নানিয়ারচরে বাঙালীদের আনারস ও সেগুন বাগান ধংসে স্থানীয় উপজাতি নেতৃবৃন্দ জড়িত- সরকারী তদন্ত কমিটির রিপোর্ট

নানিয়াচর

স্টাফ রিপোর্টার :

সম্প্রতি রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় সেগুন ও আনারস বাগান ধ্বংসের সাথে উপজাতীয় নেতৃবৃন্দ জড়িত বলে তাদের নাম প্রকাশ করেছে তিন সদস্যের সরকারি তদন্ত কমিটি। সরকারি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বগাছড়ি এলাকার চৌদ্দ মাইল এলাকার তরণীপাড়া নামক স্থানে আনারস ও সেগুন বাগান বিনষ্টের সাথে স্থানীয় পূর্ণ বিকাশ চাকমা, ইউপি সদস্য কাজলী ত্রিপুরা, কল্পনা চাকমা ও ইউপি সদস্য আনন্দ মেম্বার এর সংশ্লিষ্টতা প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হয়।  

রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন, রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাইফ উদ্দিন আহম্মেদ, জেলা আনসার ব্যাটালিয়ানের কমান্ড্যান্ট লুৎফর রহমান ও রাঙামাটি জেলা পুলিশের সদর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার চিত্ত রঞ্জন পাল।

তাছাড়া আনারস বাগান বিনষ্ট এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের উদ্ভূত পরিস্থিতিকে অধিকতর ঘোলাটে করা এবং এলাকার ভূমির মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধকে উপজীব্য করে স্থানীয় পাহাড়ী-বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টির অপপ্রয়াসের সাথে ঘিলাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান জনাব অমর জীবন চাকমা ও সাবেক্ষ্যং ইউপি চেয়ারম্যান জনাব সুপন চাকমা (সুশীল জীবন) এর ইন্ধন তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। 

অন্যদিকে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য হয়েও তারা সরকারি সুবিধা ভোগরত অথচ সামাজিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির মাধ্যমে অসদাচরণে লিপ্ত রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন।

অন্যদিকে বাঙালীদের আনারস ও সেগুন বাগান ধংসের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বগাছড়ি ইউনিয়নের চৌদ্দ মাইল এলাকা এবং সুড়িদাসপাড়া এলাকার পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি, দোকানপাট, খামার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর এবং কিয়াংঘরে ভাংচুরের ঘটনায় অগ্নিসংযোগের নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে মুন্না ও দেলোয়ারের ও স্থানীয় সুলতান, সারোয়ার, হাসিনুর, আলমগীর, আমীর, ইসলামপুরের নুরুল ইসলাম (বড় মিয়া), বগাছড়ির জহির মেম্বার, নুরুজ্জামান, সালাম মেম্বার, বগাছড়ি এলাকার রিয়াজ, পলাশ, খালেক কাঠ ব্যবসায়ী সোহেল, সেলিম জড়িত ছিল বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়।

তাছাড়া স্থানীয় ইউপি সদস্য জহির ও সালাম থাকার বিষয়টিও প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ্ করা হয়।

তদন্ত কমিটির সদস্যদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ওই ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা নিজস্ব পর্যবেক্ষণ, সাক্ষ্যপ্রমাণ ও গোয়েন্দা তথ্যসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটি এ ঘটনায় বিভিন্ন স্থরে সর্বমোট ২১ দফা সুপারিশ উত্থাপন করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, নানিয়ারচর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় অগ্নিকাণ্ড ও ভাংচুরে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও কিয়াংঘর এর ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ প্রস্তুত করেন।

এছাড়াও বিরোধীয় জায়গার রেকর্ডীয় মালিক বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। পাহাড়ীরা ও তাদের পক্ষের গণমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবীরা শুরু থেকেই বাঙালীরা পাহাড়ীদের জমি জবরদখল করে বাগান  করেছে বলে অভিযোগ করলেও পাহাড়ীরা তাদের দাবীর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। বিরোধিত জমিটি তাদের মর্মে কোনো দলিল বা রেকর্ড পাহাড়ীরা তদন্ত কমিটির কাছে পেশ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

তদন্তকালে জমির দাবীদার  নিশি কুমার চাকমা ও মজা রাম চাকমাকে পাওয়া যায়নি এবং তদন্ত কমিটির নিকট কোন সাক্ষ্যও দেননি। রাম কার্বারী, বগাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট হেডম্যান ও রাম কার্বারীকে নিশি কুমার ও মজারাম চাকমার উক্ত জায়গার মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র তদন্ত কমিটির নিকট পরবর্তীতে প্রদর্শন করার অনুরোধ জানালেও তারা তা প্রদর্শন করতে পারেনি।  কিন্তু বাঙালী তাদের দাবীর পক্ষে রেকর্ড, ডিক্রিসহ বিভিন্ন কাগজপত্র প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়।

এছাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, নানিয়ারচর বিনষ্ট হওয়া আনারস ও সেগুন বাগানের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেন। ৪ জন বাঙ্গালীর প্রায় ৫ লক্ষ আনারস গাছের বাগান ও ১ জন বাঙ্গালীর ২৪ হাজার সেগুন গাছের বাগান বিনষ্ট হয়। সরেজমিন তদন্তকালে পরিলক্ষিত উক্ত ক্ষয়ক্ষতির সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কর্তৃক দাখিলকৃত ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের মিল রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার প্রদত্ত এই তদন্ত প্রতিবেদনে পাহাড়ি জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে তদন্ত চলাকালীন সময়ে সহযোগিতা না পাওয়ার পাশাপাশি বিভ্রান্তমূলক তথ্য প্রদান করার কথাও উল্লেখ করে তদন্ত কমিটি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন