নানিয়ারচরে আবারো আনারস কেটে নিলো পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা

নানিয়ারচর-আনারস-বাগান

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :

রাঙামাটির নানিয়ারচরের নিরীহ বাঙালীদের সৃজিত বাগানের উপর থেকে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের লোলুপ দৃষ্টি যেন সরছে না। সেখানকার বাঙালীদের নিশ্চিহ্ন করতে তাদের উপর থেকে স্থানীয় ও বহিরাগত পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের কালো থাবা যেন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এনিয়ে নিজেদের ভবিষ্যত আর আগামী প্রজন্মকে নিয়ে বেশ চিন্তিত স্থানীয় বাঙালীরা।

নানিয়ারচরে একের পর এক আনারস ও সেগুন বাগান ধ্বংসের পর সে ক্ষত শুকানোর আগেই এবার রাঙামাটির নানিয়ারচরে আনারস লুটের ঘটনা ঘটেছে। এবার গাছ কেটে বাগান ধ্বংস করেই ক্ষান্ত হয়নি সন্ত্রাসীরা। এসব পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা রাতের আঁধারে সৃজিত বাগান কেটে নিয়ে গেলো বিক্রয়যোগ্য হৃষ্টপুষ্ট কয়েক হাজার আনারস। পূর্বেকার ঘটনার চার মাসের মাথায় গেল রোববার দিবাগত রাতে নানিয়ারচরের ১৭ মাইল এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

ক্ষতিগ্রস্ত আনারস চাষী মো: আব্দুস সাত্তার জানান, ঘটনার পরদিন সোমবার সকালে ১৭ মাইল এলাকায় নিজের বাগানের ক্ষতচিহ্ন দেখতে পান। ঘটনার পর চারদিন পার হলেও পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের ভয়ে থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করতে পারেননি কৃষক মো: আব্দুস সাত্তার। জানা গেছে, থানায় কোন ধরনের অভিযোগ না করতে সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে হুমকি-ধামকি অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, বিগত কয়েক মাস পরিশ্রমের পর নিজের হাতে সৃজন করা যে বাগানটিতে ফসলের হাসি ফুটেছিল শুধুমাত্র সন্ত্রাসীদের কালোথাবা বাগানটি নিস্প্রভ হয়ে গেছে। ফলগুলো যখন বিক্রয়যোগ্য হয়েছে ঠিক তখনই এমন ঘটনায় নির্বাক চাষী মো: আবদুস ছাত্তার।

নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে মো: আব্দুস ছাত্তার বলেন, আমার কোমর সোজা করে দাড়ানোর আর কোন পথ রইলোনা। কি করে বেপারীর দাদনের টাকা পরিশোধ করবে আর কি নিয়ে বছরের বাকী দিনগুলো পার করবে সে চিন্তায় বেসামাল হতদরিদ্র আনারস চাষী মো: আব্দুস ছাত্তার। পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা তার স্বপ্নকে জ্বালিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারাদিন বাগানে হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর স্বপ্ন যখন হাতের মুঠোয় ঠিক তখনই সন্ত্রাসীরা আমার সব স্বপ্নকে পুড়িয়ে দিল।

মো: আব্দুস ছাত্তারকে একজন নিরীহ চাষী দাবী করে বুড়িঘাট ইউনিয়নের মেম্বার মো: জহির উদ্দিন বলেন, বরাবরের মতোই একটি আঞ্চলিক দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা রাতের অন্ধকারে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা চায়না বাঙালীরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হোক। আর এজন্য একের পর এক এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। তবে তিনি আগের ঘটনা গুলোর বিচার হলে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতোনা দাবী করে তিনি বলেন এজন্য পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা  বার বার এসব করে পার পেয়ে যাচ্ছে।তিনি এই ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

নানিয়ারচর থানার এসআই আবদুল আউয়াল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি জানার পরপরই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষী কোনো মামলা বা লিখিত অভিযোগ করেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গেল বছরের ১৫ ডিসেম্বর রাতে নানিয়ারচরের ৩নং বুড়িঘাট ইউনিয়নের তরুণীকার্বারীপাড়া এলাকায় বাঙালীদরে সৃজিত অনারস বাগান ও সেগুন গাছ ধ্বংস করে পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা। আর এ ঘটনার ক্ষত না শুকাতেই গত ৬ জানুয়ারী রাতে ২নং নানিয়ারচর ইউনিয়নের তৈচাকমা এলাকায় বাঙালীদের আনারস ও সেগুন বাগানের উপর থাবা মারে পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা।

সে সময় দুই দফায় পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা বাঙালীদের সৃজিত প্রায় ৭ লাখ আনারস ও অর্ধ লাখ সেগুন গাছ ধ্বংস করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা স্থানীয় বাঙালীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছে। মামলা গুলোর ভবিষ্যত নিয়েও শঙ্কিত বাঙালীরা। নিজেদের রুটি-রুজির শেষ ব্যবস্থাটুকু খুইয়ে সর্বশান্ত, ঘুড়ে দাঁড়ানোর মতো কোন সুযোগ খুঁজে বেড়াচ্ছে ঠিক তখনই মাত্র চার মাসের মাথায় নানিয়ারচরে বাঙালীদের সৃজিত আনারস বাগানের বিক্রয়যোগ্য আনারস কেটে নিয়ে গেলো পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা।

রাঙামাটির নানিয়ারচরে অসহায় বাঙালীদের নিরব কান্না কি আর কখনোই থামবেনা? নিজেদের জমির ফলন্ত ফসল খুইয়ে নির্বাক নানিয়ারচরের সাধারণ বাঙালীদের পাশে কি কেউ দাঁড়াবেনা। এমন প্রশ্নই আজ ঘুরপাক খাচ্ছে নানিয়ারচরের সব হারানো নিরীহ এ বাঙালীদের মনে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন