Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে প্রথম একুশে পদক পেলেন মহালছড়ির মংছেনচীং মংছিন রাখাইন

মংছেচীন

স্টাফ রিপোর্টার:

রাখাইন জাতির জীবন ও সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করায় এ বছর একুশে পদক পাচ্ছেন নিভৃতচারী সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক মংছেনচীং মংছিন রাখাইন। মংছেনচীং মংছিন রাখাইনের দাবী সমগ্র বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম একুশে পদক পেলেন। সঙ্গতকারণে আনন্দে উচ্ছসিত মংছেনচীং মংছিন পার্বত্যনিউজের কাছে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় তার পরিবার, রাখাইন সম্প্রদায় ও সমগ্র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।

মংছেনচীং মংছিন খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলা সদর এলাকার মানিক ডাক্তার পাড়ার বাসিন্দা হলেও জন্ম ১৯৬১ সালের ১৬ জুলাই কক্সবাজারের চাউল বাজার সড়কের ঐতিহ্যবাহী রাখাইন বৌদ্ধ পরিবারে। পিতা স্বর্গীয় উ অংচাথোয়েন ও মাতা স্বর্গীয় ড- মাক্যচীং। ৫ ভাই ও এক বোনের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ মংছেনচীং মংছিন। কক্সবাজারের বিভিন্ন স্কুল, কলেজে শিক্ষা গ্রহণ করলেও পারিবারিক কারণে উচ্চ শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারেননি। তবে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর বাইবেল বিষয়ে ডিপ্লোমা পাশ করেন। বৈবাহিক সূত্রে কক্সবাজার থেকে মহালছড়িতে এসে বসবাস শুরু করেন তিনি।

মংছিন রাখাইন ছাত্রজীবন থেকেই তিনি বিভিন্ন দেশি বিদেশি শীর্ষস্থানীয় পত্র-পত্রিকায় রাখাইন জাতির ইতিহাস, ধর্ম, সংষ্কৃতি, সাহিত্য, কৃষ্টি প্রভৃতি বিষয়ে লেখালেখি করে আসছিলেন। মূলত রাঙামাটি থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বনভূমিতে কিশোর বয়স থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। বর্তমানে রাঙামাটি থেকে প্রকাশিত গিরিদর্পন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি হিসাবে কর্মরত।

তার লেখার বিষয় রাখাইন জাতির ধর্মীয় ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, নৃত্য, চারুকলা, জীবনযাপন প্রভৃতি। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের এনলিস্টেড কথিকা লেখক তিনি। বাংলা, ইংরেজি, পালি, রাখাইন, মারমা, বার্মিজ ও চাকমা ভাষায় লিখতে পারদর্শী তিনি। ১৯৮৭-৯৪ ইং সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের পুপুলেশন কনসার্ণ পরিচালিত রাখাইন সমন্বিত পরিবার কল্যাণ প্রকল্পের কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার প্রকল্প পরিদর্শক পদে কর্মরত ছিলেন।

পাশাপাশি ঢাকাস্থ ফোকলোর সোসাইটি, ও বিশ্ব বাংলা সাহিত্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তিনি। গবেষণা ও সাহিত্য রচনার স্বীকৃতি স্বরূপ দেশে বিদেশে অনেক পুরস্কার অর্জন করেছেন।

মংছেনচীং মংছিনের সমগ্র পরিবার সাহিত্য ও সাংস্কৃতি আবহে গড়ে ওঠা পরিবার। তার স্ত্রী শোভা ত্রিপুরা মহালছড়ি উপজেলার চৌংড়াছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে বর্তমানে কর্মরত আছেন। পাশাপাশি তিনি কবিতা ও সাহিত্য রচনার সাথে জড়িত। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১২।

তার  ২ কন্যার মধ্যে জৈষ্ঠ্য কন্যা উ এনু (পুতুল) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত। পুতুল ২০০১ সালে বঙ্গবন্ধুর উপর অনুষ্ঠিত জাতীয় রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। এবং কনিষ্ঠ কন্যা চেনচেনু (তুলি) লিবারেল আর্টস বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত। তিনিও জাতীয় রচনা প্রতিযোগিতায় রৌপ্য পদক ও জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সারা বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম হয়ে সরকারী খরচে ভারত সফর করেছেন। স্ত্রী ও সন্তানদের সাফল্যে গর্বিত মংছেনচীং মংছিন  বর্তমানে স্ত্রী কন্যাদের নিয়ে তিনি মহালছড়িতে বসবাস করছেন বলে জানান।

মংছেনচীং মংছিনের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১২। এর মধ্যে বাংলাদেশের রাখাইন পরিচিতি, রাখাইন ইতিবৃত্ত, সৈকত নন্দিনী, রাখাইন বাংলা কথোপকথন ইত্যাদি। এছাড়াও বর্তমানে তার কাছে বেশকিছু অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি রয়েছে।

নিজের সম্পর্কে মংছেনচীং মংছিন জানান, তিনি বাংলাপিডিয়ার লেখক প্যানেলের একজন, তাছাড়া বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ড. মাজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে ফোকলোর নিয়ে কাজ করেছেন। তার সাহিত্যে আসার পেছনে কার অবদান জানতে চাইলে মংছেনচীং মংছিন পার্বত্যনিউজকে জানান, রাঙামাটির গিরিদর্পন পত্রিকার সম্পাদক মকসুদ সাহেব আমার লেখালেখির গুরু। তার মাধ্যমেই আমার লেখালেখি শুরু, তার উৎসাহেই লেখালেখির চালিয়ে যাওয়া, আজকের আমাকে তার প্রডাক্ট বললে বেশী বলা হবে না। শুধু আমি নই, আমার স্ত্রীও তার উৎসাহেই লেখালেখি চালিয়ে গেছেন। আমাদের পুরো পরিবার তার কাছে কৃতজ্ঞ।

উল্লেখ্য, গত বুধবার ২০১৬ সালের একুশে পদক প্রদানের জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর সহকারী সচিব (প্রশাসন-১) মো. জিয়াউদ্দিন ভুঁঞা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলা সদরের মংছেনচীং মংছিনসহ ১৬ জন বিশিষ্ট নাগরিকের নাম ঘোষণা করা হয়। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাঁদের হাতে পদক তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে গতবছর একই জেলা খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার পাশ্ববর্তী পানছড়ি উপজেলার মদন কার্বারী পাড়ায় ১৯৫১ সালের ৬ এপ্রিল জন্মগ্রণকারী নিভৃতচারী গবেষক প্রভাংশু ত্রিপুরা বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: একুশে পদক, মংছেনচীং মংছিন, মহালছড়ি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন