গ্রামের মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করল ১০ কিলোমিটার রাস্তা

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি:

সরকারি বরাদ্দ নেই। ছিল না কারো বিশেষ আর্থিক সহযোগিতা। এর পরও একটি মহতী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছেন কতিপয় রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার ৩নং আইমাছড়া ইউনিয়নের দুর্গম প্রত্যন্ত অঞ্চলের  ১০ গ্রামের মানুষ।

‘দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’ প্রবাদ বাক্যটিতে উজ্জীবিত হয়ে নিজেরা চাঁদা তুলে ও স্বেচ্ছাশ্রমে পাহাড় কেটে ১০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন গ্রামবাসী। রাস্তাটি নির্মাণের ফলে গ্রামবাসী ও স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচলে যেমন সুবিধা হয়েছে, তেমনি গ্রামের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করা অনেক সহজ হয়েছে। যেন তারা ১০ গ্রামের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করেছে।

গ্রাম কার্বারী জীবন মোহন বলেন, গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে। আমাদের স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত রাস্তা দিয়ে হাল্কা ও মাঝারী যানবাহনও চলাচল করতে পারবে এবং ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুবিধা হবে।

মাটিকাটা কমিটির সভাপতি কালাচান চাকমা, সদস্য দবনা চাকমা ও সোনাধন চাকমার সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার ৩নং আইমাছড়া ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের মদন পাড়া, কৃষ্ণ পাড়া সাইচাল পাড়া, দোজরি পাড়া, ভধা পাড়া, দীঘলছড়ি পাড়া, করল্যাছড়ি পাড়া, নোয়া পাড়া, আইমাছড়া মুখপাড়া ও জগন্নাথছড়া সহ ১০ গ্রামের মানুষদের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ছিল তাদের একটি ভালো রাস্তা হবে। সেই রাস্তা দিয়ে গ্রামের মানুষের চলাচল ও তাদের উৎপাদিত কাঁচা মালামাল সহজে বাজারজাত করতে পারবে। তার জন্য ঐসব এলাকার মানুষ রাস্তা, ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মাণের জন্য সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ধর্না দিয়েছেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

তাই সরকারি সাহায্যের আশায় না থেকেই ১০ গ্রামের মানুষদের নিয়ে একটি কমিটি করে প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন প্রতি পরিবার থেকে একজন করে এসে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে মাটি কাঁটা শুরু করে। গত দু মাসের মধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে সক্ষম হয়েছে গ্রামবাসী। আর বাকী রাস্তাও পর্যায়ক্রমে সমাপ্ত করবে বলে দাবি করছেন গ্রামের মানুষ। রাস্তা নির্মাণ করা হলেও কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় ব্রীজ ও কালভার্ট না থাকায় চলাচলে ও মালামাল বহনে সমস্যা হবে  বলে জানান।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত দু মাসের আগে ও দুর্গম প্রত্যন্ত গ্রামের রাস্তাগুলো ছিল সরু। উঁচু নিচু আঁকা বাঁকা খানা খন্দে আর ঝোঁপ জঙ্গলে ভরা। একা চলাচল করতে গ্রামের মানুষ ভয় পেত। মানুষের চলাচলে ও উৎপাদিত মালামাল বহন করা খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। গ্রামের মানুষ উঁচু নিচু আঁকা বাঁকা পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে পায়ে হেটে উপজেলা সদরে  আসা যাওয়া করতো। আজ দশ গ্রামের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে প্রায় দৈর্ঘ্য দশ কিলোমিটার আর প্রস্থ ২০ থেকে ৩০ ফুট কাঁচারাস্তা নির্মাণ করে দুর্গম প্রত্যন্ত বরকল উপজেলায় উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। এ রাস্তার কারণে বদলে যাবে দশ গ্রামের মানুষের জীবনধারা। তবে রাস্তাটি হলেও কিছু কিছু জায়গায় সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মানের দাবি জানিয়েছেন আইমাছড়া ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার শুভমালা চাকমা ও ওয়ার্ড মেম্বার মঙ্গলেশ্বর চাকমা।

৩নং আইমাছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অমর কুমার চাকমা জানান, এ যাবতকাল ইউনিয়ন পরিষদ যে কাজ করতে পারেনি তা এলাকার মানুষ তাদের আর্থ- সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করে দৃষ্টান্ত উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। এলাকাবাসীর এ মহৎ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তবে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আগামীতে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।

অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান জানান, এলাকার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে যে রাস্তাটি করেছে তা প্রশংসার যোগ্য। এলাকাবাসীদের এ মহৎ উদ্যোগ অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে। তবে ব্রীজ কালভার্টসহ অন্যান্য সহযোগিতা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর অবশ্যই করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া পারভীন জানান, গ্রামের মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মাণ করার বিষয়টি তাকে কেউ জানায়নি। তবে এ ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন