নানিয়ারচরে আনারস ও সেগুন বাগান ধংস: বাঙ্গালীদের অভিযোগ ২০০৮ সাল থেকে ভুমিহীন করার কৌশল !

8988_761596780575479_7779895359622601492_n

চৌধুরী হারুন ( রাঙ্গামাটির নানিয়াচর বগাছড়ি থেকে ফিরে):

রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার বগাছড়িতে উপজাতীয় সন্ত্রাসী কর্তৃক দুই দফায় ৭ লক্ষাধিক আনারস বাগান ও প্রায় অর্ধলক্ষাধিক সেগুন বাগান ধংস করার পর বাগান মালিক নিঃস্ব বাঙালী কৃষকেরা গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করে বলেন, শান্তি চুক্তির পর অস্থায়ী ক্যাম্প সরকার তুলে নেওয়ার পর মুলতঃ ২০০৮ সাল থেকে আনারস বাগান ধ্বংস করে বাঙ্গালীদের ভুমিহীন করার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে উপজাতি সন্ত্রাসীরা। এসব সন্ত্রাসীদের দেশী-বিদেশী আন্তর্জাতিক এনজিও ও দাতাগোষ্ঠী আর্থিক সহায়তা দিয়ে উস্কানী দিচ্ছে। নানিয়ারচর পরিদর্শনে যাওয়া বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক গণমাধ্যমের একদল প্রতিনিধির কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ভূমির মালিক বাঙালীরা।

উল্লেখ্য ২২ দিনের মাথায় আবারো রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরের বগাছড়িতে আবারো বাঙ্গালী কৃষকদের আনারস ও সেগুন গাছের চারা উপড়ে ফেলেছে দুবৃর্ত্তরা। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে নানিয়ারচর উপজেলার বগাছড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ ১লক্ষ ৮২ হাজার আনারস চারা ও ১০ হাজার সেগুন বাগান ধ্বংস করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

সরেজমিন রিপোর্ট

নানিয়ারচর জোন কমান্ডার লে.কর্ণেল সোহেল সাংবাদিকদের জানান, ১৫ও ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪’র ঘটনা দুঃখজনক। যথাসময়ে সেনাবাহিনী উপস্থিত হওয়ায় অনেক জান মাল রক্ষা পেয়েছে। উত্তেজিত বাঙ্গালীদের রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি প্রধান সড়কে লাটি চার্জ করে নিবৃত্ত করছি ।

তিনি বলেন, আনারস বাগান ধ্বংস করে বাঙালীদের ভুমিহীন করতে নতুনভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। বাঙ্গালীদের কয়েকটি ভুমি পাহাড়ীদের জবর দখলের বিষয়ে আদালতের রায় বাঙালীরা পেয়েছে কিন্ত উচ্ছেদ করে দখলে যেতে পারছে না। এসব প্রক্রিয়া পুলিশ করবে, সেনাবাহিনী নয়।

শান্তিবাহিনীর হাতে নিহত আমজাদ হোসেনের মেয়ে রানী বেগম প্রতিবেদককে বলেন, পাহাড়ীরা ভুমি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইয়ের আনারস বাগান ধ্বংস করেছে। তাদের ছোট ছনের ছাউনির ৩/৪টা ঘর পুড়তে দেখেছি, বাদবাকী ঘরগুলো বেশী ক্ষতি পুরনের প্রত্যাশায় আঞ্চলিক দলের ক্যাডারদের উস্কানীতে নিজেদের জ্বালিয়ে দিতে শুধু আমরা নয়, প্রশাসনের লোকজনও দেখেছে। ওদের ছনের ঘর পুড়লে টিনের বা পাকা ঘর ওঠে দেশী বিদেশী ক্ষতিপুরণের টাকায়। তাই ওরা সহজেই এ কাজ করতে পারে।

রানী বেগম আরো বলেন, ২০০৮ সাল থেকে আনারস বাগান ধ্বংস করে আমাদের রেকডীয় ভুমি দখলে নিয়েছে। তাই আমাদের জান মাল ও নিরাপত্তার স্বার্থে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প আরো বৃদ্ধি করা হোক।

বগাছড়ির এলাকার নুরজাহান বেগম জানান, সেনাবাহিনীর ও র‌্যাবের পোশাক পরা অবস্থায় অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা। ঘটনার পরে ক্ষতিগ্রস্ত আনারস বাগান দেখতে যায় বগাছড়ির বাঙ্গালীরা । এসময় প্রায় ৪/৫শ গজ দুরে পাহাড়ে সেনাবাহিনীর পোশাক পরা সশস্ত্র অবস্থায় তাদের দেখা গেছে, যদি নিরাপক্তা বাহিনীর লোকজন না থাকতো তাহলে সব বাঙ্গালীকে লাশ হয়ে ফিরে আসতো।

নুর নাহার বেগম জানান, আমাগো ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছি ঠিক কিন্ত আমাদের জন্য কোন নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই। প্রধানমন্ত্রী হয়ে শেখ হাসিনা মা বাপ ভাইদের হত্যাকারীদের ফাঁসি দিয়েছে, এখন যুদ্ধ অপরাধীদের ফাঁসি দিচ্ছে, কিন্তু পার্বত্য আমাদের বাপ, চাচা- ভাই বোনদের হত্যাকারীর এখনো বিচার করতে পারে নাই।

ক্ষতিগ্রস্থদের অভিযোগ, মঙ্গলবার মধ্যরাতে কে বা কারা নতুন করে বগাছড়ির বাঙালিদের প্রায় পাঁচ একর আনারস বাগানের ১ লক্ষ ৮২হাজার আনারসের চারা এবং ১০ হাজার সেগুনের রোপিত চারা উপড়ে ফেলে।

বুধবার সকাল ৯টার দিকে আনারস বাগানের মালিক মো. আবু জাফর, মো. মিজান, মো. মামুন, জাকির, মোশারফ, ইমাদুর এবং সেগুন বাগানের মালিক ইদ্রিস, জাফর বাগানে গিয়ে দেখতে পায় নিজেদের বাগানের চারা উপড়ে ফেলা হয়েছে। তারা এ ঘটনার জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী করেছে। আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএসও দাবী করেছে ইউপিডিএফ এই ঘটনা ঘটিয়েছে। সকালে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ভুমি রক্ষা কমিটির আহবায়ক মিজানুর রহমান বলেন, ১৪ মাইল এলাকায় বাঙ্গালীদের ভুমির ওপর নির্মিত ঝুপড়ি ঘর, ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ১৫ পরিবারকে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা এবং ৬২ পরিবারকে ৩ বান্ডিল টেউটিন নগদ ৫৭ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। আরো বিভিন্ন এনজিও উপজাতী সুশীল সমাজ অনুদান দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঙ্গালীদের নগদ ২০ হাজার টাকা এবং আনারস বাগান এর ঋণ মওকুফ করার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসন।

উল্লেখ্য, ২২ দিনের মাথায় আবারো রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরের বগাছড়িতে আবারো বাঙ্গালী কৃষকদের আনারস ও সেগুন গাছের চারা উপড়ে ফেলেছে দুবৃর্ত্তরা। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে নানিয়ারচর উপজেলার বগাছড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ ১লক্ষ ৮২ হাজার আনারস চারা ও ১০ হাজার সেগুন বাগান ধ্বংস করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর রাতে বাঙ্গালীদের আনারস বাগান কেটে দেয়ার জেরে পাহাড়ীদের বাড়ী ঘরে আগুন দেয়া হয়। এটির রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো এ ঘটনা ঘটায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে । যেই সব জায়গা পুড়ে গেছে সেখানে সরকারের আর্থিক সহায়তায় ঘর না করে অন্যর জায়গার ওপর মজবুত করে ভুমি দখল করতে গিয়ে আদালতে ১৪৫ ধারা স্থিতি অবস্থায় আছে। ১৪ মাইল এলাকায় বিতর্কিত জায়গায় নির্মিত ঘরে নিরাপত্তা বাহিনী পাহারা দিচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন