আসামে মুসলিমদের ওপর হামলায় নিহত ৩২: প্রাণভয়ে ভিটা ছাড়ছে মুসলমানরা

140502171145_assam_kokrajhar_killings_512x288_ap

বোড়ো বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় নিহতদের মৃতদেহ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, পার্বত্যনিউজ:

উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্য আসামে মুসলমানদের ওপর বোড়ো জঙ্গীদের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩২। আজ শনিবার সারাদিনে নতুন করে কোনও হামলা না হলেও শুক্রবার রাতে বাকসা জেলার যে গ্রামে জঙ্গীরা আক্রমণ করেছিল, সেখান থেকে আটটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

বাকসা আর কোকড়াঝাড় জেলাদুটিতে জঙ্গী হামলায় জড়িত সন্দেহে বাইশজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। জারী করা হয়েছে সান্ধ্যকালীন নিষেধাজ্ঞা। আসামের পুলিশ মহানির্দেশক খগেন শর্মা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এটাই স্বস্তির যে আজ নতুন করে কোনও হামলা হয় নি।

“গতকাল থেকে আর কোনও নতুন হামলা হয় নি। নারায়ণগুড়ির গ্রামবাসীরা বলছেন প্রায় ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন – তবে আশা করা হচ্ছে, তারা কোথাও পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারেন। এখনই বলা যাবে না যে তাঁরা মারা গেছেন। আজ সকালেও যেমন ৫২জন ফিরে এসেছেন।” বলেন তিনি।

মি. শর্মা জানান, দুদিনের ঘটনায় ২২জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুটি জেলা থেকে। এরা হয় অগ্নিসংযোগ বা গুলি চালনা বা জঙ্গীদের সহায়তা করেছিলেন বলে সন্দেহ পুলিশের। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নারায়ণগুড়ির প্রায় ৩০০ মানুষ- যাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে জঙ্গীরা, তাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় একটি শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ওদিকে গত সন্ধ্যায় ভুটান সীমান্তবর্তী বাকসা জেলার নারায়ণগুড়ি গ্রামে যে হামলা চালিয়েছিলে সন্দেহভাজন বোড়ো জঙ্গীরা, সেখানে আজ সকাল থেকেই আরও মৃতদেহের সন্ধানে তল্লাশি শুরু হয়।

কোকড়াঝাড়ে হামলায় আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে

স্থানীয় মুসলিম নেতা ইব্রাহিম আলি বলেন, “কোনও দেহই এখনও দাফন করা হয় নি। যতক্ষণ মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এখানে না আসবেন, ততক্ষণ আমরা দাফন করব না। দেহগুলি পচে গলে গেলেও না।” গ্রামগুলির বাসিন্দারা আজ সকালে বন-অফিসের সামনে ধর্না দিতে গেলে বনরক্ষীরা শূন্যে গুলি চালান। মি. আলি বলেন, তাঁদের সন্দেহ ছিল যে ওই বন-কর্মীরা জঙ্গীদের সাহায্য করেছে, তাই বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন তাঁরা।

তবে বাকসা জেলায় অবস্থানরত পুলিশের অতিরিক্ত মহানির্দেশক আর এম সিং বলছেন ওখানকার মানুষ উত্তেজিত ছিলেন, তাই তাঁদের শান্ত করতে একজন কর্মকর্তাসহ ৫ জন বন-কর্মীকে তারা আটক করেছেন। তবে জঙ্গী হামলার সঙ্গে এই বনকর্মীদের সম্পর্ক নেই বলেই পুলিশের ধারণা।

এদিকে, পুলিশ গত দুদিনের ঘটনার পেছনে এন ডি এফ বির সঙবিজিৎ গোষ্ঠীর জঙ্গীদের হাত থাকার কথা বললেও ওই জঙ্গী গোষ্ঠী আজ তা অস্বীকার করেছে। উগ্রপন্থী কার্যকলাপ রোধকারী সংস্থা – এন আই এ-কে দিয়ে পুরো ঘটনার তদন্ত করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আসাম সরকার। কোকড়াঝাড় আর বাকসা জেলায় জঙ্গী হামলার বিরুদ্ধে আজ সারাদিনই আসামের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে।

                                                        কোকড়াঝাড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল

দাবী উঠেছে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের পদত্যাগের

তবে মি. গগৈ ওই ঘটনার জন্য তাঁর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ব্যর্থতা স্বীকার করলেও পদত্যাগের দাবী খারিজ করে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় বোড়োল্যান্ড এলাকার তিনটি গ্রামে হামলা চালায় সন্দেহভাজন বোড়ো জঙ্গীরা। প্রথম হামলা হয় বাকসা জেলার নরসিংগাঁওতে, যেখানে তিনজন মারা গিয়েছিলেন। পরবর্তী হামলা হয় কোকড়াঝাড় জেলার বালাপাড়ায়। প্রায় মাঝরাতে জঙ্গীরা গ্রামের তিন-চারটি বাড়িতে ঢুকে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। মহিলা আর শিশুসহ সাতজনের মৃত্যু হয় ঘুমন্ত অবস্থাতেই। শুক্রবার সন্ধ্যায় শেষবার জঙ্গীরা হানা দেয় বাকসা জেলায় – মানস অভয়ারণ্য সংলগ্ন নারায়ণগুড়ি গ্রামে।

প্রথমে আগুন লাগিয়ে ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। মানুষজন যখন প্রাণভয়ে বেরিয়ে আসেন, তখনই গুলিবর্ষণ শুরু করে জঙ্গীরা। বোড়োল্যান্ড এলাকার জেলাগুলিতে ২০১২ সাল থেকেই বোড়ো আর মুসলিমদের মধ্যে জাতি দাঙ্গা চলেছে – যাতে একশোরও বেশী মানুষ মারা গেছেন আর গৃহহীন হয়েছিলেন কয়েক লক্ষ মানুষ।- বিসিসি

 

এদিকে টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভি জানিয়েছে, উগ্রপন্থীদের হামলা থেকে নিজেদের প্রাণ রক্ষায় ভারতের আসাম রাজ্য ছাড়ছে বাংলাভাষী মুসলমান ও বোদো সম্প্রদায়। আরো সহিংসতা হতে পারে এমন আশঙ্কায় তারা আসাম ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে বলে জানা যায়। শুক্র ও শনিবারের হামলায় নারী ও শিশুসহ ৩২ জন নিহত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত হাজারো বাংলাভাষী মুসলমান আসাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

সহিংসতা প্রতিরোধে আক্রান্ত কোঁকরাঝাড়, বাকশা ও চিড়ং জেলায় কারফিউ জারি ও অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করা হলেও গ্রামবাসী ভয়ে দিন কাটাচ্ছে। তাদের আশঙ্কা, যেকোনো সময় আবারো হামলা করতে পারে উগ্রপন্থীরা। পুলিশ ইন্সপেক্টর জেনারেল এসএন সিং জানান, সহিংসতার ভয়ে এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার গ্রামবাসী পালিয়ে গেছে। তিনি আরো জানান, এখন পর্যন্ত ২০ সন্দেহভাজন হামলাকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

অন্যদিকে ওই অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সেনা টহল অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া মোতায়েন রয়েছে বিএসএফসহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় বাহিনী। খুব শিগগিরই দেশটির কেন্দ্রীয় বাহিনীর ১০টি কোম্পানি রাজ্যে এসে পৌঁছাবে বলে পুলিশ ইনসপেক্টর জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ভয়ে আসাম ত্যাগ রোধে সরকার যথাযথ প্রচেষ্টা চালালেও আবারো হামলায় ভয়ে ২৫ টি বোদো পরিবার কোঁকরাঝড় থেকে দুবরি জেলার মুসলিম অধ্যুষিত ফকিরাগ্রামে আশ্রয় নিয়েছে।বাঙালি মুসলিমদেরও মালপত্র নিয়ে ফকিরাগ্রামের দিকে ছুটতে দেখা যায়।

পুলিশ দাবি করেছে, নির্বাচনকে ঘিরে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফবি) এই হামলা চালিয়েছে।

 
Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “আসামে মুসলিমদের ওপর হামলায় নিহত ৩২: প্রাণভয়ে ভিটা ছাড়ছে মুসলমানরা”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন