উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রিপোর্ট করে প্রথম আলো তার চিরাচরিত চরিত্র জানান দিলো আরো একবার

পাঠকের অভিমত

আবু উবায়দা:

খাগড়াছড়ি জেলায় চাঁদাবাজি নিয়ে দেশের প্রথম সারির দৈনিক “প্রথম আলো” পত্রিকার রিপোর্টটি পড়লাম। চমৎকার তথ্যহুল রিপোর্ট করা হয়েছে। অরুণ কর্মকার এবং জয়ন্তী দেওয়ান নামক দুজন ব্যক্তি সরেজমিনে তদন্তপূর্বক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পার্বত্য চট্ট্রগ্রামের সর্বাধিক জনপ্রিয় গণমাধ্যম পার্বত্যনিউজও এ প্রতিবেদনটি রি পাবলিশ করেছে যা প্রত্যাশিত নয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদাবাজির এই প্রতিবেদন এবং আমার বাস্তব অভিজ্ঞতার পার্থক্য নিম্নে কিছুটা তুলে ধরলামঃ
প্রতিবেদকদ্বয় তাদের লেখনীয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন যে, তারা কথিত সুশিলসমাজপন্থী। তাই অন্তত সুকৌশলে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদকে পাহাড়ে বিশৃংঙ্খলাকারী হিসেবে তারা উপস্থাপন করেছেন।

বাস্তবিকপক্ষে পার্বত্য বাঙ্গালী সংগঠন বছরে কয় টাকা চাঁদাবাজি করেন এবং প্রশাসন কয়জন চাঁদাবাজকে এ যাবৎ গ্রেফতার করেছেন তা কিন্তু তারা উল্লেখ করেননি।

সরজমিনে তদন্তে গিয়ে তারা পানছড়ি উপজেলার এক বাঙ্গালী চাঁদা কালেক্টরের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। ইকরাম ছদ্মনামে এই বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের চাঁদা কালেক্টরের বক্তব্য শুনে বুঝতে বাকি থাকে না যে, এই প্রতিবেদন কতটুকু বাস্তব এবং সত্য তথ্যপ্রমাণভিত্তিক।

যেখানে বাঙ্গালী সংগঠনগুলো অর্থের অভাবে একটি কর্মসূচি পালন করতে হিমসিম খায়, সেখানে মাসিক বেতনে চাঁদা কালেক্টর পোষা সত্যিই হাস্যকর।

তবুও যুক্তির খাতিরে মেনে নিলাম পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ চাঁদাবাজ। খাগড়াছড়ি শহরেও ইকরামের মতো অসংখ্য বেতনভোগী বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের চাঁদা কালেক্টর রয়েছে।

এখন আমার প্রশ্ন হলো, শুধু বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ নয়, পাহাড়ে সমগ্র বাঙ্গালী সংগঠন কতজন উপজাতি হতে চাঁদা নিয়েছে? একটিও উপজাতি কি বলতে পারবে তার কলা, কচু, মুরগী বাজারে নিতে কিংবা চাষ করতে বাঙ্গালী সংগঠনকে এক টাকা চাঁদা দিয়েছে?

আমরা সবাই জানি এবং বুঝি, একটা সংগঠন পরিচালনা করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তবুও বাঙ্গালী সংগঠনগুলো পাহাড়ে কোন উপজাতির থেকে একটি টাকা চাঁদাবাজি করছে এমন নজির একটিও নেই। শুধু উপজাতি কেন? বাঙ্গালী সংগঠনগুলো দিন মজুর সাধারণ বাঙ্গালী থেকে একটি টাকা চাঁদা নিয়েছে এমন ঘটনাও নেই।

বাঙ্গালী সংগঠনগুলো যখন কর্মসূচি পালন করে তখন দেখেশুনে বাঙ্গালী সংগঠনমনা বিত্তবান ব্যক্তিগণ স্বইচ্ছায় অনুদান প্রদান করে থাকেন। এটাকে কখনো চাঁদাবাজি বলা যাবে না। কিন্তু প্রথম আলো পত্রিকা সম্পুর্ণভাবে পার্বত্য বাঙ্গালী সংগঠনের নীতি আদর্শ বিরোধী বক্তব্য প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছেন। অর্থাৎ এই প্রতিবেদকদ্বয় বাঙ্গালী সংগঠনের বিরুদ্ধে সম্পুর্ণ মিথ্যাচার করেছেন।

আবার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাগড়াছড়ি জেলায় সর্বোচ্চ চাঁদাবাজ সংগঠন হলো ইউপিডিএফ। এটা বাস্তব এবং সত্য। ইউপিডিএফ এক দিনে যতো টাকা চাঁদাবাজি করে বাঙ্গালী সংগঠন এক বছরে তার সমপরিমাণ অনুদান সংগ্রহ করতে পারেনা। উপজাতীয় সশস্ত্র সংগঠনের চাঁদাবাজিতে পাহাড়ে আপামর জনজীবন দুর্বিসহ।

একজন দিন মজুর যদি পেটের দায়ে উপজাতীয় অধ্যুসিত এলাকায় কাজ করতে যায় তবে তাকে তার দৈনিক বেতন ৩০০ টাকার একটি অংশ উপজাতীয় সসস্ত্র সন্ত্রাসীদের দিতে হয়। এই টাকা না দিলে পাহাড়ে কোন শ্রমিক কাজ করতে পারে না। এভাবে উপজাতীয় সশস্ত্র সংগঠনগুলো দিন মজুর থেকে শুরু করে চাকরিজীবি, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার প্রভৃতি পেশার লোকদের নিকট থেকে বিশাল অংকের চাঁদাবাজি করে। তাইতো উপজাতীয় সসস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ নেতাদের বাড়িতে ৮০ লক্ষ টাকা পাওয়া যায়।

প্রথম আলো পত্রিকার এই প্রতিবেদনটিতে উপজাতীয় সশস্ত্র সংগঠনের চাঁদাবাজিকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বৈধ হিসেবে প্রমাণ করতে যথেষ্ট যুক্তি তুলে ধরেছেন। যেমন, উপজাতীয় সসস্ত্র সংগঠন চাঁদা নেয় বিনিময়ে জনগনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। তাহলে প্রশ্ন হলো, উপজাতীয় সশস্ত্র সংগঠন যদি জন নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তবে পাহাড়ে প্রশাসন থেকে কাজটা কি?

এই যুক্তির অর্থ হলো পাহাড় হতে প্রশাসনের নিরাপত্তা ক্যাম্প উচ্ছেদ করা। কারন, উপজাতীয় সংগঠন প্রশাসনের কাজ করে যাচ্ছে।

প্রতিবেদনে ইউপিডিএফ নেতার বক্তব্যে বলা হয়েছে তারা চাঁদাবাজি করতে কখনো জোর জুলুম করেন না। তবে প্রশ্ন হলো, ইউপিডিএফ যদি জোর জুলুম না করেন তবে কেন তারা দিন মজুর, ঠিকাদারদের অপহরণ করেন? অস্ত্রের মহরা দিয়ে কেন ভয় দেখান? কেন অপহরণ করে মুক্তিপন না দিলে নিরীহ মানুষ হত্যা করছেন? জনগণের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব কি তাদের? কে তাদের এই দায়িত্ব দিয়েছে? কাদের কাছ থেকে নিরাপত্তা দেন তারা? কারা নিরাপত্তার হুমকি এই ন্যায্য প্রশ্নগুলো প্রতিবেদক সযত্নে এড়িয়ে গেছেন। এটাতো সর্প হয়ে দংশন করে ওঝা হয়ে ঝাড়ার মতো ব্যাপার।

বরং উপজাতিরা চাঁদা তুলে জনগণের নিরাপত্তা দেয় আর বাঙালীরা চাঁদা তুলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে এমন একটা রায় প্রতিবেদনে দিয়ে প্রথম আলো তাদের চিরাচরিত অন্ধ উপজাতি প্রীতি পুণনজির স্থাপন করেছে। তিনি প্রতিবেদনে আরও চাঁদাবাজির টাকা খরচে নেতা কর্মীদের ভাতা-সম্মানীসহ বিভিন্ন কেনাকাটার কথা উল্লেখ করেছেন। এখানে বিভিন্ন কেনাকাটা কি?

বিভিন্ন কেনাকাটা অর্থ হলো অবৈধ অস্ত্র কেনাকাটা। যার প্রমাণ সম্প্রতি ইউপিডিএফ নেতার বাড়ি তল্লাশী করে ৮০ লক্ষ টাকা এবং চাঁদাবাজির অর্থ ব্যয়ের হিসাবের তালিকা হতে পাওয়া যায় বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কোন নজীর, এমন ইতিহাস খুব কম আছে।

জনগন হতে অবৈধভাবে চাঁদাবাজি করে সেই অর্থ ব্যয়ে অবৈধ অস্ত্র আমদানিপূর্বক সেই অস্ত্র রাষ্ট্রের জনগন এবং রাষ্ট্রের অখন্ডতার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় সসস্ত্র সংগঠনগুলো নজীরবিহীন ন্যাক্কারজনক এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

উল্লিখিত আলোচনার শেষে এটাই বলা যায়, সারা দেশ যখন পাহাড়ে উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সকল অপকর্ম জেনে যাচ্ছে তখন প্রথম আলো পত্রিকা বাঙ্গালী সংগঠনের চাঁদাবাজিতে সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতে সুপরিকল্পিতভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ইউনিফর্ম পরা অস্ত্রসহ উপজাতি সন্ত্রাসী সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হলে এরা আদিবাসী লেখে। এটা উপজাতী সন্ত্রাসীদের লেজ কেটেছে বলে বাঙালীদের লেজ কেটে সমান্তরাল করার চেষ্টার নামান্তর।

– লেখক: অনলাইন এক্টিভিস্ট, রাঙামাটি থেকে।


♦ মুক্তমত কলামে প্রকাশিত লেখা লেখকের নিজস্ব মন্তব্য। এ বিভাগে প্রকাশিত লেখা পার্বত্যনিউজের সম্পাদকীয় নীতিমালার অন্তর্ভূক্ত নয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রিপোর্ট করে প্রথম আলো তার চিরাচরিত চরিত্র জানান দিলো আরো একবার”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন