দীঘিনালার বাবুছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে ২১ পরিবার: ষড়যন্ত্রের অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের

News pic (Al amin)

মো: আল আমিন :

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় আইনশৃংখলা বাহিনী-গ্রামবাসি সংঘর্ষের দুই দিন পর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ২১ পরিবার বাবুছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রিতরা বলছে, বিজিবি সদর দপ্তর স্থাপন কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় আশ্রিতদের স্বাভাবিক চাল-চলনে বাধা সৃষ্টি হওয়া এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর হুমকিতে তারা ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

অপরদিকে আইনশৃখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয় এ ধরনের অভিযোগ সত্য নয়, কারো চাল-চলনে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়নি। ষড়যন্ত্রের কৌশল হিসেবে তারা সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। সূত্র মতে, মিডিয়ার প্রচারণা, দেশী বিদেশী শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহানুভূতি আকর্ষণ করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে একটি গোষ্ঠীর প্রচারণায় এ কৌশল অবলম্বন  করেছে তারা।

এদিকে, বাবুছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বেশ কয়েক পরিবার অবস্থান করছেন। অবস্থানকারীদের খোঁজ খবর নিয়ে তালিকা করছিলেন, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর উপজেলা সংগঠক কিশোর চাকমা।

কিশোর চাকমা জানান, ২১ পরিবারের ৭৭ জন সদস্য বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। বিদ্যালয়ে অবস্থানকারী সাধনা চাকমা (২৬), কমলেন্দু চাকমা (৫০) চাহেলি চাকমা (২৬) এবং পিংকি চাকমা (৪২) জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বৃহষ্পতিবার হাসপাতাল ছাড়ার পর বিদ্যালয়ে উঠেছেন। কেন বাড়ি ছেড়ে বিদ্যালয়ে উঠেছেন এমন প্রশ্ন করা হলে, বিষয়টি এড়িয়ে যান সংশ্লিষ্টরা।

 দীঘিনালা ইউপি চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু কেউ কথা না শোনায় সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে।’ এখন আর বিষয়টির প্রতি কোন আগ্রহ নেই বলেও জানান তিনি।

তবে সার্বিক ঘটনা নিয়ে ইউপিডিএফ নেতা কিশোর চাকমা বলেন, ‘বিজিবি’র অধিগ্রহনকৃত জায়গায় বসবাসকারীদের জমির কাগজ না থাকলেও পাহাড়িরা যেখানে জুম চাষ করে সে জমির মালিক চাষকারী, এটা তাদের প্রথাগত অধিকার। সে বিবেচনায় মানবিক কারণে এ এলাকা থেকে বিজিবি অন্যত্র সরে গেলেই সমাধান হয়।’

এব্যাপারে বাবুছড়া ৫১ বিজিবি অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আবুল কালাম আজাদ জানান, অধিগ্রহনকৃত জায়গার মধ্যে ১৪ পরিবারের ১৬টি ঘর ছিল। এ ঘরগুলোর মধ্যে বসবাসকারীর সংখ্যা ছিল ২৭ জন। ঘরগুলো এখনো রয়েছে।

তিনি আরো জানান, বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলো অধিগ্রহনকৃত জায়গার নয়, প্রত্যেকেই পার্শ্ববর্তী গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। মূলত অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে এখানে অস্থায়ী ঘর তুলে বসবাস করছিল। তবে কারো চলা ফেরায় কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়নি বা কাউকে তাড়িয়ে দেয়া হয়নি। অধিনায়ক বলেন, ‘হয়তো নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তারা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে।’

দীঘিনালা থানার ওসি শাহাদাত হোসেন টিটো পার্বত্যনিউজকে জানান, ৫১ বিজিবি’র সুবেদার মেজর গোলাম রসুল বাদি হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় ১১২ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। সরকারী কাজে বাধাদান, সরকারী স্থাপনা ভাংচুরসহ হামলা করে সরকারী কর্মচারীদের আহত করে অস্ত্র ভাংচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে।

গ্রেফতাকৃতরা সকলেই মামলার এজাহারভূক্ত নামীয় আসামি বলে জানিয়েছেন ওসি। দীঘিনালার বাবুছড়ায় ৫১ বিজিবি’র সদর দপ্তর স্থাপন নিয়ে স্থানীয় পাহাড়ীদের সাথে বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে মঙ্গলবার তারা বিজিবি ক্যাম্পে হামলা করলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সে ঘটনায় বিজিবি’র ৫ ও পুলিশের ১ সদস্যসহ ২২ জন আহত হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন