Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

বান্দরবানে অস্ত্র সমর্পন করতে যাচ্ছে এমএনপি’র ৭০ সদস্য

শান্তিচুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রক্রিয়ায় আরো এক সাফল্য

অস্ত্র সমর্পন

আলীকদম প্রতিনিধি :
বান্দরবান পার্বত্য জেলার আলীকদম ও থানচি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি জনপদের মূর্তিমান আতংক  সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ম্রো ন্যাশনাল পার্টির (এমএনপি) শতাধিক সদস্য অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে বলে এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনী ও মুরুং নেতাদের প্রচেষ্টায় সন্ত্রাসী গ্রুপটি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাচ্ছে!

জানা গেছে, এমএনপি সদস্যরা আগামি  ২০ থেকে ২২ অক্টোবর যে কোন দিন আত্মসর্পণ করতে যাচ্ছে। তবে  আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল আমিন বলেন, এই বিষয়ে আর্মির পক্ষ থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে শুনেছি, তবে তারা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের জানায়নি।

অপরদিকে, বৈঠকের কথা স্বীকার করে আলীকদম জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মিজানুর রহমান বলেন, এই ব্যাপারে সমঝোতা  করা হচ্ছে।

জানা গেছে,  গত শুক্রবার এম.এন.পির আত্মসমর্পণ নিয়ে আলাপের জন্য আলী কদম জোন সদরে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আলীকদম জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মিজানুর রহমান, আলীকদম জোনের উপঅধিনায়ক, পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য অং প্রু ম্রো, মাং সাই প্রু, সুয়ালক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাংলাই ম্রো এবং এমএনপি’র প্রতিনিধি হিসেবে আলীকদমের স্থানীয় চারজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।  সূত্রটি আরও জানায়, আলীকদম জোনের কুরুকপাতা সেনা ক্যাম্পে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানটি হওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে।

সূত্রমতে, শুক্রবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে আত্মসমর্পণে ইচ্ছুক এমএনপি’র ৭০ সদস্যের একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ সব সদস্যের ৬০টি দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া ম্যাগজিন ও বিপুল-সংখ্যক গুলিও রয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরও ৩০ জনের তালিকা প্রস্তুত করে শতাধিক সদস্যের আত্মসমর্পণের  আয়োজন করা হবে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বান্দরবান জেলায় ২০১১ সালে ম্রো উপজাতি যুবকদের নিয়ে এমএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশীয় ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ২০১২ সালের দিকে আলীকদমের পোয়া মুহুরীতে ঘাঁটি গেড়ে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড শুরু করে সন্ত্রাসী গ্রুপটি। এরপর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সদস্য সংগ্রহ করে তাদের সশস্ত্র তৎপরতা সম্পর্কে জানান দেয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, এলাকাভিত্তিক সশস্ত্র তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন এমএনপির সদস্যরা। সশস্ত্র গ্রুপটিতে রয়েছেন, জেলার আলীকদমের কুরুক পাতার দুংখা এলাকার মাংপা ম্রো, প্রেন ওয়াই ম্রো, নিয়াদুই পাড়ার মেনরাও ম্রো, রেংসক পাড়ার রেংইন, সংএ পাড়ার পংঙি ম্রো, মারান পাড়ার ঙুই ক্রুম ম্রো, মাং অং ম্রো, কদনপাড়ার কদন ম্রো। থানছি উপজেলার চাকুপাড়ার মাং তং ম্রো, লাং পুং ম্রো, ওয়াকপাড়ার কৃতুই ম্রো, চাইয়াং পাড়ার বাশা ম্রো, অম্পুং পাড়ার হ্লা থোয়াই, অমই পাড়ার থংওয়াই ম্রো, বোডিংপাড়ার নংলাই ম্রো, রামুং ম্রো এবং লুহুপ ম্রো।

এছাড়া, লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের নিওয়াকপাড়ার থংয়া ম্রো, মংহ্লাপাড়ার মইশা ম্রো, কাইওয়াই ম্রো, লুলেং হেডম্যান পাড়ার আম শে প্রে ম্রো, সড়ই ইউনিয়নের তাংলাই ম্রো এবং জেলার রুমা উপজেলার ফতেসিংপাড়ার কাইওয়াই ম্রোসহ অনেকেই  সংগঠনটির শসস্ত্র কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাদের অধিকাংশ এবার আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, নিরাপত্তা বাহিনীর একের পর এক অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়ে এমএনপির কর্মকাণ্ড। তাই তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করলে নিরাপত্তা বাহিনী ও ম্রো উপজাতি জনপ্রতিনিধিরা এই উদ্দ্যোগ নেন। জেলার থানচি ও আলীকদম উপজেলার সদস্যরাই সবচেয়ে বেশি আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে।

আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অপেলা রাজু নাহা বলেন, জোন থেকে এই বিষয়ে কোন পত্র দেওয়া হয়নি, তবে আমিও শুনেছি এই ধরনের প্রক্রিয়া চলছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের এমএনপি প্রধান মেনচিং ম্রো গ্রেফতার হওয়ার পর পালে ম্রো এই বাহিনী পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। একই বছরের ৫ এপ্রিল প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয় এই গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মেনরুং ম্রো এবং ৭ জুন সংগঠনটির প্রধান পালে ম্রো আলীকদমের দুর্গম পোয়ামুহুরি এলাকার পাহাড় ভাঙা গ্রামে  প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হয়। পালে ম্রো আলীকদম সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ছিল।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশের লাগাতার অভিযানে এই বাহিনীর ৩৭ জনেরও বেশি সদস্য গ্রেফতার হয়, আত্মসমর্পণ করে ৪২ জন। আলীকদমের কুরুক পাতার দুংখা পাড়ার মেনসিং-এর ছেলে মেনরুম ম্রো এমএনপির সাংগঠনিক দায়িত্ব নিয়ে বর্তমানে নতুন করে সশস্ত্র সংগঠনটিকে চাঙ্গা করে।

রবিবার দুপুরে আলীকদম উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কাইনথপ ম্রো বলেন, এম.এন.পির আত্মসমর্পণ সংক্রান্ত বিষয়ে আমি শুনেছি।  তবে দিনক্ষণ সম্পর্কে নিশ্চিত নই।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ৭৩৯ জন ৪৬৫টি অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পন করে। পরবর্তীকালে ১৬ ফেব্রুয়ারী বাঘাইছড়ি হাই স্কুল মাঠে ৫৪৫জন অস্ত্র সমর্পন করে। ২২ ফেব্রুয়ারী দিঘীনালার বড়াদম দিঘীর নিকট ৪৪৩ জন ১০৯টি অস্ত্র সমর্পন করে। সব মিলে ৮৭২ টি অস্ত্র জমা দিয়ে ১৮২৭ জন  স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। তারপর এই এমএনপি সশস্ত্র সদস্যদের আত্মসমর্পন সম্ভব হলে তা বর্তমান সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য হিসাবে বিবেচিত হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন