খাগড়াছড়িতে পর্যটকের ছদ্মাবরণে চলছে ধর্মান্তরকরণ মিশন

ppp

এইচ এম প্রফুল্ল, খাগড়াছড়ি:

খাগড়াছড়িতে পর্যটকের ছদ্মাবরণে খিস্টান মিশনারির সাথে জড়িত বিদেশী নাগরিকদের আনাগোনা বেড়েছে। চলছে নানা প্রলোভন দেখিয়ে পাহাড়িদেন ধর্মান্তরিত করার মিশন। এতে ক্ষুদ্র জাতিগুলোর অস্তিত্ব পড়েছে হুমকির মুখে। দেখা দিয়েছে সম্প্রীতি বিনষ্টের আশংকা ।

অভিযোগ রয়েছে, গত প্রায় এক দশক ধরে খাগড়াছড়িতে চলে আসছে খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তর প্রক্রিয়া। পর্যটকের ভিসা নিয়ে খ্রিস্টান মিশনারি বিদেশীরা খাগড়াছড়ি আসে এবং প্রত্যন্ত পাহাড়ি পল্লীতে ঢুকে গরীব ও সরলমনা পাহাড়িদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণে কৌশলে বাধ্য করে। এ ক্ষেত্রে অগ্রনী ভূমিকা পালন করছে অর্থ লোভী কিছু পাহাড়ি নেতা।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত এক দশকে খাগড়াছড়ি জেলায় প্রায় ২০ ভাগ পাহাড়ি খ্রিস্ট ধর্মগ্রহণ করেছে। তবে তাদের মধ্যে মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোক বেশি।

জানা গেছে, গত রবিবার সকালে খাগড়াছড়ি শহরের চন্দনপতি কমিউনিটি সেন্টারে গোপনে ‘দি রিডিমড খ্রিস্টিয়ান চার্চ অব গড’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে একটি ধর্মীয় সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে ধর্মীয় সভার পাশাপাশি নৃত্যেরও আয়োজন করা হয়। ঐ কমিউনিটি সেন্টারে নাচ-গানের আড়ালে খ্রিস্ট ধর্মে প্রচার ও পাহাড়িদের ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঐ কমিউনিটি সেন্টারে ঢুকতে গেলে বাধা দেওয়া হয়।  দেখা দেয় উত্তেজনা। খবর পেয়ে ছুটে আসে মারমা স্টুডেন্ট ফোরামের নেতৃবৃন্দ। এক পর্যায়ে গোয়েন্দা লোকজন সংগঠনটির বৈধতা ও বিদেশীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চাইলে আয়োজকরা দ্রুত সটকে পড়েন। । পরে সাম্প্রদায়িক হুমকির আশংকায় তাদের খাগড়াছড়ি ছাড়তে বলা হয় এবং প্রশাসনের নির্দেশে বিদেশীদের দুপুর নাগাদ খাগড়াছড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

খোঁজ নিয়ে ১২ দেশি ও বিদেশী নাগরিকের নাইজেরিয়ান নাগরিক বেনু স্টেট-২ এর সহ প্রোভিন্সিয়াল প্যাস্টর আবিজিদে মাইকেলের নাম জানা গেছে। অন্য ১১ জনের মধ্যে নাইজেরিয়া, লাইব্রেরিয়া,ক্যামেরুন ও দুই বাংলাদেশি  নাগরিক রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, গত শনিবার সন্ধ্যায় দুই বাংলাদেশি ও ১০ বিদেশি নাগরিক পর্যটক পরিচয়ে খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলে উঠেন। কিন্তু মোটেল রেজিস্টারে তারা কেউই সঠিক তথ্য ও আগমনের উদ্দেশ্য উল্লেখ করেননি।
খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা জানান, পর্যটক হিসেবে তারা মোটেলে উঠলেও রবিবার দুপুরে তড়িঘড়ি করে মোটেল ত্যাগ করে।
একটি সূত্র জানায়, প্রিন্স বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তি কিছু দিন আগে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের পানখাইয়াপাড়াস্থ জীতেন নারায়ন ত্রিপুরার বাড়ি ভাড়া নিয়ে গোপনে ‘দি রিডিমড খ্রিস্টয়ান চার্চ অব গড’ নামে একটি মিশনারি প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু করেন। এর আগে এই ধর্ম প্রচারকারী প্রিন্স কৌশলে জেলার গুইমারা থেকে এক মারমা নারী বিয়ে করেন। সেই মারমা স্ত্রীর সুযোগে প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র পাহাড়িদের নানা প্রলোভনে খ্রিস্টান ধর্মে দিক্ষিত করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে রবিবার বিদেশিদের উপস্থিতিতে ধর্ম সভার আয়োজন করা হয়।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের আশংকায় তাদের পুলিশ প্রহরায় খাগড়াছড়ির শেষ সীমানায় পৌছে দেওয়া হয়েছে।
খাগড়াছড়ি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি চাইথোয়াই মারমা জানান, তিনি পেশাগত কারণে আয়োজকদের কাছে কিছু তথ্য জানতে চাইলে আয়োজকরা তার দিকে তেড়ে আসেন। তিনি অভিযোগ করেন, সংগঠনটির ব্যানারে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র পাহাড়িদের খ্রিস্টান ধর্মে ধমান্তরিত করার পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। এ নিয়ে মারমা সম্প্রদায়ের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

খাগড়াছড়ি খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারকারীদের নেতৃস্থানীয় সংগঠন ‘গসপেল ফর এশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কিরণ রোয়াজা নিজেও স্বীকার করে বলেন, কিছু কিছু মিশনারি দরিদ্র পাহাড়িদের ধর্মান্তরিত করে চলেছে। গত এক দশকে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর অন্তত ১১ হাজার মানুষ খ্রিস্টান্ ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন। তিনি ‘দি রিডিমত খ্রিস্টায়ান চার্চ অব গড’ নামে প্রতিষ্ঠানটিকে ভুয়া বলে অভিহিত করেন।

খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশের গোয়েন্দা অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো: এনামুল হক জানান, তারা পর্যটক হিসেবে খাগড়াছড়ি প্রবেশ করে। তাদের প্রত্যেকের ভিসার মেয়াদ ২০১৪-১৫ সাল পর্যন্ত রয়েছে। তবে মিশনারি কর্মকান্ডের কোন কাগজপত্র নেই। তাই তাদের  খাগড়াছড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে ‘দি রিডিমড চার্চ অব গড’র প্রধান প্রিন্স বিশ্বাসের কাছে ফোন করা হলে এ নিয়ে কথা বলতে অপারকতা প্রকাশ করেন এবং ফোন কেটে দেন।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো: মাসুদ করিম জানান, ঐ বিদেশীদের পর্যটক হিসেবে খাগড়াছড়ি আগমনের জন্য আবেদন করলেও আবেদনটি যাচাই-বাছাই করার আগেই বিনা অনুমতিতে বিদেশিরা খাগড়াছড়ি এসেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন