েছে কিন্ত উচ্ছেদ করে দখলে যেতে পারছে না। এ প্রক্রিয়া সিভিল প্রশাসন বা পুলিশ করবে, সেনাবাহিনী নয়।

8988_761596780575479_7779895359622601492_n

বাঙ্গালীদের আনারস বাগান ও সেগান বাগান ধ্বংস করার কারনেই পাহাড়ীদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ঘটনার পরপরই অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ীদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, তাদেরকে সবরকমের সহায়তা প্রদান সহ ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করে তাদের পূনর্বাসনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বাঙ্গালীদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি আমাদের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।

প্রশাসনের বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তার উপর পাহাড়ী নেত্রী কাজলী ত্রিপুরা‘র হামলা ও তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, এবিষয়ে একটি জিডি করা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি যেন ঘোলাটে না হয় বা আমাদের পূনর্বাসন প্রক্রিয়া থমকে না যায় সে কারনেই তার বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তার উপর হামলার মাধ্যমে তারা পরিস্থিতি তৈরী করে বাড়তি সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেছে বলেও মনে করেন তিনি।

বর্তমানে নানিয়ারচরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ঘটনার পরপরই বিশেষ আইন-শৃঙ্খলা সভাসহ একাধিকবার বৈঠক করেছি। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। যেন এসব ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে। তবে ঘটনার পরপরই সংশ্লিষ্ট এলাকায় সেনা টহল জোরদারের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন