দীঘিনালার বাবুছড়ায় ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা ও উপজাতি কর্তৃক হামলার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলেন ঢাকা থেকে আগত সাংবাদিকবৃন্দ

BGB Zone Pic 1

উপজেলা প্রতিনিধি, দীঘিনালা :

খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়ায় ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা ও স্থানীয় উপজাতি কর্তৃক জোন সদরে হামলার ঘটনা সম্পর্কে জানাতে ঢাকা থেকে আগত সাংবাদিকদের সাথে মুখোমুখি হয়েছেন মেজর মোঃ কামাল উদ্দিন। শুক্রবার সকাল ১০ টায় বাবুছড়া জোন সদরে ঢাকা থেকে আসা বিভিন্ন মিডিয়া কর্মীদের সাথে কথা বলেন বাবুছড়া বিজিবি জোন সদর দফতরের উপ- ধিনায়ক মেজর মোঃ কামাল উদ্দিন। এসময় খাগড়াছড়ি জেলা ও দীঘিনালা উপজেলার স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

বিজিবি সূত্র জানায়, খাগড়াছড়ি সেক্টরের দায়িত্বপূর্ণ এলাকার মেইন পিলার ২২৭০/৩ এস হতে ২২৮৪/৩ এস পর্যন্ত ৪৭ কিঃ মিঃ অরক্ষিত সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ চোরাচালান নিরোধ এবং বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী তৎপরতা দমন কল্পে দীঘিনালা উপজেলাস্থ বাবুছড়ায় একটি স্থায়ী বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর স্থাপনের জন্য ২০০৪ সালে এল এ মামলা নং ০২(ডি)/২০০৫ মূলে ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৩.৯০ একর এবং খাস খতিয়ানে ৩১.১০ একরসহ সর্বমোট ৪৫.০০ একর ভূমি হুকুম দখল করা হয় এবং সে অনুযায়ী ২০০৪ সালে ৪৫ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব প্রেরণ করা হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২৯ ডিসেম্বর ২০০৪ তারিখ প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করা হয়।

কিন্তু, সরেজমিনে জায়গা পরিদর্শনে গেলে স্থানীয় কিছু উপজাতি নারী-পুরুষ জমায়েত হয়ে ঐ জমির মালিকানা তাদের বলে দাবী করে। সর্বশেষ সবকিছু পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক ৪৫.০০ একরের মধ্যে ব্যক্তি মালিকানা জমি বাদ দিয়ে ২৯.৮১ একর জমি বিজিবির কাছে জায়গার অধিগ্রহন করার জন্য ১৬ জুলাই ২০১৩ কার্যক্রম গ্রহন করেন। ভূমি অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী ০২.২০ একর ব্যাক্তি মালিকানা হচ্ছে তিনজন ব্যাক্তি: যথাক্রমে, বীর সেন চাকমা (০১.৫০ একর), পিদিয়া চাকমা (০.৭০ একর) ও রবিজর চাকমা (০.৭০ একর)।

এদিকে প্রস্তাবিত ভূমির ২৭.৬১ একর জায়গার কিছু অংশের মধ্যে একটি পাহাড়ে সেনাবাহিনী ও আনসার ক্যাম্প, একটি পাহাড়ে সেনাবাহিনীর হেলি প্যাড, একটি পাহাড় পতিত অবস্থায় রয়েছে। অবশিষ্ট কিছু অংশে ৯৩৪, ৯৩৫, ৯৩৬ দাগে ৭টি পরিবার টিনের চালযুক্ত বেড়ার ঘড় নির্মান করে বসবাস করে আসছেন। বসবাসকারী পরিবারের প্রধানগন হচ্ছেন: ১. নতুন চন্দ্র কার্বারী, ২. প্রদিপ চাকমা, ৩. শুকুমার চাকমা, ৪. প্রিয় রঞ্জন চাকমা, ৫. বাবুল চাকমা, ৬. বিনয় চাকমা ও ৭. জ্ঞানেন্দ্র চাকমা।

এদিকে, গত ১৬ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা (এল এ শাখা) কর্তৃক অধিগ্রনকৃত ২৯.৮১ একর ভূমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৫, ৩৮, ২৬৮ টাকা সেক্টর সদর দফতর, খাগড়াছড়ি প্রেরণ করা হয়। এবং সর্বশেষ গত ১৫ মে ২০১৪ বাবুছড়ায় জমি অধিগ্রনকৃত হস্তান্তর/গ্রহন করে ৫১ বিজিবি’র কার্যক্রম শুরু করে।

বিজিবি সূত্র আরও জানায়, গত ১০ জুন মঙ্গলবার বিকাল ৫ টার দিকে ২০-২৫ জন স্থানীয় উপজাতি নারী বিজিবি হেলিপ্যাডে জোরপূর্বক কলাগাছ লাগাতে আসে। এসময় বিজিবি সদস্যরা বাধা প্রদান করে তাদের নানা ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করলে তারা তা না শুনেই কলাগাছ লাগাতে থাকে। তারা বিজিবি জোন সদরের সীমানা পিলার উপরে ফেলে এবং বিজিবি সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে আরও উপজাতি নারী-পুরুষ জড়ো হয়ে বিজিবি ক্যাম্পে অতর্কিত হামলা করে। তারা বিজিবি’র চেকপোস্ট ভাঙচুর করে, বিজিবি’র রান্না ঘড়ে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুর এবং ধারালো দা দিয়ে রান্না ঘরের বেড়া কেটে ফেলে। সরেজমিনে তার প্রমানও মিলেছে। বিজিবি জোন সদরে প্রায় ২০০-২৫০ জন উপজাতি নারী পুরুষ অংশ নেয় বলে জানিয়েছে বিজিবি সূত্র। এতে স্থানীয় উপজাতি যুবকরাও অংশ নিয়েছিলো। হামলায় ৬ বিজিবি সদস্য ও ১ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় স্থানীয় উপজাতিরা জোন সদর স্থাপন কাজে বাধা প্রদান করে।

বাবুছড়া ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদরের উপ-অধিনায়ক মেজর মোঃ কামাল উদ্দিন উপজাতি কর্তৃক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিজিবি ক্যাম্প, রান্নাঘর, চেকপোস্ট, উপজাতিদের ধারালো দায়ের কোপে ভেঙে যাওয়া দুটি অস্ত্র ও জোন সদরের এলাকা ঘুরে দেখান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “দীঘিনালার বাবুছড়ায় ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা ও উপজাতি কর্তৃক হামলার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলেন ঢাকা থেকে আগত সাংবাদিকবৃন্দ”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন