দীঘিনালার অপরূপ তৈদু ঝর্ণা: প্রচারের আড়ালে এখনো

ভ্রমণ

toidu jhorna pic 1

দিদারুল আলম রাফি, উপজেলা প্রতিনিধি, দীঘিনালা:

খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় সবুজ পাহাড় আর বুনো জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত নয়নাভিরাম ঝর্ণা দুটির নাম তৈদু ঝর্ণা। ত্রিপুরা ভাষায় ‘তৈদু’ মানে হল ‘পানির দরজা’ আর ছড়া মানে ঝর্ণা। অসাধারণ সৌন্দর্য আর প্রাকৃতিক বৈচিত্রতা এই ঝর্ণাকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। খাগড়াছড়িতে যে কয়টি দর্শনীয় স্থান রয়েছে তৈদুছড়া তাদের মধ্যে অন্যতম।

অনেকের দাবি রাঙামাটির সুভলং ঝর্ণা এবং খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পট আলুটিলার রিছাং ঝর্ণার চেয়েও বড় এই ঝর্ণা। তৈদু ঝর্ণাকে ঘিরে পাশে রয়েছে আরো ৩টি তুলনামূলক ভাবে ছোট ঝর্ণা এবং ২টি মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত। সব মিলিয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে আকর্ষর্ণীয় এক পর্যটন স্পট তৈদুছড়া এলাকা।

তবে বিলম্বে হলেও এ ঝর্ণার সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। এর আগে মাঝে মধ্যে হাতেগোনা দুই চারজন দর্শনীয় স্থানটিতে গেলেও অনেকের কাছেই ছিল অপরিচিত। স্থানীয়দের  দাবি এখনো প্রচারের আলোর বাইরে আড়ালেই রয়ে গেছে এই ঝর্ণাটি। ঠিকমতো প্রচার করা গেলে এটি হতে পারে পাহাড়ের অন্যতম পর্যটন স্পটও।

যদিও বর্তমানে তৈদু ঝর্ণা দেখতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটক আসতে শুরু করেছে। দূর্গম এলাকায় এবং যাতায়াতের সুবিধা না থাকায় প্রায় ১ ঘন্টার পথ পায়ে হাঁটার কারণে কিছুটা ভোগান্তিও পেতে হচ্ছে পর্যটকদের। ইতিমধ্যে যাতায়াত  ব্যবস্থাসহ ঝর্ণা এলাকাকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রশাসন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ঝর্ণায় যাওয়ার বেশকিছু  স্থানে পাহাড় কেটে রাস্তাও তৈরি করা হয়েছে। তবে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন পর্যটকগণ। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৬ কিঃ মিঃ দুরে ঝর্ণাটির অবস্থান।

স্থানীয় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী এ ঝর্ণাটির নাম দিয়েছে তৈদু ঝর্ণা। ত্রিপুরা ভাষায় তৈ অর্থ পানি আর দু অর্থ ধারা। তৈদু পাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা অজিত ত্রিপুরা জানান, সে গ্রামের লোকজন পাহাড়ে জুম চাষ করতে গিয়ে এ ঝর্ণা আবিস্কার করে। তারা ঝর্ণাটির নাম দেয় তৈদু ঝর্ণা

সরেজমিনে ঝর্ণা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তৈদু ঝর্ণাতে পৌছার পূর্বে তৈদু ছড়াতে প্রায় ১কিলোমিটার পর্যন্ত রয়েছে বিভিন্ন প্রাণীর আকৃতির বড় বড় পাথর। কিছু পাথর দেখলে মনে হয় একপাল হাতি বাচ্চা নিয়ে ছড়ার পানিতে শুয়ে রয়েছে। পাশেই মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত। পানির  নিচে প্রাকৃতিকভাবে পাথর দিয়ে ঢালাই করা। পরিস্কার পানির স্রোতে উপড়ে ছিটে উঠা পানির ফোয়ারা দেখলে সেখানে ভিজে গোসল করার লোভ সামলানো কারো সম্ভব না।

স্থানীয় কলেজে পড়ুয়া বেশ  ক’জন ছাত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা রাঙ্গামাটির সুভলং ঝর্ণা এবং খাগড়াছড়ির আলুটিলার রিছাং ঝর্ণাতে গিয়েছে; কিন্তু তাদের কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে তৈদু ঝর্ণা। কারণ তৈদু ঝর্ণাতে পড়ন্ত পানির মাঝখানে বসার জন্য তিন স্তরে তিনটি জায়গা রয়েছে। যে সুবিধা অন্য ঝর্ণাগুলোতে নেই। এবং তৈদু ঝর্ণা পাশের জলপ্রপাতগুলো আরো বেশি আকৃষ্ট করে। তাই দূর্গম এলাকায় হলেও কয়েকবার বন্ধু বান্ধব নিয়ে তৈদু ঝর্ণাতে গিয়েছেন তিনি।

চট্টগ্রাম এবং ঢাকা থেকে ঝর্ণা দেখতে আসা সুজন, রাসেল, অমিতসহ আরো বেশ’কজন পর্যটকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা আরো ঝর্ণা দেখেছেন, তৈদু ঝর্ণা সবচেয়ে সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকর। তবে যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে কিছুটা কষ্ট হলেও ঝর্ণায় পৌঁছার পর কষ্ট অনূভব হয়না। তবুও যাতায়াত ব্যবস্থার আরো দ্রুত উন্নয়নের দাবী জানান তারা।

যেভাবে পৌছবেন
খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে গাড়িতে রওয়ানা হয়ে ৯ কিলোমিটার দূরে নয় মাইল নামক স্থান থেকে যেতে হবে সীমানা পাড়া। সেখান থেকে পায়ে হাঁটা পথ শুরু। মাত্র এক ঘন্টা হাঁটার পরই পৌছে যাবেন  রূপবতী তৈদু ঝর্ণাতে। এছাড়াও দীঘিনালা সদর থেকে দুই কিঃ মিঃ সামনে জামতলি দিয়ে মায়াফাপাড়া এলাকা হয়ে যাওয়া যাবে তৈদুছড়া ঝর্ণায়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “দীঘিনালার অপরূপ তৈদু ঝর্ণা: প্রচারের আড়ালে এখনো”

  1. Pingback: নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলা নিকেতন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন